• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ইউনুছ আলী কলেজের অনুমোদন নেই

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৫ জুলাই ২০২২  

সাভারের যে হাজী ইউনুছ আলী কলেজে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার নিহত হয়েছেন সেটিতে চার স্তরে লেখাপড়া হয়। এগুলো হচ্ছে- কেজি, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। এর মধ্যে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তর চলছিল অনুমোদন ছাড়াই।

এক যুগ ধরে এভাবে চলছে। অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে অস্থায়ী স্বীকৃতির মেয়াদও এক বছর আগে উত্তীর্ণ হয়েছে। কেজি স্তরের একটি কোড নম্বর থাকলেও অনুমতি বা স্বীকৃতির কোনো রেকর্ড নেই প্রতিষ্ঠানটির কাছে। সেই হিসাবে গোটা স্কুলটিই চলছে সরকারের যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তদন্তে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এদিকে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, খুনি আশরাফুল ইসলাম জিতু নাবালক নয়। সে রাজধানীর উত্তরার একটি বিখ্যাত মাদ্রাসা থেকে ২০২০ সালে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা পাশ করে। এতে বোর্ড নিবন্ধন অনুযায়ী তার জন্ম ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি। সেই হিসাবে তার বয়স ১৯ বছর ৫ মাসেরও বেশি।

অন্যদিকে উৎপল কুমার সরকারের ঘটনার পর ঢাকা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি ভেঙে দেওয়ার যে কথা বলেছে সেটি ‘আইওয়াশ’ বলে জানা গেছে। কেননা স্কুলটিতে কোনো কমিটিই ছিল না। গত জানুয়ারি থেকে এভাবেই চলছিল। তবে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল। শিক্ষক খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ও বোর্ডের নির্দেশনায় কমিটি গঠনের এই প্রক্রিয়া এখন জোরেশোরে শুরু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান মোবাইল ফোনে  বলেন, মাধ্যমিক স্তরের প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য তারা একাধিকবার বোর্ডে আবেদন করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী কলেজের অনুমোদন আগে থাকলে স্কুলের ক্ষেত্রে আলাদা ভবন তৈরির পরই তার অনুমোদন নেওয়া যাবে। কিন্তু একটি ভবন গড়তে ২ কোটি টাকা দরকার। তা নেই বলে স্কুল ভবন তৈরি করা যায়নি। আর করোনাকালের বিশেষ পরিস্থিতির কারণে কলেজ শাখার মেয়াদ উত্তীর্ণ অনুমোদন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যায়নি।

তিনি স্বীকার করেন যে, কেজি স্কুল মানে হচ্ছে, প্লে, নার্সারি ও কেজি শ্রেণি। এই হিসাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত কোড প্রাথমিক শাখার জন্য নয়। যদিও তিনি বলেন, শুধু তার প্রতিষ্ঠানই নয়, সাভারে এমন ৩৩১টি কেজি স্কুল আছে যাদের কারোরই অনুমোদন নেই। তবে সরকার এগুলো স্বীকার করে। এজন্যই শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বই তারা পেয়ে আসছেন।

মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন সোমবার পরিদর্শন প্রতিবেদনটি শিক্ষা ভবনে প্রধান কার্যালয়ে দাখিল করেন। এতে বলা হয়, গত ২৫ জুন হাজী ইউনুছ আলী কলেজে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল। শিক্ষক উৎপল পঞ্চম শ্রেণির কোচ ছিলেন। স্কুল ভবনের বিপরীত পাশে বসে খেলা দেখছিলেন তিনি। তখন দশম শ্রেণির ছাত্র জিতু হঠাৎ করে উৎপলের মাথা ও বুকে বারবার আঘাত করছিল। খেলায় আম্পায়ারিং করছিলেন অপর শিক্ষক শরিফুল ইসলাম। তিনি আঘাত করতে দেখে দ্রুত এসে জিতুকে ধরে ফেলেন। কিন্তু এরই মধ্যে উৎপলের বেগতিক অবস্থা দেখে জিতুকে ছেড়ে উৎপলের সাহায্যে এগিয়ে যান। অন্য শিক্ষকদের সহায়তায় পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এই তদন্ত প্রতিবেদনে কমিটি কেবল তথ্যানুসন্ধান করেছে। কোনো সুপারিশ করেনি। প্রতিবেদনের প্রথম ভাগে কলেজটির বৈধতা সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৭৮২ শিক্ষার্থী আছে। তাদের মধ্যে কলেজ শাখায় একাদশ শ্রেণিতে ১২০ আর দ্বাদশ শ্রেণিতে ৯২ জন আছে। শিক্ষক আছেন ৪৫ জন। মাধ্যমিক স্তর বাদে সরাসরি কলেজ শাখার প্রাথমিক অনুমোদন নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালে। পরে ২০১৮ সালের জুনে ৩ বছরের জন্য প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পরিচালনা কমিটির (নির্বাহী কমিটি) মেয়াদ গত বছরের আগস্টে শেষ হয়। এরপর অ্যাডহক কমিটি গঠনের কাজ ১০ মাস ধরে প্রক্রিয়া আছে। অর্থাৎ কোনো কমিটি ছাড়াই চলছিল প্রতিষ্ঠানটি।

কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সালে কেজি স্কুল হিসাবে প্রতিষ্ঠা হয় এই প্রতিষ্ঠানের। জনৈক ইউনুছ আলী এর জমি দাতা। ২০১১ সাল থেকে পার্শ্ববর্তী স্কুল থেকে তাদের শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে আসছে। সর্বশেষ দুবছর যথাক্রমে নিশ্চিন্তপুর দেওয়ান ইদ্রিস আলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং আমছিমোড় সেসিপ মডেল হাইস্কুল থেকে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, কেউ শুধু কলেজ শাখার অনুমোদন নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে পারে। কিন্তু স্কুল শাখা চালাতে হলে তার অনুমোদন নিতে হয়। এর কিছু প্রক্রিয়া আছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, আরেক প্রতিষ্ঠান থেকে অবস্থানগত দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়। ইউনুছ আলী কলেজের স্কুল শাখার অনুমোদন ছিল না।