• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাবি ছাত্রকে মারধর, অভিযুক্ত চার আনসার সদস্য বহিষ্কার

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১  

সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঘুরতে গিয়ে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের মারধরের শিকার হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নুর হোসাইন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করা, দোষীদের স্থায়ী বহিষ্কার এবং গ্রেফতার করা, স্মৃতিসৌধে চলমান অনৈতিক কাজ বন্ধ করা।

জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে আসা দুজন ভাগ্নেকে নিয়ে বিকেলের দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঘুরতে যান নুর হোসাইন। সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ বলে তাদেরকে ঢুকতে না দিলেও ভিতরে অনেককে প্রবেশ করতে দেখেন তারা। এসময় সে দেখতে পান টাকা দিলে ভিতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এর প্রতিবাদ ও ভিতরে থাকা দর্শনার্থীদের ভিডিও করতে গেলে আনসার সদস্যরা তাকে স্মৃতিসৌধের ভিতরে একটি কক্ষে আবদ্ধ রেখে অত্যন্ত নারকীয় কায়দায় শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। পরে নুর হোসাইনের বড় ভাগ্নে ৯৯৯ এ ফোন করলে নিকটস্থ থানা থেকে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছে।

নুর হোসাইন বলেন, আমি বিকেলে স্মৃতিসৌধে ঘুরতে যাই। সেখানে অর্থের বিনিময়ে ডিউটিরত আনসার সদস্যরা কাউকে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছিল। আমি এর প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে একটা রুমে নিয়ে আবদ্ধ করে। পরে সাত-আট জন আনসার সদস্য ঠোঁট, গলা, তলপেটে আঘাত করে। এমনকি মাথাতেও আঘাত করে।

মানববন্ধনে মার্কেটিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার বলেন, সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হেনস্তা ও মারধরের শিকার হতে হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আনসার সদস্যরা একজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে গুরুতর আহত করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাসায় বসে তামাশা দেখেছে। তারা একবারের জন্যও আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে যায়নি। তাদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিরুদ্ধে না গিয়ে ছাত্রবান্ধব হওয়া।

এদিকে মহসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান, আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান। পরে তারা শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে অবরোধ তুলে দেন।

ওসি এস এম কামরুজ্জামান  বলেন, অবরোধের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি শুনেছি। দোষী আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জেনেছি। আহত শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এদিকে দোষী আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে  নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা আনসার কমান্ডার আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, মোহর আলী, ওমর ফারুক, রমজান আলী ও যুগল সরকারের ‍বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় তাদের আনসার থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সকল খরচের দায়িত্ব নেবে আনসার। আমরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমরা আহত শিক্ষার্থীর সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছি। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূর্ণ আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।