• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

লকডাউনেও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৬ জুলাই ২০২১  

রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট হলো গাবতলী। চলমান কঠোর লকডাউনে সদা ব্যস্ত এই এলাকা অনেকটাই ফাঁকা। নগরমুখী ও বহির্মুখী যানবাহন চলাচল একেবারেই সীমিত। তবে গাবতলী পার হয়ে আমিনবাজারের দিকে এগোলেই চিত্র কিছুটা ভিন্ন। বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষ শত কষ্ট স্বীকার করেই এই পথ দিয়ে নানা উপায়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে।

গতকাল সোমবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিট। আমিনবাজার ব্রিজের আগেই রাস্তার পাশে বেশ বড়সড় একটি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আব্দুল খালেক। যশোর যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কোনো একটি বাহন খুঁজছেন। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় রঙের কাজ করি। সরকার কঠোর লকডাউন দেওয়ার পর থেকে কাজ বন্ধ। ঢাকায় বসে থেকে খাব কী?

তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। একেবারে ঈদের পর ঢাকায় আসব।’ 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশাকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছে বাড়িমুখো মানুষজন, তবে ভাড়া অনেক বেশি। এ জন্য অনেকেই দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় অপেক্ষা করছে। কেউ বা হেঁটেই কিছুদূর এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে বের হওয়া খালি পিকআপেও মাঝেমধ্যে উঠতে পারছে কেউ কেউ।

দেখা গেল, আমিনবাজার ব্রিজের আগে ৩০ থেকে ৪০ জন মানুষের জটলা। বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য তারা অপেক্ষা করছে। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক মোটরসাইকেলের চালকের সঙ্গে দরদামে ব্যস্ত কেউ কেউ।

মানিক মিয়া নামের একজন জানালেন, তিনি রাজবাড়ী যাবেন। মোটরসাইকেলে পাটুরিয়া পর্যন্ত একা যেতে চালক ৮০০ টাকা চাইছেন। আর দুজন গেলে কিছুটা কম নেবেন। কিন্তু এত টাকা দিয়ে তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার বিকল্প কিভাবে যাওয়া যায়, তা-ও ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।

আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়ে ৩০ থেকে ৪০ জনের আরেকটি জটলা চোখে পড়ে। এখানে যাত্রী টানা মোটরসাইকেল তুলনামূলক কম, ব্যাটারিচালিত রিকশার আধিক্য। এক রিকশায় দুজন যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। সাভার পর্যন্ত যেতে ভাড়া নিচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। রিকশাচালকরাই যাত্রীদের পথ বাতলে দিচ্ছেন—সাভার থেকে নবীনগর পর্যন্ত রিকশায় যাবেন। এরপর কোনো না কোনো কিছুতে পাটুরিয়া-আরিচা পর্যন্ত যেতে পারবেন।

এখানে কথা হয় তাহের নামের এক শ্রমজীবীর সঙ্গে। তিনি পুরান ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করেন। তাহের বলেন, ‘সরকার লকডাউন দিছে। আমাগো কাম বন্ধ। কয় দিন ঢাকায় বইসা থাকা যায়। খামু কী? আমাগো মতো শ্রমিকের কথা সরকার মনে করে না। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। ঈদের আগে আর আসমু না।’

আরো কিছুদূর এগোতেই আমিনবাজার পুলিশ চেকপোস্ট। সেটা পার হতেই আরো কিছু লোকজন দেখা গেল। ঢাকা থেকে ফিরে যাওয়া খালি পিকআপ তাদের টার্গেট। এই প্রতিবেদক বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখলেন, আট-দশটি পিকআপ তারা দাঁড় করানোর চেষ্টা করল। এর মধ্যে দুটি পিকআপ দাঁড়াল। একটিতে তিনজন এবং অন্যটিতে দুজন যাত্রী ওঠার সুযোগ পেল। তবে এসব পিকআপ চলতি অবস্থায় থাকায় তারা কোন পর্যন্ত যাবে বা ভাড়া কত, তা জানা গেল না।

তবে ওই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা সেলিম মোল্লা নামের এক যাত্রী বললেন, ‘আমি ফরিদপুরের কামারখালী যাব। মোটরসাইকেলে যে ভাড়া চায় তাতে যাওয়া সম্ভব না। তাই পিকআপ খুঁজছি। যত দূর যাওয়া যায় ততই ভালো। কিছুটা পথ তো এগোল।’

এখান থেকে হেমায়েতপুর পর্যন্ত যাওয়ার পথে ঘরমুখো মানুষের আর কোনো জটলা দেখা যায়নি। তবে হেমায়েতপুর বাজারে ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশার আধিক্য। কিছু মোটরসাইকেলও আছে। তবে সেখানে দূরের যাত্রী খুব একটা দেখা যায়নি।

হেমায়েতপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে আমিনবাজার ব্রিজের আগে আবার রিকশার জটলা দেখা গেল। তবে ঢাকামুখী এসব রিকশার যাত্রীর বেশির ভাগই দূরের নয়। মূলত মানিকগঞ্জ, সাভার ও আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকায় নানা কাজে আসছে। তারা আমিনবাজার ব্রিজের আগে রিকশা থেকে নেমে যাচ্ছে। এরপর হেঁটে ব্রিজ ও পুলিশ চেকপোস্ট পার হয়ে আবার রিকশা বা মোটরসাইকেলে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে।