• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে এমন ভাবনা অমূলক

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২২  

ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও রাজস্ব ঘাটতিজনিত সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কা এখন হাহাকারের নরকে পরিণত হয়েছে। এ থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু শ্রীলঙ্কা নয়; পাকিস্তান, নেপালও গুরুতর অর্থনৈতিক ও রাজস্ব সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলা করছে।

তবে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের সাফল্যগাথা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ব্যাপারে বাংলাদেশ একটা দারুণ নজির তৈরি করেছে। গত ১০ বছরে (২০১০-২০২০) দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অর্থনীতিগুলোর একটি বলে পরিচিতি পেয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে দেশটির জনসংখ্যার বোনাস কাল (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড), তৈরি পোশাক খাতনির্ভর রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স ও স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির কারণে।

বাংলাদেশের এ সাফল্যগাথা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এ কারণে যে, ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়ার পর দেশটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি। ওই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের কারণে দেশটির অবকাঠামো ও শিল্প খাত মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছিল।

একটা গরিব দেশ হিসেবে যাত্রা করে দেশটি মাত্র চার বছরে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে উঠে আসে। আর গত এক দশকের দ্রুত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বদৌলতে দেশটি ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। দেশটি ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। দৈনিক মাথাপিছু আয় ১ দশমিক ৯ মার্কিন ডলার হিসেবে দারিদ্র্য মাপার যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আছে, সে হিসেবে দেশটিতে ১৯৯১ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ; আর ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশে। তা ছাড়া, মানব উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকেও দেশটি ব্যাপক উন্নতি করেছে।

নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান যেখানে অর্থনীতি সামলাতে খাবি খাচ্ছে; বাংলাদেশ সেখানে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটা মডেল স্থাপন করেছে। মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যাপারে বাংলাদেশ চাইলে এখন গর্ব করতে পারে। সেখানে গ্রামাঞ্চলে নগরের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কাজ চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় উড়াল সড়ক দেখা যায়। মেট্রোরেলও খুব শিগগির চালু হচ্ছে। প্রমত্ত পদ্মার ওপর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বিশাল দৈর্ঘ্যের সেতু এখন আর কোনো স্বপ্ন নয়।

ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় সত্ত্বেও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় এখন ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে। আর, শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী আলি সাবরির মতে, শ্রীলঙ্কার আছে মাত্র দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক ভান্ডার, যার মধ্যে আবার মাত্র ৫০ মিলিয়ন ডলার তার হাতে আছে। কাজেই বাংলাদেশ কোনোভাবেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় নয়। এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে পারে- দেশটি তৈরি পোশাকসহ বহু শিল্প ও কৃষিপণ্য রপ্তানি কীভাবে বাড়িয়েছে; একই সঙ্গে কোন প্রক্রিয়ায় এসব খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ টানতে পেরেছে।