• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মার্চে ডিএনসিসি’র উপনির্বাচন! আনিসুলের যোগ্য উত্তরসূরীর খোঁজে…

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯  

প্রথমবারের মতো বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) উত্তর অংশের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্যবসায়ী ঘরানার ব্যক্তিত্ব প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। ২০১৭ সালের নভেম্বরের একেবারে শেষে ৬৫ বছর বয়সী আনিসুলের অকাল প্রয়াণের আগে মাত্র আড়াই বছরের ক্ষমতায় দেখিয়ে দিয়েছেন উন্নয়নের জোয়ার কীভাবে বইয়ে দেয়া যায়।

২০১৫ সালের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী আনিসুল হক বহুল কাঙ্খিত তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও দূতাবাস সংলগ্ন ফুটপাথ দখলমুক্ত করার মতো বেশ কিছু কাজের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন জনসেবার ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কোনো কঠিন কাজও সহজে সমাধান করা সম্ভব। জীবদ্দশায় বরাবরই তিনি জানিয়েছেন যে, মেয়র হিসেবে দেশের মানুষের জন্য তিনি যা কিছুই করছেন তার পিছনে সব থেকে বড় সহায়তা হলো বর্তমান সরকার, তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান বিষয়টি।

আনিসুলের বিদায়ের পর দেখতে প্রায় দেড় বছর ছুঁতে চললো মেয়র শূন্য ঢাকা উত্তর। গত বছর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিএনসিসির উপনির্বাচনের সময় ঘোষণা করলেও আদালতের এক রায়ে স্থগিত হয়ে যায় সেটা।
ডিসিসি উত্তরের ওই নির্বাচনে আ.লীগ সরকার আনিসুলের উত্তরসূরী হিসেবে পুনরায় ব্যবসায়ী ঘরণার মানুষকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়। ব্যবসায়ের খাতিরে সেই মনোনিত ব্যক্তি আতিকুল ইসলামও বেশ কিছুটা সময় আনিসুলের সান্নিধ্যে ছিলেন। তার নির্বাচনী আশ্বাসেও ছিল দেশকে নিয়ে আনিসুলের অধরা স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার।

গত বুধবার ইসির প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা জানিয়েছেন, শীঘ্রই ডিএনসিসি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী মার্চে শুরুতে আয়োজিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাঝেই হয়তো সম্পন্ন হতে পারে ডিএনসিসির নির্বাচন।
সিইসির এমন বক্তব্যের পর থেকেই জনগণের মাঝে নতুন করে আশার আলো সঞ্চার হচ্ছে। জনগণের দুর্ভোগ কমানোর জন্য মেয়র আনিসুলের করা সেই সকল স্বপ্নের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের আশা দেখছে আতিকুলকে ঘিরে। কারণ একমাত্র আতিকুল ইসলামই সেই ব্যক্তি যিনি আনিসুলের খুব কাছের মানুষের একজন। এমনকি তার নির্বাচনী ইশতেহারেও প্রাধান্য পেয়েছিল আনিসুল হকের পরিকল্পনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের। যা অন্য কোনও দলের মনোনীত প্রার্থীদের বক্তব্যে ওঠে আসেনি।
এদিকে ডিসিসি উত্তরের উপনির্বাচন নিয়ে সিইসি জানান, ‘ডিএনসিসি নির্বাচনের ব্যাপারে কমিশনারদের সঙ্গে বসবো। তবে উপজেলা নির্বাচনের ফিল্ডেই এটা হয়ে যাবে। এতে উপজেলা নির্বাচনের কোনো প্রভাব পড়বে না।’

উল্লেখ্য, আসছে মার্চ মাসে উপজেলা নির্বাচনে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত মহিলা আসন, ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সঙ্গে এবার নতুন করে যুক্ত হলো ডিএনসিসির উপনির্বাচন।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য ২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন ধার্য রেখে ৯ জানুয়ারি তফসিল দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ওই তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং তফসিলের কার্যকারিতার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। তাদের আবেদনের ওপর শুনানি করে গতবছর ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্বাচন ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়। ওই নির্বাচনের তফসিল কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করা হয়। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আপিল বিভাগে গেলে সেখানে হাইকোর্টের দেয়া রুল ‘দ্রুত নিষ্পত্তির’ আদেশ আসে। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার বিষয়টি রুল শুনানির জন্য বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে ওঠে। কিন্তু রিটকারী বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কেউ আদালতে না থাকায় আদালত রুল খারিজ করে দেয়।

আনিসুল হকের মৃত্যুতে মেয়র পদ শূন্য পদটির ও সিটির সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে আর কোনো বাধা নেই বলেই মনে করছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানিয়েছে, রিট খারিজের রায়ের পর ভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি রয়েছে। রায়ের কপি ইসিতে আসার পর এ বিষয়ে কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। খুব শিগগিরই এ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। মার্চে শুরু হওয়া উপজেলা নির্বাচনের মাঝেই এটি সেরে ফেলা হবে।
এর আগে আগামী মাসের (ফেব্রুয়ারি) প্রথম সপ্তাহে তফসিল দিয়ে মার্চের প্রথম থেকে পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচন করা হবে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।