• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২২  

সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে ধামরাইয়ে হতদরিদ্র কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে। সরকারি ঘর পাওয়ার আশায় এনজিও থেকে ঋণ ও ধার দেনা করে এই টাকা জোগাড় করে দেন। ঋণের টাকা ধীরে ধীরে পরিশোধ করতে পারলেও প্রতারকদের কাছ থেকে সরকারি ঘর বা টাকা তুলতে পারেনি।

জানা যায়, সরকারের দেওয়া পাকা বাড়িতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সুখে দুঃখে নিরাপদে বসবাস করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাই এনজিও থেকে কিস্তি ও ধারদেনা করে টাকা ব্যবস্থা করে ইউপি সদস্যের মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট টাকা পাঠান। কিন্তু আশায় বাসা বাঁধলেও আজও তাদের আশা পূরণ করেনি ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সোহরাব হোসেন। দেখতে দেখতে চেয়ারম্যান সাবেক হয়ে গেলেও আশা আর স্বপ্ন ছাড়েনি ওই অসহায় হতদরিদ্র পরিবারগুলো।

অনুসন্ধানে জানা যায়, যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ ’আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’ এর আওতায় সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে ধামরাই উপজেলার সূয়াপুর ইউনিয়নের ৪টি হতদরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। ভূবন নগর গ্রামের ছালাম মিয়ার ছেলে রতনের কাছ থেকে ১০ হাজার, ভূবন নগর গ্রামের ইউসুফ আলীর কাছ থেকে ১৫ হাজার, রৌহা টেক গ্রামের মৃত হায়েত আলীর ছেলে মো. আলমের কাছ থেকে ২০ হাজার এবং একই গ্রামের ফিরোজা আক্তারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়। টাকা নেয়ার আড়াই থেকে তিন বছর পার হয়ে গেলেও কোন পরিবার এখন পর্যন্ত ঘর পাননি। এদের সবাই এনজিও থেকে ঋণ ও ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করে দিয়েছিলেন। ঋণ ও ধারদেনা করা টাকা অনেক কষ্ট করে পরিশোধ করা হলেও তাদের জমিতে সরকারি ঘর নির্মাণ করা হয়নি।

ভুক্তভোগী ইউসুফ আলীর স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ। অনেক কষ্ট করে ৫ শতাংশ জমিতে ভাংঙা ঘরে স্বামী সন্তান নিয়ে আছি। ঘরবাড়ি নাই, তাই চেয়ারম্যান আমাদের সরকারি ঘর করে দিবে। পরে চেয়ারম্যানের লোক নুরুল ইসলাম ১৫ হাজার টাকা নেয়। টাকা নেয়ার আড়াই বছর হয়ে গেল, কিন্তু আজ পর্যন্ত চেয়ারম্যান আমাদের ঘরের ব্যবস্থা করে দিলো না।

একই এলাকার ভুক্তভোগী রতন মিয়া বলেন, আড়াই বছর আগে ঘর দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে আমার চাচাতো ভাই মাইনা (মনোয়ার) ১০ হাজার টাকা নিয়ে সোহরাব চেয়ারম্যানকে দিছে। আমাকে ঘরও দেয় নাই, টাকাও দেয় নাই।

টাকা নিয়ে ঘর কেন দিচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম জানান, মমতাজ বেগমের টাকা আমি নেইনি। বিষয়টি আমি অবগত। উনাদের কাছের মানুষ ইয়ামিন বিশ্বাস ডাবলু নামে এক ব্যক্তি ছিল তিনি মারা গেছে। উনার মাধ্যমে সাবেক চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনকে দিয়েছিল।

রতন মিয়ার চাচাতো ভাই মনোয়ার হোসেন বলেন, করোনার আগে পরিষদে সোহরাব চেয়ারম্যান বলছিল একেক জনকে ঘর দিমু ২০ হাজার করে টাকা দিবি। এখন দশ হাজার টাকা দিবি, আর বাদ বাকি টাকা ঘর দেওয়ার পরে দিবি। তখন আমার চাচতো ভাইকে বললাম, পরে অনেক কষ্ট কইরা জুগিয়া দিলো আমার হাতে। তখন পরিষদের সচিবের কাছে দেই, তারপর আমার সামনে সচিব চেয়ারম্যানকে দেয়। পরে নির্বাচন হলো, চেয়ারম্যান ফেল করল। যোগাযোগ নাই, দেখা সাক্ষাৎ নাই, খোঁজ খবর নাই। ফোন দিয়ে ঘরের কথা বললে ফোন কাইটা দেয়।

টাকা নিয়ে ঘর দেওয়ার বিষয়ে জানতে সূয়াপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সোহরাবকে তার মুঠোফোনে বার বার ফোন করা হলে এক পর্যায়ে তিনি ফোন রিসিভ করেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা না বলেই কল কেটে দেন।