• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করে বক্তব্য দেওয়া জাবি শিক্ষক ক্ষমা চেয়েছ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২২  

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা, মুত্তিযোদ্ধার পরিবার ও দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান তিনি। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, 'আমার বক্তব্যের কোন অংশে সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা, মুত্তিযোদ্ধার পরিবার ও দেশবাসী কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার বিনীত অনুরোধ করছি।'

এতে আরও বলা হয়, অনেক অপরাধী মুত্তিযোদ্ধার শাস্তি বর্তমান সরকার নিশ্চিত করেছে। এ উদাহরণে দিয়ে গিয়ে কিছু সংখ্যক বিপদগামী মুক্তিযোদ্ধা না বলে শুধু মুক্তিযোদ্ধা বলায় আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সৃষ্টি হয়েছে। যা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।

এর আগে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

গত বুধবার বিকালে 'মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম' জাবি শাখার দপ্তর সম্পাদক জাহিদ হাসান স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে নিন্দা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের বয়স সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় সুবিধা বাতিল করা নিয়ে সিনেট অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লুটতরাজকারী ও নারী নিপীড়নকারী বলে অশালীন মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকাশ্যে অবমাননা করার মাধ্যমে অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চরম অবমাননা ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন যা অতি ঘৃণিত অপরাধ।

এতে আরও বলা হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন অশালীন মন্তব্য ও কটুক্তি করার অপরাধে অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদারকে অতিদ্রুত ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মদের সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ' অধ্যাপক অজিতের অবমাননাকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। 

মঙ্গলবার (২৮ জুন) রাতে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল জাব্বার হাওলাদার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অধ্যাপক অজিত সিনেট অধিবেশনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লুটতরাজকারী’ ও নারী নিপীড়নকারী’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সিনেট অধিবেশনে অধিকাংশ সম্মানিত সিনেট সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক অধ্যাপক ড. আমির হোসেনের অবসরের বয়স প্রদত্ত ৬৬ বছর রাখার পক্ষে মত দেন। এতে ক্ষিপ্ত হন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। যুক্তি উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়ে তিনি ঢালাওভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের লুটতরাজকারী’ ও নারী নিপীড়নকারী বলে আখ্যায়িত করেন। দেশের গর্বের সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যাক্কারজনকভাবে অসম্মানিত করায় আমরা ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ। আমরা মনে করি অধ্যাপক অজিতের এই ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল।

এতে দাবি করা হয়, মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড মো. নূরুল আলম মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা হরণে সিনেটে এজেন্ডা এনে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য কাজ করেছেন। অধ্যাপক অজিত বক্তব্য দানকালে তিনি নিরব থেকে এধরনের বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানে উৎসাহিত করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমূল্যায়ণ করেছেন।

এছাড়া গত সোমবার (২৭ জুন) রাতে আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ'র আহবায়ক অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদারের শাস্তি দাবি জানানো হয়। 

প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে একাত্তর-পরবর্তী সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। 

এ সময় অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, আমার মামাও ছিল মুক্তিযোদ্ধা, এই নির্যাতনে তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। সততার জন্য, অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা লুট করা শুরু করছে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বললে অনেক ধরনের কথা আসে।

তিনি আরো বলেন, আজ এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যে ইমোশন (আবেগ) তৈরি হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্যই আমি সম্মান করি। আবার এই মুক্তিযোদ্ধারাই কীভাবে নিপীড়ন করেছে নারীদের, আমি দুয়েকটা নামও বলতে পারি।

গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত সিনেটের ৯ নম্বর এজেন্ডায় মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের বয়সসীমা সংক্রান্ত আলোচনায় এমন মন্তব্য করেন ওই শিক্ষক। তার বক্তব্যের সাত মিনিটের একটি রেকর্ড ইত্তেফাকের হাতে এসেছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তার এমন মন্তব্যে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত সিনেট সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকরা।  

এ বিষয়ে অজিত কুমার সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমি এমন মন্তব্য করেছি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আমি সম্মান করি।

অডিও রেকর্ডে অজিত কুমারকে আরও বলতে শোনা যায়, আমার বয়স যখন ১৪-১৫ তখন মুক্তিযুদ্ধ হয়, মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী কালও দেখেছি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছি। অনেক কিছুই দেখেছি।