• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জামাতুল আনসারের ৯ জঙ্গি গ্রেপ্তার

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৩  

বান্দরবান সদর উপজেলার টঙ্কাবতীর পাহাড়ি এলাকায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) অভিযানে ৯ জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে। রবিবার ভোর থেকে গতকাল সোমবার ভোর পর্যন্ত এই অভিযান চলে। র‌্যাব বলছে, আটক ব্যক্তিরা নব্য জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

র‌্যাব জানায়, অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার প্রশিক্ষণ কমান্ডার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. দিদার হোসেন মাসুম ওরফে চাম্পাই এবং ওই সংগঠনের আমিরের নিরাপত্তারক্ষী ও মোটরবাইকের চালক ইমরান হোসেন ওরফে সাইথওয়ালও আছেন। অভিযানে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও জঙ্গিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, আটক ৯ জঙ্গি তাঁদের নিকটাত্মীয়, স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তি বা বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে জামাতুল আনসারে যোগ দেন। কথিত হিজরতের নামে প্রথমে তাঁদের সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে রেখে শারীরিক কসরত, জঙ্গিবাদবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, তাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়া হতো। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন সময়ে তাঁদের সমতল থেকে পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা পাহাড়ি এলাকায় ক্যাম্প তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র চালনা, অন্যান্য সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেন।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল দুপুরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে চলমান বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে রবিবার ভোর থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত টঙ্কাবতী এলাকায় ওই অভিযানে র‌্যাব-১, র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-১৫ যৌথভাবে অংশ নেয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ছয়টি দেশি বন্দুক, একটি বিদেশি অস্ত্র, পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ, দুরবিন, সুইচ গিয়ার চাকু ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।

খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাবের অভিযান টের পেয়ে পাঁচ-ছয়জন জঙ্গি পালিয়ে গেলেও প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন মাসুম ওরফে চাম্পাই (২৫), আল আমিন সর্দার ওরফে আবদুল্লাহ ওরফে বাহাই (২৯), সাইনুন ওরফে রায়হান ওরফে হুজাইফা (২১), তাহিয়াত চৌধুরী ওরফে পাভেল ওরফে হাফিজুল্লাহ ওরফে রিতেং (১৯), মো. লোকমান মিয়া (২৩), মো. ইমরান হোসেন ওরফে সাইতোয়াল ওরফে শান্ত (৩৫), মো. আমির হোসেন (২১), মো. আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেং (২৮) ও শামিম মিয়া ওরফে রমজান ওরফে বাকলাইকে (২৪) আটক করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী ব্যাপক অভিযানের মুখে টিকতে না পেরে কৌশল হিসেবে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি অংশ বান্দরবানের থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ির বিভিন্ন এলাকায় থেকে যায়। অন্য অংশটি পাহাড় থেকে বের হয়ে সমতলে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। ধারণা করছি, টঙ্কাবতীতে যাঁদের আটক করা হয়েছে তাঁরা টঙ্কাবতী হয়ে পার্শ্ববর্তী সমতল এলাকা দিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। জঙ্গিদের পাহাড় থেকে সমতলমুখী হওয়ার বিষয়টি গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পেরে আমরা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকা থেকে কয়েকজন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার কর্মীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি।’

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে একযোগে আট তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। সেই নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র‌্যাব জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া নামের একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২০ অক্টোবর রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের সাতজন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের তিন সদস্যসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ধারাবাহিক অভিযানে জামাতুল আনসারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৫৯ জন জঙ্গি এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’-এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।