• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

সব বৈদ্যুতিক যান এক মডেলের হবে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২৩  

বৈদ্যুতিক যেসব যান বর্তমানে সড়কে চলছে, সেগুলোকে একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ মডেলে রূপান্তর করতে হবে। বৈদ্যুতিক মোটরযান নিবন্ধন ও চলাচল সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালায় এমন বাধ্যবাধকতা থাকছে।নীতিমালায় বৈদ্যুতিক মোটরযান বলতে বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অনিরাপদ যান প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, বিদ্যমান অনিরাপদ ইলেকট্রিক মোটরযান কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিরাপদ মডেলে রূপান্তর করতে হবে। অন্যথায় তা সড়কে চলাচল করতে পারবে না।

বৈদ্যুতিক মোটরযান নিবন্ধন ও চলাচল সংক্রান্ত এই নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাটারিচালিত সাইকেল, রিকশা, রিকশাভ্যান বৈদ্যুতিক যান বলে বিবেচিত হবে না। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ধীরগতির বৈদ্যুতিক মোটরযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকছে। খসড়ায় ধীরগতি বলতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার বেগে চলাচলকারী যানবাহনকে বোঝানো হয়েছে।  নীতিমালায় যানবাহনের বৈদ্যুতিক চার্জের দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। চার্জিং স্টেশন কোথায় ও কতগুলো হবে, তা নির্ধারণ করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগও আলাদা নীতিমালা করছে।

আর কর্তৃপক্ষ, কন্ট্রাক্ট ক্যারিজ, রুট পারমিট, ফিটনেস সার্টিফিকেট, যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি, স্টেজ ক্যারিজ, ইকোনমিক লাইফ, ট্রাস্টি বোর্ড, লাইফটাইম, জয়েন্ট ভেঞ্চারের অর্থ ইত্যাদি সড়ক পরিবহন ২০১৮-এর আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ আছে।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমীন উল্লাহ নুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, তিন চাকার যানের জন্য আলাদা নীতিমালা করা হবে। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খসড়ার সঙ্গে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে উল্লেখ রয়েছে, নীতিমালা প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেওয়া হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে আন্ত মন্ত্রণালয় সভা হয়। সেই সভার মতামতের আলোকে খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়।

১৫ ফেব্রুয়ারি নীতিমালার ওপর বৈদ্যুতিক মোটরযান প্রস্তুতকারী, উৎপাদনকারী, সংযোজনকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, ব্যাটারি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অংশীজন নিয়ে মতবিনিময়সভা হয়। সভার মতামত ও সুপারিশের আলোকে ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বৈদ্যুতিক যান নিয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে কাজ করছেন বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জিয়াউর রহমান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে আমাদের ইলেকট্রিক্যাল যান লাগবে। তবে এসব যান চলার জন্য যেসব অবকাঠামো দরকার, দেশে এখনো সেসব নেই।’

বৈদ্যুতিক যানের উদ্দেশ্য : নীতিমালার ভূমিকায় বলা হচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর মোটরযান থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) ব্যবহারের গুরুত্ব বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিবহন খাত থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩.৪ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড হ্রাস করার অঙ্গীকার করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন খাতে ব্যবহৃত যানবাহনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ইলেকট্রিক মোটরযানে রূপান্তর করতে হবে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর ১২৪ ধারা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ প্রণয়ন করা হলো।

বৈদ্যুতিক যানের সংজ্ঞায় বলা হচ্ছে, এই যানের অর্থ এক বা একাধিক বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে চালিত ভারী অথবা হালকা যেকোনো মোটরযান, যার চালিকাশক্তি ওই মোটরযানে বৈদ্যুতিক চার্জ বা সংযুক্ত রিচার্জেবল ব্যাটারি। বাইসাইকেল বা রিকশা ও রিকশাভ্যান এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

উদ্দেশ্য সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়, বৈদ্যুতিক মোটরযান সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চলাচলের অনুমোদন; মোটরযানের নিবন্ধন পদ্ধতি, ফি, ইকোনমিক লাইফ ইত্যাদি নির্ধারণ; পরিবেশদূষণ রোধ, কার্বন নিঃসরণ ও জীবাশ্ম জ্বালানির নির্ভরতা কমানো।

বৈদ্যুতিক যানের ব্যবস্থাপনা : নীতিমালায় মোটরযানের বৈশিষ্ট্য অংশে বলা হয়েছে, বৈদ্যুতিক মোটরযান শনাক্তকরণের জন্য বডি বা ফ্রেমে আন্তর্জাতিক ভেহিকল শনাক্তকরণ নম্বর (ভিআইএন) কোড অনুযায়ী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ডিজিটের চেসিস নম্বর খোদাই করা থাকতে হবে।

তবে এসব মোটরযানের মোটর নষ্ট বা অকেজো বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেলে তা বদল করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ অনুযায়ী একই ক্ষমতা, গঠন ও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মোটর ব্যবহার করতে হবে।

নিবন্ধন পদ্ধতি : ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের প্রচলিত নিবন্ধন পদ্ধতি অনুযায়ী বৈদ্যুতিক মোটরযানের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিট যেভাবে দেওয়া হচ্ছে, বৈদ্যুতিক যানের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি থাকবে।

বাজারজাতকরণ বা নিবন্ধন গ্রহণ, বিশেষ প্রণোদনা নিবন্ধন ছাড়া ডিলার এজেন্ট, আমদানিকারক, স্থানীয় প্রস্তুতকারী বা উৎপাদনকারী কেউ তিন চাকার বৈদ্যুতিক যান ও মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারবে না।ইকোনমিক লাইফ : ইকোনমিক লাইফ অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদে বৈদ্যুতিক মোটরযান নিবন্ধন দেওয়া হবে। এসব মোটরযান বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের লাইফটাইম নির্ধারণ করবে সরকার। নির্ধারিত ইকোনমিক লাইফ শেষে এসব যানের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।

নিবন্ধন ফি, রুট পারমিট ও ভাড়া : ইঞ্জিনচালিত যেসব মোটরযানের নিবন্ধন ফি ইঞ্জিনের সক্ষমতার ওপর নির্ধারিত হয়, সেসব শ্রেণির বৈদ্যুতিক মোটরযান নিবন্ধনের ক্ষেত্রে মোটরের সক্ষমতার ওপর ফি নির্ধারিত হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আসন ও ওজনের ভিত্তিতে নিবন্ধন ফি নির্ধারিত হবে।

সংশ্লিষ্ট রুট পারমিট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বৈদ্যুতিক মোটরযানের চার্জ ধারণক্ষমতা (একবার চার্জে সর্বোচ্চ কিলোমিটার চলাচলের অবকাঠামোগত সুবিধা) বিবেচনা করবে। স্টেজ ক্যারিজ বা কন্ট্রাক্ট ক্যারিজ হিসেবে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক মোটরযানের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করবে।

যা না মানলে শাস্তি : বৈদ্যুতিক মোটরযানের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এ বর্ণিত মোটরযান নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধ, শাস্তি ও পদ্ধতি সংক্রান্ত বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে। উৎপাদনে বিডার নিবন্ধন লাগবে : নীতিমালায় বলা হয়েছে, বৈদ্যুতিক মোটরযানের স্থানীয় প্রস্তুতকারী, উৎপাদনকারী, সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন লাগবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের বৈদ্যুতিক যান চার্জিং নির্দেশিকা মোতাবেক অনুমোদিত চার্জিং স্টেশন বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বা সোলার প্যানেল অথবা নবায়নযোগ্য যেকোনো জ্বালানি ব্যবহার করে ইলেকট্রিক মোটরযানের ব্যাটারি চার্জ করা যাবে। আমদানির ক্ষেত্রে যানটি অবশ্যই নতুন হতে হবে। ব্যবহৃত ইলেকট্রিক মোটরযান আমদানি করতে হলে সংশ্লিষ্ট ইলেকট্রিক ভেহিকল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত লাইফটাইম থাকতে হবে।