• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সন্তানের অবহেলা নিয়েই চিরবিদায় নিলেন সেই বৃদ্ধ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩ জুন ২০১৯  

সন্তানের অবহেলা নিয়েই পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন ৮২ বছর বয়সী সেই বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খাঁ। যে সন্তানকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন, যে সন্তানকে নিজের জীবন পাত করে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন সেই সন্তানের নির্মম অবহেলার শিকার হয়ে বিদায় নিতে হলো ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের দশহাজার গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খাঁকে।

জীবনের শেষপ্রান্তে এসে সন্তানেরা তাকে ঠেলে দেয় এক অমানবিক জীবনে। তার পরিশ্রমলব্দ সম্পত্তিভোগ করতে সন্তানেরা তাকে ঠেলে দেয় ভিক্ষুকের জীবনে। তার ঠাঁই হয় ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাবলিক টয়লেটের এককোণে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে বাসস্ট্যান্ডের পাবলিক টয়লেটের পাশেই তিনি মারা যান।

স্থানীয়রা জানান, সন্তানের কাছ থেকে আঘাত পেয়ে আব্দুল আজিজ খাঁ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এছাড়া গত তিন-চার দিন যাবৎ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। কিছুই খেতে পারছিলেন না। রোববার দুপুরে আব্দুল আজিজ খাঁর মেয়ে আসমা খাতুনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বাবার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি। ওই সময়ই বাবার মরদেহ নিতে আসছেন বলে জানান তিনি।

aziz

বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খাঁকে নিয়ে গত ২৩ মে জাগো নিউজে ‘মেয়েকে বলেছি, সব জমি তোর আমাকে শুধু দু’মুঠো খাবার দিস’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি সবার দৃষ্টি কাড়ে।

এদিকে গত ২৬ মে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খাঁ ও তার মেয়ে আসমা খাতুন এবং তার জামাতা রফিক খাঁকে নিয়ে সমঝোতা করতে বসেন লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা। কিন্তু আজিজ খাঁ ও তার মেয়ে আসমা কোনোভাবেই একমত হতে পারেননি। পরবর্তীতে আজিজ খাঁ ও তার মেয়ে আসমা খাতুন যার যার মত চলে যান।

প্রসঙ্গত, গত এক বছর আগে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের দশহাজার গ্রামের বাসিন্দা ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তার মেয়ে আসমা খাতুন। বৃদ্ধ আজিজ খাঁ ছিলেন অসুস্থ ও পঙ্গু। পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়াতে পারতেন না। বসে বসে চলাচল করতেন। এমন অসহায় বাবার জমিজমা দখল করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন মেয়ে আসমা।

faridpur

বিভিন্নস্থানে ঘুরে আজিজ খাঁর ঠাঁই হয় ফরিদপুর বাস টার্মিনালে। টার্মিনালের যাত্রী সাধারণের জন্য স্থাপিত টয়লেটের এক পাশে রাত কাটাতের তিনি। দিনের বেলায় টার্মিনালে ভিক্ষা করতেন, বিভিন্ন কাউন্টার ও চলাচলকারী মানুষের কাছ থেকে যা পেতেন তা দিয়ে কোনোমতে দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে ছিলেন বৃদ্ধ আজিজ খাঁ।

মেয়ের বিরুদ্ধে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে অভিযোগ দিয়েছিলেন আজিজ খাঁ। অভিযোগের ভিত্তিত্বে গত ২৬ মে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে শুনানিতে হাজির হন আজিজ খাঁ ও তার মেয়ে আসমা। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কোনোভাবেই তাদের মধ্যে সমঝোতা করা সম্ভব হয়নি।