• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ঈদ করতে নাড়ির টানে গাজীপুর ছাড়ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৪ জুন ২০১৯  

ঈদ করতে নাড়ির টানে গাজীপুর ছাড়ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ। গতকাল সোমবার ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে মূলত পোশাক শ্রমিকেরাই ছুটছেন বাড়ির উদ্দেশে। গাজীপুরে দেশের প্রায় সব জেলার লোকেরই বসবাস। ঈদ উদযাপন করতে এসব মানুষ ছুটছেন যার যার বাড়ির উদ্দেশে।

গতকাল দুপুরের মধ্যে জেলার সব পোশাক কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও ছুটি শুরু হয়েছে। গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ করতে এখন বাড়ি ফেরার পালা। ঈদের নতুন জামা-কাপড়, ঈদসামগ্রী আগেই কেনা হয়ে গেছে তাদের। তাই গতকাল দুপুরের পর থেকে রেলওয়ে স্টেশন ও বাস স্টেশনে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। বেলা ৩টায় জয়দেবপুর রেল জংশন স্টেশনে ট্রেনের জন্য ঘরমুখো যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এ দিকে গাজীপুরে যাত্রীর তুলনায় পরিবহন কম থাকায় যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন পরিবহন মালিকেরা। তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের নাওজোর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম।

এ ছাড়াও গাজীপুরে শ্রমিকদের বহনে ঘোষিত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোথাও দেখা যায়নি। গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার স্টেশন বা নির্ধারিত শিডিউলের বিষয়েও বিআরটিসি কিছু জানাতে পারেনি।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় দেখা গেছে, মানুষ যেভাবে পারছেন বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন; কেউ বাসে, কেউ পিকআপ-লেগুনা ভাড়া করে, কেউ বাসের ছাদে চড়ে। কারো কোনো ক্লান্তি নেই। কখন বাড়ি পৌঁছবে স্বজনদের কাছে, সবার মনে সেই চিন্তা। ঈদ আনন্দ স্বজনদের সাথে ভাগাভাগি করতে তারা ছুটছেন বাড়ির উদ্দেশে।

সরেজমিন জয়দেবপুর জংশন, গাজীপুর মহানগরীর শিল্পনগর কোনাবাড়ি, টঙ্গী, ভোগড়া, জিরানী, কাশিমপুর, চক্রবর্তী, চান্দনা চৌরাস্তা, বোর্ড বাজার, রাজেন্দ্রপুর, মাওনা, কালিয়াকৈর, মৌচাকসহ শিল্পাঞ্চলগুলো ক্রমেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাস সড়ক ও এর আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব জায়গায় বহু মানুষ যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে দলে দলে লোকজন ছুটে যাচ্ছেন বাস ও রেল স্টেশনের দিকে। জয়দেবপুর জংশনে ঢাকা থেকে আসা ট্রেন থামলে শুরু হয় তাতে উঠার প্রতিযোগিতা। কেউ ট্রেনের জানালা বেয়ে ছাদে ওঠেন। আবার কেউ দরজায় ঝুলে থাকেন।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মমতাজ বেগম গাজীপুর তিন সড়ক এলাকার ইভা সোয়েটার কারখানায় চাকরি করেন। থাকেন কারখানা সংলগ্ন লক্ষ্মীপুরা এলাকায়। বাড়ি যাওয়ার জন্য জয়দেবপুর জংশনে অপেক্ষায় করছিলেন। তিনি জানান, বেতন-ভাতা পরিশোধ করে বেলা ১১টার দিকে কারখানা ঈদের জন্য আট দিনের ছুটি দিয়েছে। বাড়িতে বাবা-মা, দাদা-দাদী, ভাইবোন রয়েছে। ছুটির পরপরই জয়দেবপুর জংশনে এসেছেন। অপেক্ষা করছেন ট্রেনের জন্য।

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার তোফাজ্জল হোসেন দিনমজুরের কাজ করেন গাজীপুরে। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকেন গাজীপুর শহরে। তিনি জানান, গ্রামের বাড়িতে তার বাবা-মা রয়েছেন। প্রায় ছয় মাস পর পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ করার জন্য বাড়িতে যাচ্ছেন। সড়কে যানজট থাকতে পারে এমন শঙ্কায় তিনি প্রতিবারই ঈদে ট্রেনে বাড়িতে যান।

বাস কিংবা ট্রেনের টিকিট যারা আগে থেকেই কেটে রেখেছেন তারা একটু স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছেন। আবার যারা আগে থেকে টিকিট কেটে রাখেননি তাদের বাড়ি ফেরা অতি কষ্টদায়ক হচ্ছে।

এ দিকে বাস, ট্রাক, লেগুনায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন গ্রামের মানুষ। অনেকে অঞ্চলভিত্তিক থাকায় ১০-১২ জন ও ২০-২৫ জন একসাথে হয়ে মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভাড়া করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। দুপুর পর্যন্ত গাজীপুরের সড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেলেও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। চান্দনা চৌরাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বেখৈরহাটি গ্রামের রফিকুল ইসলাম। তিনি গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ভাড়া থেকে লিজ ফ্যাশন নামে একটি পোশাক করাখানায় চাকরি করেন।

তিনি চার মাস পর বাবা-মায়ের সাথে একত্রে ঈদ করতে বাড়িতে যাচ্ছেন।

নাওজোর হাইওয়ে ফাঁড়ির ইচার্জ তরিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কোনো স্থানে সমস্যা নেই। অতিরিক্ত ও থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কে যানবাহন ধীরগতিতে চললেও ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা আনন্দে বাড়ি ফিরছেন। মহাসড়কে যানজট একেবারেই নেই। দ্রুত সময়ে গাড়ি যাতে গন্তব্য পৌঁছতে পারে সে লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

গাজীপুরে যাত্রীর তুলনায় পরিবহন কম

গাজীপুরে যাত্রীর তুলনায় পরিবহন কম থাকায় যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের নাওজোর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম।

দিনে মাঝে মাঝে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিতে ভিজে বাসের ছাদে গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে যাত্রীদের। অনেক নারীদেরও বাসের ছাদে, ট্রাকে, পিকআপ ভ্যানে যেতে দেখা গেছে। ভোর থেকে যানবাহনগুলো স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে বিকেলের দিকে থেমে থেমে চলতে দেখা গেছে যানবাহনগুলো।

অনেক পোশাক কারখানার একই এলাকার শ্রমিকেরা মিলে বাস রিজার্ভ করে বাড়ি ফিরছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার সড়ক, মহাসড়কে যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। ভোগড়া বাইপাস এলাকার স্কয়ার ফ্যাশনে চাকরি করেন নেত্রকোনার মদন উপজেলার খিত্তিপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম এবং পূর্বধলা উপজেলর আব্দুল মতিন। বেলা ১টার দিকে তারা আসেন জয়দেবপুর রেল জংশনে। দুপুর ১২টার দিকে তাদের কারখানায় ঈদের ছুটি দিয়েছে। রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবারই তিনি গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করেন। বাড়িতে তার মা-বাবা ও বোন থাকেন। যানজটের আশঙ্কায় এক সপ্তাহ আগে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার জয়দেবপুর জংশনে যাত্রীর চাপ কম দেখছেন। পোশাক শ্রমিকেরা কর্মস্থলে ছুটির পর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাস ও রেল স্টেশনের দিকে ছুটে চলেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর শিল্পনগর কোনাবাড়ি, টঙ্গী, ভোগড়া, জিরানী, কাশিমপুর, চক্রবর্তী, চান্দনা চৌরাস্তা, বোর্ড বাজার, রাজেন্দ্রপুর, মাওনা, কালিয়াকৈর, মৌচাকসহ শিল্পাঞ্চলগুলো ক্রমেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে দলে দলে লোকজন ছুটে যাচ্ছেন বাস ও রেল স্টেশনের দিকে।