• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিকলে বন্দি জীবন শুকুরের

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২১  

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ১০ বছর ধরে শিকলে বন্দি জীবন কাটছে শুকুর আলীর। বৃদ্ধা মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাবার জোটান। তাই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা। মেলেনি প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি কোনো সহযোগিতা।

ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া গ্রামের মৃত ছবেদ আলীর ছোট ছেলে শুকুর আলী। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কৃষি কাজ করে জোটাতেন নিজের লেখাপড়ার খরচ। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। শান্তশিষ্ট ছেলে হিসেবে গ্রামের সবাই তাকে আদর করতো। কিন্তু হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। ১৫ বছর ধরে মানসিক সমস্যা দেখা দিলেও পায়ে শিকল পড়েছে ১০ বছর ধরে।

সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, ৫ টিনের এক ভাঙাচোরা ছাপড়া ঘরে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে শুকুরকে। ঘরের দুই পাশে বেড়া নেই। রোদ বৃষ্টি কিম্বা ঝড়ের দিনে এখানেই বসবাস তার। ডাকলে সাড়া দেন শুকুর। তবে কথার উত্তর দিতে চান না। বাড়িতে কেউ গেলে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন।

ছাপড়ার সঙ্গেই লাগানো আরেকটি ঘরে শুকুর আলীর মা মতি বেগম বসবাস করেন। খড়ের বেড়ার এই ঘরটিও জরাজীর্ণ। দরজা নেই। তাই পুরাতন কাপড়ের টুকরা সেলাই করে বানানো হয়েছে ঘরের দরজা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৩ ভাই আর এক বোনের মধ্যে শুকুর আলী সবার ছোট। ভাইয়েরা দিনমজুর। অভাবের সংসার। পরিবার নিয়ে তাদেরই জীবন চলে কষ্টে। তাইতো শুকুর আলীর উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। তার বৃদ্ধা মা মতি বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে ছেলের মুখে খাবার তুলে দেন।

শুকুর আলীর মা মতি বেগম বলেন, আমার ছেলেটা অনেক ভালো ছিল। গ্রামের সবাই তাকে ভালো জানতো। ছোট বেলায় ওর বাবা মারা গেছে। কৃষি কাজ করে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোটাতো। কিন্তু হঠাৎ করেই মাথা খারাপ হয়ে যায়। কী কারণে এমনটা হলো তা বলতো পারবো না। রাস্তার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতো। বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে বসে থাকতো। লোকজন ভয় পেতো। লোকজন দেখলে ঢিল ছুড়ে মারতো। অনেক সময় মানুষজনও তাকে ধরে মারপিট করতো। এ কারণে বাধ্য হয়েই পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে।

এর আগে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা শামীম মিয়াসহ কয়েকজন জানান, অতি দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে শুকুর আলীর চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তবে উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। তাই যদি কোনো সুহৃদয়বান ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় তাহলে পরিবারটির খুবই উপকার হতো।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঘিওর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মানসিক রোগীর চিকিৎসায় সহযোগিতা দেয়ার সুযোগ নেই। তবে তার প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। উপজেলা প্রশাসন থেকে চিকিৎসা সহযোগিতা দেয়ার বিষয়েও আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি।