• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ওবায়দুল কাদেরের হৃদরোগ এবং আমাদের বিকারগ্রস্ত মানসিকতা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০১৯  

সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সরকারের  সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ৩রা মার্চ রবিবার ফজরের নামাজের পর হঠাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে ওবায়দুল কাদেরকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে আইসিইউতে নেওয়া হলেও পরে তাকে সিসিইউতে রাখা হয়। সবশেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে গত সোমবার ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

অত্যন্ত দুঃখ এবং লজ্জার ব্যাপার হচ্ছে সাম্প্রতিককালে যেকোনো বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল কিংবা ঠাট্টা তামাশা করার প্রচলন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত কিছু মানুষ সবকিছু থেকেই ঠাট্টা করার উপাদান খুঁজে বেড়ান। তাদের এই নোংরা মানসিকতার ট্রল থেকে রেহাই পাননি হৃদরোগে আক্রান্ত মৃত্যু পথযাত্রী ওবায়দুল কাদের।

বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ক’জন সৎ ও বরেণ্য নেতা রয়েছেন, তাঁর মধ্যে জননেতা, ওবায়দুল কাদের সবার শীর্ষে। রাজনীতির মাধ্যমে দেশ ও জনগণের সেবা করতে গিয়ে বিসর্জন দিয়েছেন নিজের ব্যক্তিগত জীবন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যাত্রীদের হয়রানি দূর করতে চষে বেড়িয়েছেন সারা দেশ।  দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত অনিয়ম করে গেছেন, ফলশ্রুতিতে তার শরীরে বাসা বেঁধেছে হৃদরোগ।

১৯৭১ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধের একটি থানা কোম্পানির অধিনায়ক হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কাদের। জিয়াউর রহমানের আমলে বছরের পর বছর জেলখানায় বন্দী থেকে টানা দুবার ছাত্রলীগ সভাপতি হয়েছিলেন। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গিয়ে তার নিজের দেহে রয়ে গেছে গ্রেনেডের দগদগে ক্ষত আর ৫৩টি স্প্রিন্টার।

স্কুল শিক্ষকের ছেলে, গ্রাম থেকে নিজগুণে উঠে এলেন রাজনীতির শীর্ষে। তিলে তিলে তৈরি হলো আজকের ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকতা, লেখালেখি, রাজনীতি সবই করেছেন সমানতালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন।

সরল মনে শিশুর মতো ফেসবুকে থাকতেন, সমালোচনা কটুবাক্য খুব মজা ভরে নিতেন। এমনকি তার নিজেকে নিয়ে বানানো ট্রলগুলো দেখে নিজেই হাসতেন বাচ্চা ছেলের মতো। তিনি একজন কবি, লেখক ও গল্পকার। কখনই প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না। সৌখিন, রুচিশীল এই সুপুরুষ বর্ণিল জীবন তিনি যাপন করে গেলেন। তিনি সবার সাথে ছবি তুলতেন, ধৈর্য্য নিয়ে। এ জন্য তাকে নিয়ে কত ট্রল হয়েছে।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ ও জাতীয় নেতা কেউ কি আছেন তার মতো? যিনি গুরুত্ববহ লোক হয়েও সবার সাথে মিশেছেন? সকালে হাঁটতে বেড়িয়ে সাধারণের সাথে দিন পার করেছেন। পদ্মা সেতুর প্রথম পাইলিং যখন হয়, তখন খুশিতে কেঁদেছিলেন এ মানুষটি।

প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়তেন, সেদিনও সেই ফজরের নামাজ পড়ার পরেই শ্বাসকষ্ট শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন সদা হাস্যোজ্জল এই মানুষটির বাইপাস সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তার অস্ত্রোপচার করা বলে হবে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

আবারো সুস্থ হয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসুন হে মহান জননেতা। অগোছালো এই দেশটাকে গোছাতে আপনার মতো রাজনীতিবিদ যে বড্ড প্রয়োজন।