• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দুর্নীতির দায়ে চাকুরীচ্যুত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল মোঃ শহীদ উদ্দিন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০১৯  

গত ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখ যুক্তরাজ্যের ION TVতে সাক্ষাতকার প্রদানকারী নানা অভিযোগে চাকরীচ্যুত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল মোঃ শহীদ উদ্দিন খান নিজের চাকুরী জীবন নিয়ে সাফাই গেয়েছেন। চাকুরী জীবনে কোন লাল দাগতো দূরের কথা, এমনকি কোন ওয়ার্নিং পর্যন্ত নেই উল্লেখ করে নিজেকে জুনিয়র অফিসারগণের নিকট অনেক জনপ্রিয় ও একজন ব্রাইট অফিসার হিসেবে দাবি করেন।

এতদপ্রেক্ষিতে বিডি পলিটিক্স এর পাঠকদের কথা বিবেচনা করে নিরপেক্ষ তথ্যানুসন্ধানে উক্ত সাফাই গাওয়া চাকরীচ্যুত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা গুরুতর অনিয়মের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যা সুপ্রিয় পাঠকদের কথা বিবেচনা করে কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব আকারে প্রকাশ করা হবে।

প্রথমেই উক্ত চাকরীচ্যুত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে জানা যায় যে, উক্ত কর্মকর্তা রাজশাহী সেক্টরের অধীনস্থ তৎকালীন ৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কর্মরত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০০৪ সালের ২৮ নভেম্বর হতে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ পর্যন্ত তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর, পিলখানা, ঢাকায় একটি কোর্ট মার্শাল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কোর্ট মার্শালে বিভিন্ন অনিয়মের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সর্বমোট ২৮টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। অভিযোগসমূহের প্রেক্ষিতে উক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক নিজেকে ব্রাইট ও কালিমা মুক্ত অফিসার দাবি করা নিছক সত্যের অপলাপ ছাড়া কিছু নয় বলে প্রতীয়মান। তার বিরুদ্ধে সরেজমিনে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত কিছু তথ্য পাঠকদের বিবেচনার জন্য নিচে উল্লেখ করা হলো।

তৎকালীন লে: কর্নেল মোঃ শহীদ উদ্দিন খান,  গত ১৯ জুলাই ২০০১ হতে ২৪ জানুয়ারি ২০০২ পর্যন্ত ১৭ ইস্ট বেঙ্গল, চট্টগ্রাম এর অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন (পরবর্তীতে উক্ত কর্মকর্তা কর্নেল পদবীতে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রাপ্ত হন)। ১৭ ইস্ট বেঙ্গল ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের অধীনস্থ একটি ইউনিট ছিল। উক্ত কর্মকর্তা ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম -১৩ ও চট্টগ্রাম-১৪ আসনের নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। নির্বাচন কালীন সময়ে বিএনপি দলীয় নেতা কর্নেল অলি আহমেদ এর নির্দেশে এবং উক্ত কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ (বর্তমানে ভারতের শিলং এ অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক) এর যোগসাজশে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করতঃ কর্নেল অলিকে যেকোন মূল্যে বিজয়ী করার নীলনকশা প্রণয়ন করেন। এ প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ব্রিগেড কমান্ডারের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে উক্ত নির্বাচনী এলাকা হতে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযান পরিচালনা করেন এবং বিভিন্ন ভুয়া অস্ত্র মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে হেনস্থা করতেন। এ বিষয়টি অবগত হয়ে তৎকালীন ব্রিগেড কমান্ডার ভুয়া মামলায় অভিযানের বিষয়ে উক্ত অফিসারকে নিষেধ করেন এবং বিষয়টি তৎকালীন জিওসি, ২৪ পদাতিক ডিভিশন মহোদয়কে অবহিত করেন। একপর্যায়ে লেঃ কর্নেল শহীদের অপ তৎপরতায় বিষয়টি আরও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে গড়ায় এবং জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাছাড়া, উক্ত কর্মকর্তা সেনা নিয়ম ভঙ্গ করে নির্বাচনের দিন বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাতকার প্রদান করেন।

পরবর্তীতে তিনি ১৭ ইস্ট বেঙ্গল হতে ১৫ মার্চ ২০০২ তারিখে জাতিসংঘ মিশন মনুস্কো কঙ্গোতে গমন করেন। মাত্র ২ মাস পর ২০ মে ২০০২ তারিখে দেশে ছুটিতে আসেন এবং মিথ্যা শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মিশন হতে নাম প্রত্যাহার করান এবং অধিনায়ক হিসেবে ৩০ রাইফেল ব্যাটালিয়নে গমন করেন। পরবর্তীতে, তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নে আন্তঃ বদলি করা হয়। ৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নে যোগদানের অব্যবহিত পরেই ৩-৬ জুন ২০০৪ তারিখের মধ্যে তৎকালীন ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, ডিজি বিডিআর, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সামরিক সচিব (এমএসপিএম) ও বিডিআর এর পরিচালক প্রশিক্ষণ (ডিওটি) এর বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নিকট বেনামী পত্রের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি উচ্চ পদস্থ সামরিক ও অসামরিক কার্যালয়ে এর অনুলিপি প্রদান করে সেনা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেন এবং সুস্পষ্টভাবে সেনা আইন লঙ্ঘন করেন।

তাছাড়া, গত ৫ জুন ২০০৪ তারিখে ৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের নায়েক মোঃ আবুল কালামকে বেনামী অভিযোগসমূহের ড্রাফট তৈরি করানোর জন্য তিনি তার সরকারী বাসস্থানে ডেকে নিয়ে ৪০০০.০০ (চার হাজার টাকা) এবং একই ব্যাটালিয়নের ল্যান্স নায়েক কাজী আবুল হোসেনকে ড্রাফট ও বিভিন্ন ঠিকানায় বেনামী পত্রগুলো প্রেরণ করার জন্য ৬০০০.০০ (ছয় হাজার টাকা) প্রদান করেন। যাতে উক্ত ঘটনা ফাঁস না করা হয় সেজন্য তাদের চাকুরী-চ্যুতি ও জেল-জুলুমের ভয় দেখানো হয়। তাছাড়া, উক্ত ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নষ্ট করে ফেলেন। উক্ত অফিসারের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল চলাকালীন বর্ণিত বিডিআর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। তাছাড়া, উল্লেখিত বিডিআর সদস্যদের সাথে উক্ত প্রতিবেদকের সরেজমিনে আলাপ চারিতায় উক্ত ঘটনায় চাকরীচ্যুত সেনা কর্মকর্তার জড়িত থাকাসহ নৈতিক স্খলন ও নানা অভিযোগের বিষয়ে নিরেট তথ্য পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত আরো কতিপয় গুরুতর অনিয়ম সম্পর্কে পরবর্তী পর্বে আপনাদের অবহিত করব বলে আশা রাখি।