• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সাভারে মাদক আসে সাপের ঝুড়ি ও এ্যাম্বুলেন্সে করে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১  

সাভারের বেদে পাড়া থেকে কোন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরে আনা খুবই কষ্টকর। অনেক সময় পুলিশ বা র‌্যাবের ওপর চড়াও হয় বেদে জনগোষ্ঠীর লোকজন। আসামী ছিনিয়ে রাখে তারা।
শত বাধা পেরিয়ে আসামী ধরলেও তারপর পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে দেয়া হয় নানা অভিযোগ। যে কারণে বেদে পাড়ার মাদক ব্যবসা বন্ধে পুলিশ তৎপর হলেও পা বাড়াতে হয় খুব সাবধানে।

কথাগুলো বলেছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাভার মডেল থানার একজন ভুক্তভোগী পুলিশ কর্মকর্তা। জানাগেছে, এর আগে র‌্যাব সাভার বেদে পাড়ায় মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে অভিযান চালালে তখন র‌্যাবের সাথে সংঘর্ষ হয় বেদেদের। এ সময় একজন র‌্যাব সদস্য আহত হয়।

সাভার মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদকসহ ধরা হয় বেদে পাড়ার ফইজুদ্দিনের মেয়ে ফরিদা ও তার স্বামী শাহ আলমকে। এ সময় বেদে পাড়ার শতশত লোক চড়াও হয় পুলিশের উপর। পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয় ফরিদাকে। কিন্তু পুলিশ শাহআলমকে মাদকসহ ধরতে সক্ষম হয়।

জানাগেছে, সাভারে চিহিৃতমাদকের স্পটে প্রকাশ্যে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরোইনসহ নানা প্রকার মাদকদ্রব্য বিক্রি হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় রাঘব বোয়ালরা। বিভিন্ন সময় পুলিশের অভিযানে কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও ছাড়া পেয়ে আবার শুরু করে মাদক ব্যবসা।

সাভার পৌরসভার পোড়াবাড়ি, কাঞ্চনপুর, ছায়াবীথি, গেন্ডা, মজিদপুর, ইমান্দিপুর, শাহীবাগ, রাজাশনসহ বিভিন্ন এলাকা এবং পৌরসভার বাইরে আউকপাড়া, কাঠগড়া, বিরুলিয়া, খেজুরবাগসহ অনেক এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পন্থায় মাদক পাচার করে থাকে। যার ফলে প্রায় ক্ষেত্রে পুলিশ এদের প্রমাণসহ ধরতে পারে না।

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, সাভার পৌরসভার পোড়াবাড়িতে প্রকাশ্যে চলে মাদকের রমরমা ব্যবসা। ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেপথ্যে কাজ করে বেদে জনগোষ্ঠীর সর্দারদের অনেকে। এখানে রয়েছে মাদকের প্রায় ১০টি হটস্পট।

বেদেনীদের সাপের ঝুঁড়িতে করে মাদক পাচার হয়ে আসে পোড়াবাড়ি বেদে পাড়ার এসব স্পটে। প্রথমে ইয়াবা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাঁজাসহ নানা প্রকার মাদকদ্রব্য আসে পাইকারদের কাছে। এরপর তা খুচরা বিক্রেতাদের হাতে চলে যায়।

নদী পথেও মাদক আসে বেদে পাড়ায়। পণ্যবাহী নৌকা ও বেদে বহরের নৌকাতে করে অনেকেই পাচার করে নিয়ে আসে ইয়াবা ও হেরোইনের বড় চালান। আবার এসব স্পট থেকে ডিলারদের মাধ্যমে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে সাপের ঝুঁড়ি ও নৌপথে পাচার হয়ে যায় ছোট চালান।

অনেক সময় রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্সে করে মাদক পাচার হয়ে আসছে সাভারের বিভিন্ন স্পটে।

তথ্যমতে, সাভার বেদে পাড়াকে কেন্দ্র করে আশে-পাশে গড়ে উঠেছে মাদকের প্রায় ৫০টি স্পট। বেদেপাড়া সংলগ্ন এলাকাগুলো এখন মাদকের হটস্পট হিসেবে গড়ে উঠেছে।

এরমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটি, বালুর মাঠ, রংধনু হাউজিং, পোড়াবাড়ি, অমরপুর, আড়াপাড়া, রশিদ মেম্বারের মোড়সহ বেশকিছু স্পট রয়েছে। যেখানে সারাদিন রাত প্রকাশ্যে চলে মাদক ব্যবসা। সন্ধ্যার পরে এসব এলাকায় দূর-দূরান্ত থেকে মোটর সাইকেলে করে ভিড় জমায় মাদক সেবীরা।

পৌরসভার বাইরে দর্শনীয় স্থান ও বিভিন্ন এলাকায় মাদকের আখড়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় রোগীর সাথে এ্যাম্বুলেন্সে করে মাদক পাচার হয়ে আসছে।

এছাড়াও মোটর সাইকেল ও বাই সাইকেলে করে নির্জন শাখা রাস্তাগুলো ব্যবহার করে মাদক পাচার হয়ে আসে। এভাবে নৌ ও স্থল পথে কৌশলে মাদক রাজধানীতে পাচার হয় এবং চালান চলে আসে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী জানান, ডিলাররা নিজেদের ঘরে কখনও মাদকদ্রব্য রাখেন না। গরীব বেদে ও বেদেনীদের কিছু টাকা দিয়ে তাদের ডেড়া বা সাপের ঝুঁড়িতে ইয়াবার চালান রাখা হয়।

বেদেপল্লীর সর্দারদের ব্যবসা চালানোর জন্য মোটা অংকের মাসোহারা দিতে হয়। আউকপাড়াতেও খালেক মেম্বারসহ কয়েকজন রয়েছেন মাদক ব্যবসার নেপথ্যে।

জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটির সচেতন মহল বলেন, সন্ধ্যার পরে মানিকের চায়ের দোকান ও বালুর মাঠে মোটর সাইকেলের ভিড় লেগে থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে কিশোর ও যুবকরা এসে প্রকাশ্যে মিলিত হয় মাদকের আড্ডায়।

পোড়াবাড়ি ও অমরপুরের বেদে সম্প্রদায়ের অনেকেই জানান, বেদে সর্দারদের কারণেই পাড়ায় বড় বড় ডিলারের জন্ম হয়েছে। এরা মদদ না দিলে কারো সাধ্য নেই পাড়ায় মাদক ব্যবসা করে।

আউকপাড়ার বাসিন্দা ক্যাপ্টেন (অব:) মান্নান জানান, এ পাড়ায় মাদক ব্যবসা অনেক পুরোনো। এর সাথে জড়িত রয়েছে এলাকার প্রভাবশালী লোকজন। রয়েছে তাদের নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী ও আগ্নেয়াস্ত্র।

সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক জানান, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে মাদকের অবস্থা ভয়াবহ। এই এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি।

সাভার মডেল থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমানে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। বিগত দিনে এভাবে অভিযান পরিচালিত হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করছে।