• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

অস্ত্রসহ ধরা পড়া ব্যক্তিকে নিয়ে আইএসআই কানেকশনের সন্দেহ!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮  

কক্সবাজারে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)-এর হাতে আটক হওয়া একজন অস্ত্র কারবারিকে নিয়ে নানা সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে। দু’টি ওয়ান শ্যুটার গান নিয়ে সোমবার কক্সবাজার সদর উপজেলার বাংলাবাজার নামক এলাকায় আটক হন এই কারবারি। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে অস্ত্রগুলো কেনাবেচার সময় হাতে নাতে র‌্যাব সদস্যদের হাতে আটক হন তিনি। আটক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা-আইএসআই’র একজন চর বলেও পুলিশ সন্দেহ করছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন- ‘অস্ত্রসহ আটক ব্যক্তিকে নিয়ে বিলম্বে নানা স্পর্শকাতর তথ্য শোনা যাচ্ছে। তাই তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। এ জন্য তাকে রিমান্ডে আনতে আদালতে আবেদন জানানো হবে।’ স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, গেল বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর পরই পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনের আনাগোনা কক্সবাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিকও নানা ছদ্মাবরণে এসব লোকজনের চলাচলের কথাও চাওর হয়ে রয়েছে এলাকায়।

কক্সবাজারের র‌্যাব ও পুলিশ জানিয়েছে, অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পরই নানা সন্দেহজনক তথ্য তাদের নিকট আসতে শুরু করেছে। আটক হওয়া ব্যক্তির নাম মো. শাহেদুল ইসলাম (৩০)। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ডিপ্লোমাধারী শাহেদের বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তর নাপিতখালী গ্রামে। তার মা শাহেদা বেগম স্থানীয় একজন বিএনপি নেত্রী এবং সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার। শাহেদের বাবার নাম ফরিদুল ইসলাম ভেদু।

র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. মেহেদী হাসান জানান- ‘র‌্যাবের গোয়েন্দা সূত্রের খবর ছিল শাহেদ একজন অস্ত্র কারবারি। নির্বাচনকে সামনে নিয়ে কারবারি শাহেদের অস্ত্রের চালান পাচার করার আগাম সংবাদ ছিল র‌্যাবের কাছে।’ তিনি জানান, সোমবার র‌্যাব ওঁৎ পেতে থেকে কক্সবাজার সদরের বাংলাবাজার রাস্তার মোড় নামক স্থান থেকে অস্ত্রসহ তাকে হাতে নাতে ধরে ফেলেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খোন্দকার বলেন- ‘র‌্যাবের হাতে অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পরই পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় কারবারি শাহেদকে। পুলিশ সোমবার সন্ধ্যায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারগারে পাঠিয়ে দেয়।’ ওসি বলেন, অস্ত্র মামলায় আসামি শাহেদকে কারাগারে প্রেরণের পরই তাকে নিয়ে নানা সন্দেহজনক তথ্য শুনা যাচ্ছে। তবে ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক নারী মেম্বার ও আটক ব্যক্তি শাহেদের মা শাহেদা বেগম তার ছেলেকে নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগ ডাহা মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, তার পুত্র অস্ত্র কারবারে জড়িতও নেই।

আটক হওয়া ব্যক্তির ফেসবুক নিয়েও এলাকায় যথেষ্ট বিতর্কিত একজন ব্যক্তি তিনি। যা আটক হয়ে কারাগারে পাঠানোর পর শোনা যাচ্ছে বলে জানান তিনি। ওসি জানান, আটক ব্যক্তি যেহেতু বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার চর ছিলেন বলে প্রচারিত রয়েছে সেহেতু তাকে রিম্যান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজারের একজন সংবাদকর্মী জানিয়েছেন- ‘অস্ত্রসহ আটক কারবারি নিজের ফেসবুক ম্যাসেন্জারে তথ্য দিয়েছেন যে, তিনি আইএসআই বিষয়ক অনেক তথ্য দিতে সক্ষম রয়েছেন।’ র‌্যাবের হাতে আটক ব্যক্তির এসব বিষয় নিয়ে এখন কক্সবাজারে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

আটক অস্ত্র কারবারির গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, তিনি অত্যন্ত রহস্যময় জীবনযাপন করেন। গ্রামের বাড়িতে খুব কমই বসবাস করেন। দিনের বেলায় চলাচল করতে তাকে কম দেখা যায়। প্রায়শ রাতের বেলায় চট্টগ্রাম থেকে গ্রামে আসেন। বেশির ভাগ সময় থাকেন চট্টগ্রামে। স্থানীয় ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানিয়েছেন- ‘ছোট বেলায় মাদরাসায় লেখাপড়া করা শাহেদ জামায়াত-শিবিরের উগ্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অত্যন্ত রহস্যঘেরা তার চালচলন। ফেসবুকেও তিনি সরকার বিরোধী লেখালেখিতে ব্যস্ত থাকেন।’

কক্সবাজার সদর মডেল থানায় র‌্যাবের দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) উপ-পরিদর্শক প্রদীপ দে জানান- ‘মামলা দায়েরের পর পরই আটক ব্যক্তি শাহেদের ফেসবুক আইডি (এমডি শাহেদ) ডিলেট করার কথা শুনেছি। এমনকি শাহেদ যে কি রকম ধূর্ত তা দেখেছি থানা হাজতের গেইটে আমার সামনে তার মায়ের মোবাইল নিয়ে কাকে যেন বলছে, দ্রুত মেইলের তথ্য মুছে ফেলে দাও। আরো যেন কিসব বলতেও শুনেছি।’

এসব কাণ্ড এখন তদন্তকারী কর্মকর্তাকেও ভাবিয়ে তুলেছে, তাহলে মেইলে এমন কিসব ম্যাসেজ রয়েছে যেগুলোর প্রমাণ নষ্ট করার দরকার পড়েছে? আটক হওয়া ব্যক্তি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে একজন সংবাদকর্মী বলেও দাবি করেছেন। আটক শাহেদ নিজেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বলেও দাবি করেছেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।