• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সিংগাইরে গ্রাহকের ১০ কোটি টাকা নিয়ে এনজিও উধাও

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২১  

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর বাজারে বেস্টওয়ে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি (বিএমসিএস) নামের একটি এনজিওর মালিক উধাও হয়েছেন। প্রায় দু’হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহের নামে আত্মসাত করে পালিয়ে গেছেন তিনি।


প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাওলানা মো: আফজাল হোসেন (৪১) ওই এলাকার মাধবপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ইয়াকুব মেম্বারের পুত্র। 

গ্রাহকদের আমানতের সংগ্রহকৃত টাকা দিয়ে তিনি বিভিন্ন স্থানে নিজ নামে গড়ে তুলেছেন ১০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।


 
জানা গেছে, গ্রাহকেরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত চাইলে দেই-দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকেন। এক পর্যায়ে গ্রাহকদের চাপের মুখে অবস্থা বেগতিক দেখে ৯ অক্টোবর আফজাল হোসেন এলাকা থেকে উধাও হন। এরপর থেকে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চান্দহর বাজারে মজিবর রহমানের বিল্ডিং ভাড়া করে মাইক্রো ক্রেডিট অথরিটির নিবন্ধন ছাড়াই কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আফজাল হোসেন ২০১২ সাল থেকে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন।

এরপর এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে লাখে প্রতিমাসে এক থেকে দেড় হাজার টাকা মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। আর গ্রাহকদের এ টাকা দিয়েই তিনি নিজের মালিকানায় গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ঢাকাতে বালাদ মেটাল, সাভারে শেফা হোমিও হল, বালাদ বেকারি, মানিকনগরে বালাদ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসা, মাধবপুরে ইকরা আধুনিক উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দহরে শেফা ফার্মেসী, বালাদ মুদি স্টোর ও গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান।

বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন চান্দহর বাজারে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। 

ওই এলাকার গ্রাহক মো: নজরুল ইসলাম জানান, তিনি দেড় বছর আগে লাখপ্রতি মাসিক ১ হাজার টাকা লাভে বিএমসিতে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলেন। দু’-তিন কিস্তিতে লাভের টাকা পেয়েছেন। কিন্তু ছয় মাস যাবত তিনি লাভ তো দূরের কথা মূল টাকাও পাচ্ছেন না।


 
তিনি বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবেও কয়েকজন মিলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে রেখেছিলাম। ওই টাকাও নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের মতো অনেকেই লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত জমা দিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অপর গ্রাহক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারের কষ্টার্জিত প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ওই প্রতিষ্ঠানে জমা রেখেছি। মালিকের গা-ঢাকা দেয়ার খবর শুনে আমাদের হতাশায় দিন কাটছে। বর্তমানে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে এলাকায় ফিরে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এলাকায় ফিরছেন না তিনি।

অফিস সংলগ্ন বাড়ির হবি মিয়ার কন্যাও ওই প্রতিষ্ঠানে তাদের টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করেন। গ্রাহকেরা তাদের কষ্টার্জিত আমানতের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অভিযুক্ত বিএমসিএস-এর মালিক মাওলানা মো: আফজাল হোসেন গ্রাহকদের আমানতের ৭ কোটি টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘করোনাকালীন ব্যবসায়িক ধসের কারণে এ রকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায় বিনিয়োগসহ সবমিলিয়ে এখনো ৪ কোটি টাকার উপরে সম্পদ আছে। আমি আস্তে আস্তে গ্রাহকদের আমানতের পুরো টাকা পরিশোধ করে দেব।’

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আখিনুর ইয়াসমিন বলেন, আমার জানা মতে ‘বিএমসিএস’ নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই ও আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতিও নেয়নি এ প্রতিষ্ঠানটি।