• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রস্তাব অনুমোদন পাচ্ছে আজ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২১  

চলতি বছরে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার মেঘনাঘাট, জামালদিতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গ্যাস অথবা আরএলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে।
২২ বছর মেয়াদে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে উদ্যোক্তা সংস্থাকে গ্যাসভিত্তিক হলে মোট ৩৭ হাজার ৪৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকা প্রদান করতে হবে। আর যদি আরএলএনজি-ভিত্তিক হয় তবে সে ক্ষেত্রে এই মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় করতে হবে ৬৯ হাজার ১৬৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
জানা গেছে কনসোর্টিয়াম ‘এডরা পাওয়ার হোল্ডিং এসডিএন বিএইচডি, মালয়েশিয়া এবং উইনিএভিশন পাওয়ার লিমিটেড, বাংলাদেশ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আজ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০-১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এই চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমান ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
অন্য দিকে বিউবোর রিটায়ারমেন্ট শিডিউল অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৬৪২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার আওতায় নির্ধারিত বিদ্যুৎ চাহিদা রিটায়ারমেন্ট শিডিউল এবং দেশব্যাপী প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে বর্ধিত চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বছরভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ ঘাটতি দ্রুত নিরসনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ আইন) ২০১০ (সংশোধন ২০১৮) প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই আইনের আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে। জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কিনতে বিদ্যুৎ বিভাগের ২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর গঠিত প্রক্রিয়াকরণ কমিটির পরিকল্পনা ও প্রস্তাবগুলো কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ ২০১৫ সালের ২০ মে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে।
প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি -১৯৯৬ এর আওতায় বিল্ড, ওন অ্যান্ড অপারেশন (বিওও) ভিত্তিতে আইপিপি হিসেবে গজারিয়া উপজেলায় ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস অথবা আরএলএনজি-ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য কনসোর্টিয়াম (১) এডরা পাওয়ার হোল্ডিং এসডিএন বিএইচডি, মালয়েশিয়া এবং (২)উইনিএভিশন পাওয়ার লিমিটেড, বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দেয়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) এবং কারিগরি কমিটি কর্তৃক প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে স্পন্সর কোম্পানির সাথে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে রেসপনসিভ দরদাতা কনসোর্টিয়ামের সাথে ২২ বছর মেয়াদে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস অথবা আরএলএনজি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সুপারিশ করে। স্পন্সর প্রতিষ্ঠান প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওয়ার ইভাক্যুয়েশনের জন্য স্পন্সর নিজ খরচে ও নিজ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন লাইন, সাবস্টেশন নির্মাণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পে গ্যাস/আরএলএনজি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে সঞ্চালন পাইপলাইনের অফটেক থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে গ্যাস সরবরাহ পাইপলাইন ও আরএমএস নির্মাণসহ সম্পূর্ণ প্রকল্প ব্যয় নির্বাহ করবে।
প্রস্তাবে উদ্যোক্তা সংস্থা ২২ বছর মেয়াদে গ্যাসভিত্তিক প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ৩.৬৯২৩ মার্কিন সেন্টের সমতুল্য বাংলাদেশী মুদ্রায় ২.৯৫ টাকা এবং আরএলএনজি-ভিত্তিক প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টার দাম ৬.৮০৯৮ মার্কিন সেন্টের সমতূল্য বাংলাদেশী মুদ্রা ৫.৪৫ টাকা প্রস্তাব করে। ইপিএইচ-ডব্লিউএল কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবের বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিইউবো) কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। পিজিসিবি ২০২০ সালের ২২ মার্চ তাদের মতামতে জানায় যে, প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিজিসিবি কর্তৃক নির্মিতব্য গজারিয়া ২৩০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্র পর্যন্ত ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং গজারিয়া উপকেন্দ্র পর্যন্ত ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং গজারিয়া উপকেন্দ্রে দুইটি ২৩০ জিআইএস ‘বে’ নির্মাণের মাধ্যমে পাওয়ার ইভাক্যুয়েশন করার সুযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, পরে এ বিষয়ে বিউবো ২০১৯ সালে ১৮ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত ১৮২৯তম সাধারণ সভার সিদ্ধান্তসহ মতামত দেয়। এতে বলা হয় যে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনার প্রক্ষেপণের আলোকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নকাল দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হলে প্রকল্পের পাওয়ার ইভাক্যুয়েশন এ বিষয়ে পিজিবিসি এবং ন্যাচারাল গ্যাস/আরএলএনজি সরবরাহের বিষয়ে পেট্রোবাংলার নিশ্চয়তা পাওয়ার সাপেক্ষে উদ্যোক্তা কর্তৃক প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আনসলিসিটেড প্রস্তাবটি বিবেচনা যেতে পারে।
সূত্র জানায়,জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ তাদের মতামতে জানায়, ভবিষ্যতে দেশীয় গ্যাসের প্রাপ্যতাসাপেক্ষে এবং ল্যান্ড বেজড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন কার্যক্রম সম্পাদনের পর গ্যাসের সরবরাহ সার্বিকভাবে বৃদ্ধি নিশ্চিত হওয়ার পর বেসরকারি খাতে প্রস্তাবিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস/আরএলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তবে প্রস্তাবিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রয়োজনে দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাথে বিউবোর সমন্বয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা যেতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি নিয়ে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২৮ জানুযারি পর্যন্ত একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাগুলোতে প্রকল্পের বিস্তারিত আলোচনা শেষে নেগোশিয়েশন সভায় স্পন্সর প্রাথমিক পর্যায়ে দেয়া দর কমানোর বিষয়ে রাজি হয়। চলতি বছর গত ২ ফেব্রুয়ারি গ্যাসভিত্তিক প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ৩.৬৭৯৭ মার্কিন সেন্টের সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ২.৯৪৩৭ টাকা এবং আরএলএনজি-ভিত্তিক প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ৬.৭৯৭২ মার্কিন সেন্ট এর সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫.৪৩৭৭ টাকা নিধারণ হয়েছে। আলোচ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সম্প্রতিকালে অনুমোদিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরের চেয়ে কম।
সূত্র জানায়, ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হলে ২২ বছর মেয়াদে উদ্যোক্তা কোম্পানিকে গ্যাসভিত্তিক হলে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ২.৯৪৩৭ টাকা হিসাবে মোট ৩৭ হাজার ৪৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকা অথবা আরএলএনজি-ভিত্তিক হলে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫.৪৩৭৭ টাকা হিসাবে মোট ৬৯ হাজার ১৬৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।