• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পুরান কাপড়ের যুগ শেষ ॥ দেশের মর্যাদা সুরক্ষায় বন্ধ হচ্ছে আমদানি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২২  

বাংলাদেশ যখন ব্যবহৃত পুরনো পোশাক আমদানি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে, তখন পাকিস্তানে পুরনো পোশাক কেনার পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভের পর বাংলাদেশ বিদেশীদের ব্যবহার করা বা পুরনো পোশাক আমদানি বা স্থানীয় বাজারে কেনাবেচা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমদানি অর্ধেক করে দিয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে তা শূন্যে নামিয়ে আনতে চাইছে সরকার। জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা সুরক্ষিত রাখতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের মানুষও এখন আর আগের মতো ব্যবহৃত পুরনো কাপড় ব্যবহার করছে না। ‘সেকেন্ড হ্যান্ড, লান্ডি’ নিক্সন মার্কেট নামে ডাকা বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পুরনো কাপড়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ এখন কমে গেছে। আগে বাংলাদেশে কয়েকশ’ কোটি টাকার পুরনো কাপড় আমদানি হতো। এখন সেটি কয়েক কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এসব পণ্য আমদানিকারকের সংখ্যাও ৬ হাজার থেকে কমে ৩ হাজারে নেমে এসেছে। একমাত্র শীত মৌসুম ছাড়া অন্য কোন মৌসুমে এখন আর বাংলাদেশে পুরনো কাপড় মানুষ ক্রয় করে না। অথচ ঠিক এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানে। মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্যের কারণে গত বছরে (২০২১ সাল) প্রায় দ্বিগুণ সেকেন্ড হ্যান্ড বা ব্যবহৃত পোশাক আমদানি করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুল জব্বার খান বলছেন, ‘পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ আমদানি করা ব্যবহৃত পোশাক পরতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ নতুন পোশাক কেনার মতো অর্থ তাদের হাতে নেই।’

এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এই পাকিস্তানের কাছ থেকেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বাঙালীদের প্রতি পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ বঞ্চনা ও বৈষম্যের কারণে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ফসল বাংলাদেশ। সেই দেশটি এ বছর তার বিজয়ের ৫০ বছর উদ্যাপন করেছে। এই ৫০ বছরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি দরিদ্র দেশের ক্লাব স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও একাত্তরের যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বহু সূচকেই ভঙ্গুর অবস্থায় চলে গেছে। অথচ সত্তরের দশকের বিধ্বস্ত অবস্থার ধাক্কা কাটিয়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে কেবল উন্নতিই করেছে। বিশেষ করে সামরিক শাসনের অবসানের পর গত তিন দশকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বেশ লক্ষণীয়। জাতিসংঘসহ বহুপক্ষীয় উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও খ্যাতিমান সাংবাদিকদের স্বীকৃতিতে তা উঠে এসেছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সব গুরুত্বপূর্ণ সূচকেই বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে।

পাকিস্তান ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্সের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০২০-২১) সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক আমদানি ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ওই সময় ৩০ কোটি ৯৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার মূল্যের ৭ লাখ ৩২ হাজার ৬২৩ টন ওজনের পুরনো পোশাক পাকিস্তানে আসে। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে এ বৃদ্ধি ৮৩.৪৩ শতাংশ বেশি।

আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৯৯ টন ওজনের পোশাক আমদানি করে পাকিস্তান। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এ বৃদ্ধি ২৮৩ শতাংশ বেশি।

এছাড়া জুলাই-আগস্টে সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাকের পেছনে ৭৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে পাকিস্তান। গত বছরের চেয়ে এ বৃদ্ধি ২৭৩.৪ শতাংশ বেশি। বর্তমানে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ।

পাকিস্তান সেকেন্ড হ্যান্ড ক্লথিং মার্চেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ উসমান ফারুকি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ায় দেশের মানুষের মধ্যে সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক পরা বেড়েছে। এর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে এসব পোশাক আমদানি।’

তিনি বলেন, ‘যারা আগে কখনও সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক পরেননি, তারা এখন ব্যবহৃত পোশাক কিনছেন। চরম প্রতিকূল আবহাওয়া এবং দারিদ্র্যের কারণে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের মানুষ এসব পোশাক কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।’

মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন ও কোরিয়া থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক আমদানি করে পাকিস্তান।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, পুরনো পোশাক কেনার অন্যতম কারণ দারিদ্র্য। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকসের তথ্যানুযায়ী, প্রায় ৩৯ শতাংশ পাকিস্তানী দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুল জব্বার খান বলছেন, ‘বিদ্যমান দারিদ্র্যের কারণে মানুষকে খাদ্য ও বস্ত্রের মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের জনগোষ্ঠীর প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ আমদানি করা ব্যবহৃত পোশাক পরতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ নতুন পোশাক কেনার মতো অর্থ তাদের হাতে নেই।’

পাকিস্তানী আমদানিকারকরা বলছেন, আমদানি করা কম্বল, জ্যাকেটসহ অন্যান্য দৈনন্দিন পোশাক দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশের চাহিদা পূরণ করছে। পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর করাচীর ব্যবসায়ী ইসমাইল খান বলছেন, ‘সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক বিক্রি করা মার্কেটে একটি জিনস ১০০ পাকিস্তানী রুপীতে বিক্রি হচ্ছে। আর অন্যান্য মার্কেটে নতুন জিনসের দাম ৯০০ রুপী।’

করাচীর এমএ জিন্নাহ রোড এলাকায় শুরুতে ব্যবহৃত পোশাক বিক্রি করা হলেও এখন করাচীর অন্যান্য এলাকায়ও এসব পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি পাকিস্তানজুড়ে অন্যান্য শহরেও সেকেন্ড হ্যান্ড কাপড় কিনছেন মানুষ।

এর ঠিক বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে। পুরনো কাপড় আমদানি করে দেশের বাজারে তা বিক্রি করার ঘটনাটিকে দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর মনে করছে বাংলাদেশ সরকার। তাই এ বিষয়টি ঠেকাতে আমদানিনীতি আদেশ সংশোধন করা হচ্ছে। ফলে পুরাতন কাপড় আমদানি ও বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি তিন বছর পর পর দেশে একটি নতুন আমদানিনীতি আদেশ জারি করে। তবে ২০১৮-২১ সালে আমদানিনীতি জারি করা হয়নি। সবশেষ ‘আমদানিনীতি আদেশ ২০১৫-১৮’ এখন পর্যন্ত আমদানির ক্ষেত্রে বলবৎ আছে। ওই নীতিতে দেশে পুরনো কাপড় আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছে। এই নীতির সুযোগে কয়েক হাজার আমদানিকারক বিদেশ থেকে নামমাত্র মূল্যে পরিত্যক্ত সুয়েটার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেট, ট্রাউজার, শার্টসহ আরও কিছু পণ্য আমদানি করে আসছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, গত এক যুগে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। স্থানীয় শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। বড় হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার। এতে কর্মসংস্থান, সার্বিক পণ্য ও সেবা উৎপাদন, মাথাপিছু আয় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে।

এসবের প্রভাবে ২০১৫ সালেই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি দিয়েছে। এর তিন বছর পর ২০১৮ সালে জাতিসংঘ থেকে আসে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনের ঘোষণা। আর ২০২১ সালের শেষদিকে এসে চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এখন এর সমাপ্তি ঘটবে ২০২৬ সালে।

একসময় বিদেশী ঋণনির্ভর ছিল বাংলাদেশ। নেয়া হতো অনুদানও। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। ঋণনির্ভর সেই দেশ এখন বৈদেশিক ঋণও দিচ্ছে অন্য দেশকে। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পও নিজস্ব অর্থায়নেই শেষ হচ্ছে। তাছাড়া উন্নয়নের প্রয়োজনে যে বৈদেশিক ঋণ নেয়া হচ্ছে, তা পরিশোধের ক্রেডিট রেটিংয়েও বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। এ অবস্থায় পুরনো কাপড় আমদানি দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর।

তাছাড়া বাংলাদেশে পুরনো কাপড় ব্যবহার এখন অনেক কম হচ্ছে। নতুন কাপড় সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় মানুষের এখন আর পুরনো কাপড়ের প্রতি আগ্রহ নেই। শুধু শীতকালেই কিছু পুরনো গরম কাপড়ের ব্যবসা হয়। আর সারা বছর ধরে এ ব্যবসা তেমন একটি থাকে না। এর অন্যতম কারণ দেশে গার্মেন্টস শিল্পের বিপ্লব। রফতানিমুখী গার্মেস্টস শিল্পের বিপ্লবের কারণে দেশের স্থানীয় ভিত্তিক গার্মেন্টস শিল্পও বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। অত্যন্ত অল্প দামে মানুষ নতুন কাপড় পাচ্ছে। ফলে পুরনো কাপড়ের চাহিদা একেবারেই কমে গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বর্তমানে নতুন ‘আমদানিনীতি আদেশ ২০২১-২৪’ প্রণয়ন নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে এই খসড়া আমদানিনীতি প্রণয়ন এবং এর ওপর অংশীজনদের মতামত নেয়ার কাজও শেষ করে আনা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে ‘আমদানিনীতি আদেশ ২০২১-২৪’ অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। এরপরই খসড়াটি গেজেট আকারে জারি করা হবে।

আগের নীতি অনুযায়ী একজন আমদানিকারক পুরনো কম্বল আমদানি করতে পারত সর্বোচ্চ দুই টন। নতুন নিয়মে তা অর্ধেক কমিয়ে এক টনে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এভাবে সুয়েটার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেট (পুরুষ), পুরুষের ট্রাউজার আগে একজন আমদানিকারক সর্বোচ্চ ৬ টন করে আমদানি করতে পারতেন। নতুন নিয়মে সেটি আমদানি করা যাবে সর্বোচ্চ ৩ টন করে। এছাড়া সিনথেটিক ব্র্যান্ডেড কাপড়ের শার্ট আমদানি করা যাবে দুই টনের জায়গায় সর্বোচ্চ এক টন।

এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিমত হলো, দেশের প্রয়োজনে কয়েক যুগ ধরে পুরনো কাপড় আমদানি হয়ে আসছে। এখন সময়ের বাস্তবতায় এবং দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন, মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কারণে সেই প্রবণতা অনেকটাই কমে গেছে।

আগে দেশে কয়েকশ’ কোটি টাকার পুরনো কাপড় আমদানি হতো। এখন সেটি কয়েক কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সারাদেশে এসব পণ্য আমদানিকারকের সংখ্যাও ৬ থেকে কমে ৩ হাজারে নেমে এসেছে। এর কারণ বাংলাদেশ এখন নতুন কাপড় রফতানিতেই বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। তাছাড়া দেশেই এখন নতুন নতুন শিল্প গড়ে ওঠায় অভ্যন্তরীণ পোশাকের চাহিদার সবটাই পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। আবার বিত্তবান ভোক্তার ক্রমবর্ধমান রুচি ও চাহিদা মেটাতে দেশে নতুন পোশাকও আমদানি হচ্ছে। এসব কারণে পুরনো কাপড় আমদানির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে।

নানা অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ বেশ মর্যাদার জায়গায় চলে গেছে। দেশ এখন স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণের অপেক্ষায়। এ পরিস্থিতিতে পুরনো কাপড় আমদানি বিদেশে বাংলাদেশের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। তাই নতুন আমদানিনীতি আদেশ ২০২১-২৪ এ প্রদত্ত ধারায় সংশোধন করে পুরনো কাপড় আমদানির পথ সংকুচিত করা হচ্ছে, যা ২০২৬ সালে শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্তভাবে পদার্পণের পর। অর্থাৎ পরবর্তী আমদানিনীতি আদেশ ২০২৪-২৭-এ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে পুরনো কাপড় আমদানি।

আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস এ্যান্ড সিকিউরিটি (ইফ্রাস) জানাচ্ছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি ধনী ছিল পাকিস্তান। অন্যদিকে ৫০ বছর পর এসে পাকিস্তানের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২৭১ গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বাধীনতার পর মাত্র দুই দশকের মধ্যেই অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে গত ২০ বছরের বেশি সময়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৫০০ শতাংশ, যা পাকিস্তানের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি।

টরেন্টোভিত্তিক বৈশ্বিক এই থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান বলছে, তুলা উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও বাংলাদেশে এখন হাজার হাজার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রয়েছে। মাত্র কয়েক মিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানির পর পোশাক তৈরি করে ৩ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রফতানি করছে বাংলাদেশ।

বিপরীতে তুলা উৎপাদনকারী দেশ হয়েও গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল পণ্য রফতানি বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। এই খাতে দেশটির রফতানি এক হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও কম। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে পাকিস্তান এখন তুলা আমদানিও করে থাকে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০১৫ সালের হিসাবে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী বা ৩ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ ছিল মধ্যবিত্ত। গবেষণায় বলা হয়েছিল, এই মধ্যবিত্তের সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশে উন্নীত হবে।

বাজার ও চাহিদার দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসালটিং গ্রুপও (বিসিজি) ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সামর্থ্য বাড়ছে। প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে যুক্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে সচ্ছল বা উচ্চবিত্তের সংখ্যাও বাড়ছে সমানতালে।