• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অবৈধ ভাটার পেটে ফসলি জমি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২১  

সরকারি খাল ও খাসজমি দখল করে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর মৌজায় মেসার্স মাহিন ব্রিকস কোং নামে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। সাভার ভূমি অফিসের পাশেই বিশাল এ ভাটায় ইট তৈরির মাটি নেওয়া হচ্ছে আশপাশের ফসলি জমি থেকে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ভাটার মালিক উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মাটি কেনার জন্য তাদের কাছে প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় এখন লোকজন দিয়ে জোর করে মাটি কেটে নিচ্ছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ভাটার মালিক সাইফুল বলেন, ‘ইটভাটার বৈধতার সব ধরনের কাগজপত্র রয়েছে। সরাসরি এলে দেখানো যাবে। কৃষকরা মাটি বিক্রি করেছেন। জোর করে কেটে নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

সরেজমিন বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর গিয়ে দেখা যায়, খননযন্ত্র দিয়ে ১০-১৫ ফুট গভীর করে ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রাকে করে ভাটায় নিচ্ছেন মাহিন ব্রিকস কর্র্তৃপক্ষ। ভাটায় সহজ যাতায়াতের জন্য খালে বাঁধ দিয়ে লোহার সেতু করা হয়েছে। সেখান দিয়ে মাটিভর্তি ট্রাক ও ভেকু চলাচল করছে। সম্প্রতি মাটি ফেলে খাল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানালে কিছু অংশের মাটি অপসারণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে সাইফুল ইসলাম ভাটার মাটি নিচ্ছেন। এজন্য অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ভেকুচালক সুরুজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে জমির মালিক থেকে মাটি কেনা হয়েছে। যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই মাটি কাটা হচ্ছে। ১০-১৫ ফিট গভীর করে মাটি কাটলে পার্শ্ববর্তী জমির ক্ষতি হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি?’ ইটভাটার ট্রাকচালক জালাল মিয়ার কাছে মাটি কাটার তথ্য জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মেসার্স মাহিন ব্রিকসের ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন ইটভাটায় যাতায়াতের জন্য খালের ওপর সেতু করা হয়েছে। জমির মালিক নিজেরাই মাটি বিক্রি করেছেন। আমরা তা কেটে ভাটাতে নিয়ে যাচ্ছি।’

তবে আবদুর রহিম নামে এক জমি মালিকের অভিযোগ, ‘ভাটার মালিক জমি কিনতে লোভনীয় প্রস্তাব দেন। আমরা রাজি হইনি। এখন বেশিরভাগ রাতে, কখনো দিনে-দুপুরে জোর করে মাটি কেটে নিচ্ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সুজনের কাছে প্রতিকার চেয়েছি। কিন্তু তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।’ আরেক কৃষক মহিদুল মোল্লা বলেন, ‘ইটভাটা কৃষি আবাদের জন্য ক্ষতিকারক। কিন্তু অনেক জমির মালিক লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করেছেন। এ সুযোগে ভাটামালিকরা খাসজমি ও খাল দখল করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কারণে আমাদের জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলে আরও বিপদ বাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে বলে কোনো লাভ নেই। তারাই তো ভাটামালিকদের সুযোগ করে দিয়েছে। তা না হলে ভূমি অফিসের পাশেই এমন ঘটনা কীভাবে ঘটছে?’ 

এ বিষয়ে আমিনবাজার ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজগর আলী বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে মেসার্স মাহিন ব্রিকস কোং নামে ভাটার খবর জানলাম। ফসলি জমির মাটি কাটলে আমাদের কী করার? তারপরও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাব।’

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আরা নিপা বলেন, ‘ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজীব বলেন, ‘মাহিন ব্রিকস আমাদের থেকে কোনো অনুমোদন নিইনি। ইতিমধ্যে আমরা সাভার-আশুলিয়ায় অভিযান চালিয়ে অর্ধশত অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দিয়েছি। বাকিগুলোও শিগগিরই গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।’