• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রশ্নফাঁস রোধে পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টার বন্ধসহ নানান উদ্যোগ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০১৯  

দক্ষ মেধা গড়ে তুলতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস রোধে এবার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যারমধ্যে অন্যতম হলো পরীক্ষার কেন্দ্রে পাঠানো প্রশ্নপত্র অ্যালুমিনিয়ামের প্যাকেটে করে পাঠানোর ব্যবস্থা। পাশাপাশি পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই (রোববার) একসমাসের জন্য দেশের সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।– এমনটিই জানিয়েছেন নতুন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বিগত কয়েক বছর ধরে কোচিং শিক্ষকদের সাথে আতাত করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল অর্থের বিনিময়ে সব স্তরের প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রতি কঠোর হলে শেষে দেখা যায় যে বিশাল একটি গোষ্ঠী নিজস্ব নেটওয়ার্ক গড়ে প্রশ্নফাঁসের কাজ করে যাচ্ছে।

শিক্ষকদের মতে, মূলত অতীতে যতটা না প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি গুজব রটনার ঘটনা ঘটেছে। ফলে ২০১১ সালের পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি কোমল মতি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতির কারণ হিসেবে দাঁড়ায়।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী বা গুজব রটনাকারীদের কোনোভাবে সনাক্ত করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পাঠদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৮ পরিচালিত বেশ কয়েকটি অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে চক্রের অনেকেই আটক হয়। তাদের দেয়া তথ্যমতে প্রকাশ হয় বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রায় সব ধরনের পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের মধ্যে সে সময় এসএসসির তিন দিন আগ থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার।

২০১৮ সালের মতোই পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের রোধ করে সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা নিশ্চিত করতে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সরকার এবার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

গতবারের মতো এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায়ও প্রশ্নফাঁস রোধে কঠোর অবস্থানে থাকবে সরকার। আগামী রোববার (২৭ জানুয়ারি) থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) পর্যন্ত সারা দেশে সব কোচিং সেন্টার এরইমধ্যে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শিক্ষক ও শিক্ষা গবেষকরা মনে করছেন, প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার সময়টাতে কোচিং সেন্টারগুলোকেই আতুঢ় ঘর হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

অনেকসময় দেখা যায় পরীক্ষার কেন্দ্রে নেয়ার সময়ও কিছু অসাধু শিক্ষক কিংবা কর্মকর্তা মোবাইলের ক্যামেরার ক্লিকে অথবা ফটোকপির মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস করে থাকে। তবে এবার সুযোগটি যাতে ওই অসাধু চক্র হাত ছাড়া হয় সে লক্ষ্যে সরকার প্রশ্নফাঁস রোধে বিশেষ ব্যবস্থায় অ্যালুমিনিয়ামের প্যাকেটে করে প্রশ্নপত্র পাঠানো কেন্দ্রে পাঠাবে।

অর্থাৎ, প্রশ্নপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে এবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে বিশেষ নিরাপত্তা খাম তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে এটা নিশ্চিত করবে যে এই (প্রশ্নের) খাম কখনও খোলা হয়নি। পরীক্ষার হলে যখন খোলার কথা, তার আগে খোলা হয়নি- সেটি নিশ্চিত করবে।

পাশাপাশি গতবারের মতো এবারও বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) অংশের উত্তর আগে দিতে হবে। পরে নেওয়া হবে সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশের পরীক্ষা নেয়া হবে। ২০১৭ সালের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তুঙ্গে থাকার সময়টাতে সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশের পরীক্ষা আগে নেয়া হতো এবং এমসিকিউ হতো পরে।

এবারে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি আগের থেকেও কঠোরভাবে দমন করা হবে। যেখানে গোয়েন্দারা তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রাখবে সন্দেহভাজনদের।

দিপু মনি জানান, ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মত ঘটনাগুলো অতীতে ঘটতে দেখেছি, সে সমস্ত জায়গায় তীক্ষ্ণ গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে।

এ বছর চার হাজার ৯৬৪টি কেন্দ্রে ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫১ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পর্যায়ের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেবে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি হবে তত্ত্বীয় পরীক্ষা। আর ২৬ ফেব্রুয়ারি সংগীত বিষয়ের এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চের মধ্যে অন্য বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৩০ মিনিট আগে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে হলে প্রবেশ করতে হবে, এরপর ঢুকতে দেওয়া হবে না। যদি অনিবার্য কারণবশত দেরি হয়, সেক্ষেত্রে তাদের নাম, রোল, প্রবেশের সময়, দেরি হওয়ার কারণসহ সমস্ত কিছু রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে সাথে সাথে শিক্ষা বোর্ডে পাঠাতে হবে।