• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পৃথিবী বাঁচাতে বাংলাদেশের হাতে তিন এজেন্ডা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২১  

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ৩১ অক্টোবর শুরু হতে যাচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬। এ সম্মেলনের দিকে এখন চোখ পুরো বিশ্বের। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ এ সম্মেলনে পা রাখবে তিন এজেন্ডা নিয়ে। নিজেদের পাশাপাশি জলবায়ু ঝুঁকি ফোরামের (সিভিএফ) প্রধান হিসেবেও সম্মেলনে ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ।

জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ৪৮টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

সম্মেলনে ঢাকার পক্ষ থেকে তিনটি দাবি তুলে ধরা হবে। মাত্র তিন মিনিটের বক্তব্যে প্রথম দাবিতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ দূষণকারী দেশগুলোকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও কার্যকর এনডিসি দিতে আহ্বান জানাবে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় দাবি হবে জলবায়ু তহবিলের জন্য উন্নত দেশগুলোর বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার পূরণ করা। তৃতীয় দাবিতে সবুজ প্রযুক্তি হস্তান্তরে এগিয়ে আসার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হবে।

৩১ অক্টোবর শুরু হয়ে মোট ১৩ দিন চলবে এ সম্মেলন। এতে সহ-আয়োজক হিসেবে থাকছে ইতালি। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত বছর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। এবারের আয়োজনে ১২০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বা তাদের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

এদিকে এ সম্মেলন শুরুর মাত্র দিন কয়েক আগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ; যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে যে হারে দূষণ বাড়ছে তাতে চলমান শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। অথচ প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ঠিক হয়েছিল, তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির মধ্যে আটকে রাখতে হবে।

সম্মেলনে ঢাকার পক্ষ থেকে তিনটি দাবি তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 

বাংলাদেশ এ সম্মেলনে যে তিনটি দাবি জানাবে তার প্রথমটির প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রত্যেক দেশ একটা পরিকল্পনা জমা দেয়। সেখানে দেশগুলো উল্লেখ করে তারা কত বছরে কী পরিমাণ দূষণ কমিয়ে আনবে। কিন্তু বড় দূষণকারী দেশগুলো যে এনডিসিগুলো আহ্বান করে সেটা নিরাপদ জোনে থেকে করে। কেউই দূষণ কমানোর দিকে যাচ্ছে না। আমরা বলছি, যেসব দেশ বেশি দূষণ করছে তাদের কার্যকর এনডিসি দিতে হবে। এ দাবি আমরা জোরালোভাবে তুলে ধরব। প্রথম দাবির আগে একটা শর্ত হচ্ছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে হবে।

দ্বিতীয় দাবি প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু তহবিলের জন্য উন্নত দেশগুলো বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করে। সে তহবিল থেকে অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০:৫০ বিতরণ করতে হবে। কিন্তু তারা সেটা দিচ্ছে না। আমরা চাই উন্নত দেশগুলো তাদের অঙ্গীকার পূরণ করবে। এ তহবিল যেন নিশ্চিত করা হয় সেটারও জোরালো দাবি আমরা জানাব।

তিনি আরও বলেন, আমরা দূষণ করছি খুবই সামান্য। এটাও আমরা কমাতে চাই। কিন্তু সেজন্য উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা লাগবে। আমরা তাদের কাছে প্রযুক্তি চাই। তারা বলছে, কয়লাভিত্তিক জ্বালানি বন্ধ করতে হবে। এগুলো বন্ধ করতে হলে আমাদের অন্য প্রযুক্তিতে যেতে হবে। কিন্তু সেগুলো খুবই ব্যয়বহুল এবং আমাদের কাছে নেই। আমাদের অনুরোধ হচ্ছে, উন্নত দেশগুলো যেন আমাদের গ্রিন প্রযুক্তি সরবরাহ করে; যেন সেটা আমরা খুব কম অর্থে পেতে পারি। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীর ভাঙন, বন্যা ও খরার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব উন্নত দেশগুলোকে নিতে হবে। এগুলো বাংলাদেশ ও সিভিএফেরও দাবি। আমরা এসব তুলে ধরব।

জলবায়ুর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের পরে এবারের কপ-২৬ সম্মেলন জলবায়ু ইস্যুতে সবচেয়ে বড় সম্মেলন। শীর্ষ নেতারা এ সম্মেলনে নতুন কী কী সিদ্ধান্ত নেন সেটার ওপর নজর থাকবে জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়শীল দেশগুলোর। তাছাড়া উন্নত দেশগুলো জলবায়ু ইস্যুতে পুরনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে তাতে নজর থাকবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা খুবই আশাবাদী। আশা করছি, এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ু ইস্যুতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাব। এ সম্মেলন নিয়ে আমরা আশাবাদী এজন্য যে, এবার এটার আয়োজন করছে ব্রিটিশরা। প্রথমত, তারা (ব্রিটিশ) জলবাযু নিয়ে খুব সংবেদনশীল। দ্বিতীয়ত, বাইডেন প্রশাসন সেখানে থাকছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর পৃথিবী চায়। সেজন্য আমাদের চাওয়া বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা। প্রত্যেক দূষণকারী দেশকে অবশ্যই কার্যকর এনডিসি দিতে হবে। প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু তহবিলের জন্য উন্নত দেশগুলোর বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে। সেই অর্থ থেকে আমরা অভিযোজন ও প্রশমনে ৫০:৫০ কাজে লাগাতে চাই। জলবায়ুর প্রভাবে যারা উদ্বাস্তু হচ্ছে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা অধিক পরিমাণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি চাই, সবুজ প্রযুক্তি চাই; উন্নত দেশগুলোকে এগুলোতে সহযোগিতা করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চীনের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপরই ভারত ৮৭ বিলিয়ন, জাপান ৮৩ বিলিয়ন এবং দক্ষিণ কোরিয়া ২৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেজাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) বার্ষিক প্রতিবেদন

ড. মোমেন বলেন, ‘সিভিএফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমরা উন্নয়শীল দেশগুলোর জন্য আরও বিনিয়োগ চাই। আমাদের আশা কপ-২৬ এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সেটা খুব দ্রুতই নেবে। আগামীকাল নয়, আজই নিতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘পৃথিবীতে যেসব দেশ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পড়ে না। কিন্তু পৃথিবীতে যেসব দেশ জলবায়ুর প্রভাবের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী হিসেবে বাংলাদেশকে এক নম্বরে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থান, উপকূলীয় অঞ্চলের অবস্থান বিশেষ করে নদীমাতৃকতা আমাদের দুর্বলতা (ভালনারেবিলিটি) আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা যদি উন্নত রাষ্ট্র হতাম জলবায়ু পরিবর্তনের এ প্রভাব সহজেই ওভারকাম (অতিক্রম) করতে পারতাম। ইতোমধ্যে সব ক্ষেত্রেই জলবায়ুর প্রভাব বাংলাদেশকে আক্রান্ত করে ফেলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সম্মেলন আমাদের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। এসব সম্মেলনে আমাদের ক্ষতিপূরণ বা দাবিদাওয়াগুলো বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু নেতৃত্বে জোরালো ভূমিকা পালন করছেন। উন্নত দেশগুলো দূষণ করছে। তারা কথা দিয়েছে উন্নয়শীল দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেবে। প্রধানমন্ত্রী কপ সম্মেলনে এটা জোরালোভাবে তুলে ধরবেন। সম্মেলন থেকে নতুন কী সিদ্ধান্ত আসে, সেখানে সবার চোখ থাকবে।’

কপ-২৬ এ যাওয়ার আগে ইইউয়ের সহযোগিতা চায় ঢাকা।  গত ১৭ অক্টোবর ইইউভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সাক্ষাৎ

জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৯৫ সালে শুরু হয় কপ সম্মেলন। ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিতে কপের জলবায়ু সম্মেলনে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ইস্যুটি প্রথমবারের মতো সামনে আসে। এবার কপ-২৬ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরবর্তী তথা আগামী বছর কপ-২৭ সম্মেলন হবে আফ্রিকার দেশ মিসরে। ২৮মত কপ অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ায়, এতে দুটো দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম প্রস্তাবনায় রয়েছে। যেকোনো একটি দেশ এশিয়ার হয়ে কপ-২৮ সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব পাবে।

এ সম্মেলন আমাদের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু নেতৃত্বে জোরালো ভূমিকা পালন করছেন। উন্নত দেশগুলো দূষণ করছে। তারা কথা দিয়েছে উন্নয়শীল দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেবে। প্রধানমন্ত্রী কপ সম্মেলনে এটা জোরালোভাবে তুলে ধরবেন। সম্মেলন থেকে নতুন কী সিদ্ধান্ত আসে, সেখানে সবার চোখ থাকবেক্যাপস প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজওয়ান হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘আমরা কপ সম্মেলনে যাচ্ছি এটা ভালো কথা। নিজেদের দাবিদাওয়া তুলে ধরব। আমরা আমাদের যেসব দাবি তুলব সেটা উন্নত দেশগুলো শুনতে পারে, নাও পারে। এজন্য আমাদের আগে নিজেদের অবস্থানের পরিবর্তন করতে হবে। আমরা বলছি, নিজেরা দূষণ কম করছি; তাই বলে এটা কি পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে না? পৃথিবী ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে এ প্রভাব সবার ওপর পড়ছে। এর আগেও অনেক সম্মেলন হয়েছে, সেগুলো যে খুব একটা ফলপ্রসূ হয়েছে সেটা কিন্তু না। এজন্য আগে নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে, তখন বিশ্ব আমাদের কথা শুনবে। আমাদের উচ্চতর শিক্ষাকে টেকনিক্যাল এডুকেশনে কনভার্ট করতে হবে। এতে করে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অমাদের লোকজন থাকবে, তারা দেশের কথা তুলে ধরবে। তখন বিভিন্ন ফোরামের সঙ্গে এক হয়ে আমরা চাপ সৃষ্টি করতে পারব। আমরা বলতে পারব, তোমাদের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

ঢাকা-গ্লাসগো ডিকলারেশন

জলবায়ু ঝুঁকি ফোরাম (সিভিএফ) কপ-২৬-এর ফাঁকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে আগামী ২ নভেম্বর একটি  উচ্চপর্যায়ের ইভেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে সিভিএফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নেতৃত্বে দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সিভিএফের ৪৮টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। উচ্চপর্যায়ের এ ইভেন্টে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও কপ-২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মাকে। তবে বরিস জনসন এতে উপস্থিত হবেন না, কিন্তু অলোক শর্মা থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে সিভিএফ প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনা ঘোষণা করবেন ঢাকা-গ্লাসগো ডিকলারেশন। অর্থাৎ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সংস্থাটির একটি রোডম্যাপ বা নিজেদের কথা তুলে ধরবে।

আগে নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে, তখন বিশ্ব আমাদের কথা শুনবে। আমাদের উচ্চতর শিক্ষাকে টেকনিক্যাল এডুকেশনে কনভার্ট করতে হবে। এতে করে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অমাদের লোকজন থাকবে, তারা দেশের কথা তুলে ধরবে। তখন বিভিন্ন ফোরামের সঙ্গে এক হয়ে আমরা চাপ সৃষ্টি করতে পারব। আমরা বলতে পারব, তোমাদের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিড. রেজওয়ান হোসেন ভূইয়া, অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাবি

গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের বাড়ছে তাপমাত্রা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট 

লক্ষ্য অর্জনে ইইউকে পাশে চায় বাংলাদেশ

গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলনে নিজেদের যেসব দাবিদাওয়া তুলে ধরবে বাংলাদেশ সেগুলো যেন সফল হয় তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) পাশে চায় ঢাকা। এ নিয়ে সম্মেলনের ১৩ দিন আগে গত ১৭ অক্টোবর ঢাকায় নিযুক্ত ইইউভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা কপ-২৬ এ যাওয়ার আগে ইইউয়ের সহযোগিতা চেয়েছি। তাদের বলেছি, আমাদের সমর্থন দিতে। রাষ্ট্রদূতরা জানান, তারা নিজ নিজ দেশে আমাদের বার্তা পৌঁছে দেবেন। এছাড়া তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের সঙ্গে কাজ করতে রাজি আছেন।’

সম্মেলন শুরুর আগেই সফলতা নিয়ে প্রশ্ন

কপ-২৬ সম্মেলন সফল হবে কি হবে না— এ নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন চলে এসেছে। সেটা তুলেছেন খোদ আয়োজক দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সোমবার কপ-সম্মেলন নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটি খুবই কঠিন একটা শীর্ষ সম্মেলন। আমি এটা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা যেসব চুক্তি চাই, সেগুলো না–ও পেতে পারি। আমাদের যতটা অগ্রগতি দরকার, ততটা অর্জিত হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পেছনে কারণও রয়েছে। কেননা, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানিয়েছেন, তিনি সম্মেলনে অংশ নেবেন না। অথচ তার দেশ চীন বর্তমানে এক নম্বর কার্বন নিঃসরণকারী দেশ। তবে চীন ইতোমধ্যে বলেছে, দেশের বাইরে তারা আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বানাবে না। বেশি পরিমাণে কার্বন নিঃসরণকারীদের তালিকায় থাকা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও জানিয়েছেন, করোনা মহামারির কারণে তিনি গ্লাসগো সম্মেলনে যাবেন না। তবে কার্বন নিঃসরণ বন্ধে তিনি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন। 

এদিকে, মঙ্গলবার সম্মেলনের চার দিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কপ-২৬ সম্মেলন নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসনের সঙ্গে আলাপ করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টুইটে এ তথ্য জানিয়েছেন। টুইটে জনসন লিখেছেন, কপ-২৬ সম্মেলন নিয়ে ব্রিটেনের প্রস্তুতি নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। 

এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও সম্মেলনে যেতে রাজি ছিলেন না। পরবর্তীতে তিনি তার মতের পরিবর্তন করেন। মরিসন যাচ্ছেন কপে।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জন্য জলবায়ুর প্রভাব দায়ী

ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের দায় রয়েছে, বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ার পেছনেও দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক এই প্রভাব আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।

গ্রিন হাউস নিঃসরণে দূষণ যেভাবে হচ্ছে তাতে চলমান শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২.৭ ডিগ্রি সে. বাড়তে পারে, বলছে জাতিসংঘ 

সম্প্রতি এক অয়েবিনারে এ গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে ফলে বাংলাদেশে প্রকৃতিতে যে ঋতু বৈচিত্র্য তা লোপ পাচ্ছে। এক ঋতুর সঙ্গে আরেক ঋতুর যে পার্থক্য তা মুছে যাচ্ছে। আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বাড়ছে। এতে শহর এলাকায় ডেঙ্গুর মতো বাহকনির্ভর রোগের প্রকোপ বাড়ছে। ভবিষ্যতে রাজধানী শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জলবায়ু প্রতিবেদন পাল্টে ফেলতে ধনী দেশগুলোর তদবিরের তথ্য ফাঁস

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় জাতিসংঘের তৈরি গুরুত্বপূর্ণ এক বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন কীভাবে পাল্টে ফেলার চেষ্টা করেছিল; সে বিষয়ে বিশাল নথিপত্র ফাঁস হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির হাতে আসা সেই নথিতে দেখা যায়, যেসব দেশ জলবায়ু সংক্রান্ত জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন বদলে ফেলতে তদবির চালিয়েছিলেন; তাদের মধ্যে আছে সৌদি আরব, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশও।

এমনকি এসব দেশ জাতিসংঘকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার সিদ্ধান্তও বদলে ফেলার আহ্বান জানিয়েছিল। ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে দেওয়া অধিক আর্থিক সহায়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল বিশ্বের কিছু ধনী দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা সংক্রান্ত জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন বদলে ফেলতে ধনী দেশগুলোর এমন ‘তদবির’ আগামী নভেম্বরের জলবায়ু সম্মেলন কপ–২৬ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

জাতিসংঘের রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ চেহারা

গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে দূষণ যেভাবে হচ্ছে তাতে চলমান শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। গতকাল মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) এক রিপোর্টে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি ।

প্রতিবেদনে জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপদের কারণে মোট বার্ষিক গড় ক্ষয়ক্ষতির তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে। ডব্লিউএমও বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চীনের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপরই ভারত ৮৭ বিলিয়ন, জাপান ৮৩ বিলিয়ন এবং দক্ষিণ কোরিয়া ২৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।