• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বান্দরবানে মৌ চাষে বাড়তি আয়

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯  

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মৌমাছি চাষ। বাড়তি খরচ ছাড়াই একবার পুঁজি খাটিয়ে বারবার আয় করা যায় এ খাত থেকে। মধু বিক্রি করে সংসারের বাড়তি আয় করছে শতাধিক পরিবার।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তেতুলিয়া পাড়ার বাসিন্দা মেগ্য মার্মা রানি মৌমাছি সংগ্রহের জন্য খুঁজে বেড়ান পাহাড়ের বন-জঙ্গল। স্থানীয়রা বন-জঙ্গলে মৌমাছির চাক দেখতে পেলেই খবর দেন মেগ্য মার্মাসহ তার দলকে। খবর পেলেই রানি মৌমাছি সংগ্রহের জন্য হাতের গ্লোভস, খুন্তি, মশারি আর বাক্স নিয়ে ছুটে যান। মৌচাকে লুকিয়ে থাকা রানি মৌমাছি কৌশলে একটি কাঠের বাক্সে আটকে রেখে বাড়ির উঠানে চাষ শুরু করেন।

মেগ্য মার্মা বলেন, ‘মৌ রানিকে বাড়িতে এনে একটি কাঠের বাক্সে রাখি। কয়েক দিনের মধ্যে সেই বাক্স ও এর চারপাশ মৌমাছির গুঞ্জনে সরব হয়ে ওঠে। রানি মৌমাছি বাক্সে আবদ্ধ করার পর কয়েক মাসের মধ্যেই বাক্স থেকে মধু আহরণ করা যায়। কৃষি কাজের পাশাপাশি এ চাষ করছি।’

Bandarban-in-1

শুধু মেগ্য মার্মা নন, পরিবারের বাড়তি আয়ের জন্য ওই গ্রামের ক্যনুমং মার্মা, উসাইন মং, মেনুপ্রসহ ১৮টি পরিবার বাড়ির আঙিনায় বিশেষভাবে তৈরিকৃত বাক্সে মৌ চাষ করছেন।

মধু বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ চালান বান্দরবান সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল কাউসার। তিনি বলেন, ‘পাহাড় থেকে রানি মৌমাছি সংগ্রহ করা কঠিন। কয়েক মাস লেগেছে মৌ রানি সংগ্রহ করতে। বাক্সে মৌ চাষ করে প্রথমেই আমি ৩ কেজি মধু পেয়েছি। মধু বিক্রি করে মাসে চার-পাঁচ হাজার টাকা আয় করি। এর মাধ্যমেই আমি পড়াশোনার খরচ চালাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘গাছে যখন মুকুল আসে বিশেষ করে অক্টোবর মাসের দিকে মৌ চাষ করা ভালো। গুণাগুণটা ভালো পাওয়া যায়।’

পার্বত্য মৌচাক সমিতির তথ্যমতে, দেশে অ্যাপিস সেরানা, অ্যাপিস মেলিফেরা প্রজাতির মৌমাছি কাঠের বাক্সে পালনের উপযোগী। তবে পাহাড়ে অ্যাপিস সেরানা জাতের মৌমাছির চাষ করা হয়। মৌ বাক্সের একটি কলোনিতে একাধিক চাক থাকে। প্রতি কলোনিতে একটি রানি, শতাধিক পুরুষ এবং ২৫-৩০ হাজার পর্যন্ত শ্রমিক মৌমাছি বসবাস করে। একটি কলোনি থেকে ৪-৫ কেজি মধু পাওয়া যায়।

Bandarban-in-1

বান্দরবানের আমতলী তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া, তেতুলিয়া পাড়া, থানচি উপজেলার মরিয়ম পাড়া, আলীকদম উপজেলার নয়ামারমা পাড়া, চৈক্ষ্যং পান বাজার ত্রিপুরা পাড়াসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের উঠানে কিংবা বাড়ির কোণে বাক্সে রেখে মৌমাছি চাষ করছেন শতাধিক আদিবাসী-বাঙালি পরিবার।

মধু চাষে খরচ কম, আয় বেশি বলে জানিয়েছেন জেলা সদরের আমতলি তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার বাসিন্দা মেপ্রু। তিনি জানান, মধুর বাক্স কিনতে ৫ হাজার টাকার মত খরচ হয়। পরিচর্যা খরচ তেমন নেই। খরচ কম, লাভ বেশি। পাহাড়ি মধু প্রতিকেজি ১২০০-১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পর্যটকরাই বেশি কিনে নেন।

Bandarban-in-1

পার্বত্য মৌচাক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘যারা অস্বচ্ছল পরিবার, ভিটে-মাটি নেই; তারা যেন প্রকৃতি থেকে অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হতে পারে। আমরা সে চেষ্টাই করছি। মৌ চাষে তেমন খরচ নেই, মৌমাছিকে খাবার দিতে হয় না। সে জন্য অস্বচ্ছলদের কাছে এই চাষ খুবই সুবিধাজনক।’

তিনি আরো জানান, গ্রাম ও শহরের মানুষের কাছে রয়েছে এর আলাদা কদর। কদর বেশি হওয়ায় খাঁটি মধুর দামও বেশি। মৌ চাষিরা প্রতিকেজি মধু বিক্রি করছেন ১ হাজার ২শ থেকে ১ হাজার ৪শ টাকা দরে।

বান্দরবান বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক রবীন্দ্র কুমার নাথ জানান, মৌ চাষিদের সাহায্য করার জন্য বিসিক দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে বিসিক ৪০ জন মৌ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সরকার ঋণ দিয়ে মৌ চাষিদের সহযোগিতা করেছে। সরকার মৌ চাষিদের সাহায্য আরও বাড়ালে মানুষ উপকৃত হবে এবং মৌ চাষে এগিয়ে আসবে।