• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯  

দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শুক্রবার প্রথমবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ভাষণের শুরুতেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে বিপুলভাবে বিজয়ী করায় দেশবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন; ‘এখন আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ঐক্যের যোগসূত্র হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতি। সরকারের দৃষ্টিতে দলমত-নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিক সমান। আমরা সবার জন্য কাজ করব। আমরা দেশকে নিয়ে যেতে চাই অনন্য উচ্চতায়।’

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন; ‘আপনারা টানা তৃতীয়বার এবং ১৯৯৬ সাল থেকে চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগকে সরকার পরিচালনার ম্যান্ডেট দিয়েছেন। আপনাদের এবারের এই নিরঙ্কুশ সমর্থন আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের এই রায়কে দেশবাসীর সেবা এবং জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার ও সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ বলে মনে করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন; নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে আমি আমার মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আর নবীনদের উদ্যম- এই দুইয়ের সমন্বয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঘোষিত ইশতেহার দেশ গঠনে আগামীর পথনির্দেশক হবে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন; ‘আমি জানি, দুর্নীতি নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে অস্বস্তি রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের নিজেদের শোধরানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা হবে। আমরা তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূল করার উদ্যোগ নিয়েছি। দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। তাই গণমাধ্যমের সহায়তায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির কাজ অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন; আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে ইতিমধ্যে মাদক, জঙ্গি তৎপরতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সফলতা অর্জন করেছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সব ধর্ম-বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সবাই নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে পারবেন।

আ. লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়  দেশবাসীকে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন; আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যে প্রতিশ্রুতি দেই, তা বাস্তবায়ন করি। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম তার অধিকাংশই ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি।

টানা ১০ বছরে সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন; মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ বিস্তার, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশ বিগত দশ বছরে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শুধু এশিয়ার দেশগুলোরই শীর্ষে নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তাই বাংলাদেশকে চেনেন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে। তিনি বলেন; আমাদের এই পথচলা মসৃণ ছিল না। শত প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছি। যার সুফল আজ জনগণ পাচ্ছেন। এ অর্জন শুধু সরকারের নয়, এ অর্জন দেশের প্রতিটি পরিশ্রমী মানুষের। তিনি বলেন; একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ স্লোগান সংবলিত নির্বাচন ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম। ইশতেহার ঘোষণাকালে আমি এর সারাংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আপনারা অনেকেই এই দলিলটি ইতোমধ্যে পড়েছেন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমাদের যেকোন নীতিমালা প্রণয়নে এবং উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে এই ইশতেহারটি নির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন; আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২১.৮ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে যা ২০০৫-৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ছিল ৪১.৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে ১ হাজার ৭৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বলেন; বিএনপি সরকারের ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। যা ৭.৬ গুণ বৃদ্ধি করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমরা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর পরিমাণ ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। যার নব্বই ভাগ বাস্তবায়ন হয় নিজস্ব অর্থায়নে।

এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা ২০২০-২০২১ সালে মুজিব বর্ষ এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদযাপন করব। বাঙালি জাতির এ দুই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা দেশকে আর্থ-সামাজিক খাতে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। আর এর কৌশল হিসেবে আমরা ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন করছি। পাশাপাশি জলবায়ুর ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জনের জন্য আমরা ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ নামে শতবর্ষের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। আমরা এরই মধ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো সম্পৃক্ত করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলমত-নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা কামনা করে তাঁর ভাষণের ইতি টানেন। তিনি বলেন; ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখে যে রায় দিয়েছেন, কথা দিচ্ছি আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব সে আস্থার প্রতিদান দিতে। এ জন্য দলমত-নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব, ইনশা আল্লাহ।’

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের একটি কবিতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন; কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় বলতে চাই-

“যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ

প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,

এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”