• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সরকারি খরচে প্রবাসীদের লাশ আসবে দেশে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

বিদেশের মাটিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন প্রবাসীরা, বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকরা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উপর ভর করে সমৃদ্ধির পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশ। সর্বশেষ সরকারি হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বের ১৫৯টি দেশে বর্তমানে বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংখ্যা প্রায় ৮৭ লাখের উপর। আর এই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১২ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির চাকা সচল রাখা দুটি খাত গার্মেন্টস এবং প্রবাসী রেমিট্যান্স। এই দুটি শক্তিশালী খাতকে পুঁজি করে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি এখন "বাংলাদেশ"। 

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিতে নানামুখী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু করে। বর্তমান সরকার রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ব্যক্তিবর্গের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দিতে বদ্ধ পরিকর। প্রবাসীদের আর্থিক লেনদেনের সুবিধার কথা বিবেচনা করে গড়ে তোলা হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার সহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাস সমূহের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকগণকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সেই ধারাবাহিকতায় এবার প্রবাসে মৃত্যু বরণ করা প্রবাসীদের লাশ সম্পূর্ণ সরকারি খরচে দ্রুত সময়ে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। সম্প্রতি  ইতালির রোমে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সরকারের এমন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, মৃত প্রবাসীদের লাশ দেশে পাঠাতে আর ভিক্ষা করতে হবে না, সরকার সম্পূর্ণ খরচ দিয়ে তাদের লাশ দেশে আনবে। তিনি বলেন, প্রবাসীরা দেশের এক একজন অর্থমন্ত্রী। বর্তমান সরকার প্রবাসীবান্ধব সরকার। প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবি পূরণে সরকার বদ্ধ পরিকর। তাই সরকার সম্পূর্ণ খরচ দিয়ে লাশ আনবে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আজ থেকে বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ করা হবে। টাকা পাঠাতে কমিশন বন্ধ করে চার্জবিহীন দেশে অর্থ প্রেরণ করার সুবিধা দেওয়া হবে। প্রবাসীদের যেসব দাবি মেনে নেওয়ার মতো তা সবগুলোই বাস্তবায়ন হবে আশা রাখি।

প্রসঙ্গত বর্তমানে প্রবাসী কর্মীরা মারা গেলে মৃতদেহ দেশে আনার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সরকার। বিমানবন্দরে লাশ হস্তান্তরের সময় সেটি পরিবহন ও দাফনের খরচ হিসেবে দেওয়া হয় সরকারি অনুদান। বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণের সময় মৃতের পরিবারকে লাশ পরিবহন ও দাফন হিসেবে ৩৫ হাজার টাকার চেকের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। এছাড়া, মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারের জন্য আর্থিক অনুদান, মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের আদায়ের ব্যবস্থাও করে থাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর প্রত্যেক পরিবার আর্থিক অনুদান হিসেবে পাচ্ছে ৩ লাখ টাকা। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে এসব সুবিধা পান প্রবাসী কর্মীর স্বজনরা।

সরকারি খরচে দেশে লাশ ফেরত পাঠানো সহ প্রবাসীদের কল্যাণে অর্থমন্ত্রীর বিভিন্ন আশ্বাসের বিষয়ে প্রবাসীরা জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাস সমূহ বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রতি প্রবাসীদের দায়িত্ববোধ আরো বাড়বে এবং দেশের উন্নয়নে প্রবাসীরা আরো বেশি অবদান রাখতে পারবেন। তাই অর্থমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন তারা।