• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ঢাকার ১৩টি গ্রামে এখনো যোগাযোগের প্রধান ভরসা খেয়া নৌকা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২২  

কাছেই ব্যস্ততম পৌর শহর সাভার। ধামরাইও বেশি দূরে নয়। কিন্তু শহুরে হাওয়া গায়ে লাগানো বেশ কষ্টসাধ্য ১৩টি গ্রামের মানুষের। শহরে যেতে তাদের চেপে বসতে হয় খেয়া নৌকায়। নদী পার হলে মেলে শহরের দেখা। একটি সেতুর অভাব যেন গ্রামগুলোকে পর করে রেখেছে শহর থেকে। ঢাকার ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর এলাকায় গেলে দেখা যায় এমন চিত্র। স্থানীয়রা জানান একটি সেতুর অভাবে তাদের ভোগান্তির কথা।

তারা জানান, কুল্লা ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ধলেশ্বরীর শাখা নদী বংশী। নদীটি ইউনিয়নের ফোর্ডনগরসহ তিনটি গ্রাম এবং মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ১০টি গ্রামকে সাভার-ধামরাই থেকে বিভাজিত করেছে। এসব গ্রামের অন্তত লক্ষাধিক বাসিন্দা সাভার ও ধামরাইয়ে যাওয়ার জন্য খেয়া নৌকা ব্যবহার করে থাকেন।

ফোর্ডনগর গ্রামটি ধলেশ্বরী নদীর দুপাশে অবস্থিত। গ্রামের উত্তরপাড়ায় একটি সেতু থাকায় সেটি দিয়ে খুব সহজেই ওই এলাকার বাসিন্দারা সাভারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন।

কিন্তু ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া, কান্দাপাড়া, চর বরদাইল এবং সিংগাইরের ধল্লা ইউনিয়নের খান পাড়া, ভূতা পাড়া, মোল্লা পাড়া, ভাটির চর, খালাসি পাড়া, জেলে পাড়া, উলাইল চর, খাসের চর, লাঙ্গুলি, কামুরা- এই ১৩ গ্রামের লক্ষাধিক বাসিন্দা শহরে যেতে ব্যবহার করেন খেয়া নৌকা।

এদিকে এই দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে অবিলম্বে এই এলাকায় সেতুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এলাকাবাসী জানায়, সেতু না থাকায় ধলেশ্বরীর উভয় পাড়ের কৃষি জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে নৌকা ব্যবহার করতে বাধ্য হওয়ায় প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।

এ ১৩টি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা সাতটি, কিন্ডারগার্টেন পাঁচটি, মাদ্রাসা তিনটি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থীর বাড়ি ফোর্ডনগর উত্তরপাড়ায়, বেশিরভাগ শিক্ষকের বসবাস সাভারে। এছাড়া গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণির প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী সাভারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। ফলে তাদের খেয়া পার হওয়ার বিকল্প নেই।

সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় অসুস্থ মানুষকে। এসব গ্রামে কোনো চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকায় মানুষের ভরসা সাভারের বিভিন্ন হাসপাতাল। নৌকা ছাড়া পারাপারের সুযোগ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

ফোর্ডনগর উত্তর পাড়ার বাসিন্দা কৃষক লাল চাঁন বলেন, “গ্রামের অনেকেরই ওপাড়ে জমি আছে। তাই প্রতিদিন একাধিকবার পারাপার হতে হয়। আবার ফসল আনা-নেওয়াতেও দুর্ভোগ। নদী পার করে বাড়ি আনা, আবার একইভাবে বাজারে নেওয়া। সেতু থাকলে এতো কষ্ট হতো না।”

সাভার অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আলতাফুর রহমানের কথায়, “নৌকা অন্য পাড়ে থাকলে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া মাঝি না থাকলেও দেরি হয়। আবার অনেকেই সাঁতার জানে না। তারা ভয় নিয়ে চলাচল করে।”

ফোর্ডনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা ইয়াসমিন বলেন, “প্রায় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী ও ৮ জন শিক্ষক প্রতিদিন নদীর অপর প্রান্ত থেকে খেয়া পার হয়ে স্কুলে আসেন। শিক্ষার্থীদের অনেকে সাঁতার না জানায় আতঙ্কে থাকতে হয় আমাদের। একটি সেতু হলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।”

ফোর্ডনগরের বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “রাত ১২টার পর ঘাটে নৌকা থাকে না। গভীর রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিপদে পড়তে হয়। বেশ কয়েক মাস আগে একটি মারামারির ঘটনায় মারাত্মক আহত তিনজনকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে বেশ মুশকিলে পড়তে হয়েছিল।”

এ বিষয়ে কুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান বলেন, “আমি প্রথমবারের মতো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। নির্বাচিত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা ফোর্ডনগরে ধলেশ্বরী নদীতে সেতুর অভাবে দুর্ভোগের কথা আমাকে জানিয়েছেন। আমি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মহলে এ সেতুর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরব।” ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, “ফোর্ডনগরের ওই এলাকাটিতে ধলেশ্বরী নদীতে সেতু নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে এটি এলজিইডির তালিকাভুক্ত হয়েছে।”