• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

গাজীপুরের মুনমুন বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারে মনোনীত

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২২  

 বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন গাজীপুরের মনিরা সুলতানা মুনমুন। গাজীপুর শহরের উত্তর ছায়াবিথী এলাকায় বসবাসরত আমেরিকান প্রবাসী আকরাম হোসেন বাঁদশার স্ত্রী মনিরা সুলতানা মুনমুন।

সোমবার(২৪ মে) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০২০’ পদক সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়।  জেলা, উপজেলা এবং বিভাগ পর্যায়ে বিচারের পর জাতীয় কমিটি চূড়ান্তভাবে এ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেন। আর সেখানেই উঠে আসে মুনমুনের নাম।

‘বাড়ির ছাদে বাগান সৃজন’ শ্রেণিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কারের জন্য যথাক্রমে মনিরা সুলতানা মুনমুন,গাজীপুর, কবিতা নাসরিন সৃষ্টি, ময়মনসিংহ এবং সাহানা নাসরিন-রাজশাহী থেকে মনোনীত হয়েছেন।

মনিরা সুলতানা জানিয়েছেন, তিনি শখের বশে ২০১৪ সালের দিকে অল্প কিছু গাছ এনে লাগিয়েছিলেন। পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের ঔষধি গাছ, সবজি ও নানা ধরনের ফলের গাছ আমদানি করেন। স্বামী আকরাম হোসেন বিদেশ থেকে নিয়ে আসেন বিভিন্ন উদ্ভিদের জাত। ‌

এছাড়া ফেসবুকে ‘প্ল্যান্টস ফ্রম মুন’ নামের একটি গ্রুপ খুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। কর্মশালায় শেখানো হয়, উদ্ভিদের পরিচর্যা, জৈবসার তৈরির প্রক্রিয়া ও বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ভিদের জাত সংগ্রহের পদ্ধতি। মুনিরার ছাদ বাগানে উঠলে কারও মনে হবে না তিনি বাড়ির ছাদে আছেন। মনে হবে কোন সৌখিন কৃষকের পরিকল্পিত বাগানে ঢুকেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মুন মুন তার ছাদের পুরো অংশ জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি এবং বিদেশী হাজারো গাছের সমারোহ ঘটিয়েছেন।  শাক সবজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন  জাতের ফল গাছ সারি সারি ভাবে সাঁজানো রয়েছে মুনমুনের বাগানে। মনিরার ছাদবাগানে উদ্ভিদের সংখ্যা ১ হাজার ৪৩৯টি। এর মধ্যে ঔষধি গাছ আছে ৪০ প্রজাতির। ঔষধি গাছের মধ্যে আছে অর্জুন, আমলকী, বহেরা, হরীতকী, ঘৃতকুমারী, নিম, তুলসী, থানকুনি, বাসক, পেইন কিলার, অ্যাড্রেসিয়া বেরি, ক্লিন স্টোমাক, চেইন অব গ্লোরি, রুইলিয়া রেসিলিয়া, ডেইজি, কিডনি প্ল্যান্ট, ভ্যানিলা অর্কিড, কর্পূর, জয়ত্রী, গোলমরিচ, সুইট রেসিন, ট্রি রেসিন, কারি পাতা প্রভৃতি। সবজির মধ্যে আছে লেটুস, করলা, ধনেপাতা, বেগুন, কাঁকরোল, পটল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লাউ, লাল ঢ্যাঁরস, শিম, শসা, টমেটোসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতি। এ ছাড়া দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় জাতের মধ্যে আছে ওল্ড চন্ডাল, আগর, সিভিট, হলদু, কৃষ্ণ বট, অশোক, কর্পূর প্রভৃতি। আর মুনমুনের পুরো ছাদ বাগানের সব গাছের সাথে পরিচিত হতে যেকারও লেগে যাবে কয়েক ঘন্টা। আর এই বিশাল ছাদবাগানের সকল গাছের পরিচর্যাও তিনি নিজের হাতেই করে থাকেন।

ছাদ বাগানের বিষয়ে আলাপ কালে মুনমুন বলেন, শখের বসেই তার এ ছাদ বাগান। তবে এ বাগান থেকে তিনি নিজেদের শাক সবজির চাহিদা মেটানোর কথাও জানান । তিনি আরও বলেন, তার এই ছাদ বাগান থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতের গাছ তিনি তার পরিচিতদের মাঝে বিতরণ করেছেন।  মুনমুনের অবসর সময়ের অনেকটাই তিনি তার ছাদ বাগানে ব্যয় করেন বলে জানিয়েছেন। মুনমুনের কথায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে তিনি কৃষিতে অনেক বেশি অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন তার এ বাগান করার কারণে।

বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন, এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কি জানতে চাইলে তিনি  বলেন,  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছি বিষয়টি এককথায় প্রকাশ করার নয়। এটি আমার জীবনের সেরা অর্জন।  মুনিরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ বাংলাদেশের কৃষিকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।  মানুষ অনুপ্রানিত হচ্ছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চির কৃতজ্ঞ। একই সাথে মুনমুন তার শশুর বাড়ির লোকজনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন তাদের সহযোগিতা ছাড়া এই বাগান আমি করতে পারতাম না। তবে সবচাইতে বেশি কৃতজ্ঞ আমার স্বামী আকরাম এবং আমার মেয়ে মিফতার কাছে। তারা আমার পাশে থেকে সবসময় সহযোগিতা করছে।