• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

কান কথা-৬ কানসৈকতে শিশুদের নতুন রাজ্য

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৯  

কান চলচ্চিত্র উৎসবের ছবি কেনাবেচার শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্যাভিলিয়ন ভাড়া নেয়। এগুলোর সম্মিলনকে বলা হয় ভিলেজ ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিটি প্যাভিলিয়ন বাইরে থেকে দেখতে তাঁবুর মতো। এটি দু’দিকে বিভক্ত। একটি অংশ রিভিয়েরা, অন্যটি পানটিয়েরো। ভারতীয় প্যাভিলিয়নে যাওয়ার সুবাদে রিভিয়েরা অংশ ঘোরা হয়েছে বেশ।


রবিবার (১৯ মে) উৎসবের ষষ্ঠ দিন পানটিয়েরোর দিকে ঢুকলাম। ‘ল্যঁ ব্যালো রুজ’ (দ্য রেড বেলুন) দেখাই মূলত উদ্দেশ্য। উৎসবের ব্যাজধারী মায়েদের জন্য এবারই প্রথম কানে যুক্ত হলো শিশুদের জন্য এই ডে-কেয়ার সেন্টার। এ বুঝি শিশুদের জন্য কানসৈকতে গড়ে তোলা হলো নতুন এক আনন্দ রাজ্য।
এর ফটকে লাল রঙা বেলুন বেঁধে রাখা। শিশুরা একপাশে লাল রঙের চেয়ারে বসে টেবিলে আঁকাআঁকি করছে। অভিভাবকদের বসার জন্য আছে লাল রঙের তুলতুলে চেয়ার। শিশুদের জন্য আছে সৌজন্য পানির বোতল।
৮০০ বর্গফুটের সাদা তাঁবুতে ঢুকে চোখে পড়লো, শিশুরা মনের আনন্দে খেলছে। তাদের ঘুমানোর জন্য আছে ছোট্ট তাঁবু। এখানে দায়িত্ব পালন ফরাসি প্রতিষ্ঠান ন্যানি প্লিজের চারজন দোভাষি ন্যানি। গান গেয়ে, রঙ ও ড্রইং করে, দুপুরের খাবার তৈরি করে থাকেন তারা। তাদের মধ্যে একজনের একসঙ্গে ১১টি বাচ্চাকে সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে। যাদের মা-বাবা বিক্রয় প্রতিনিধি, পরিবেশক, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী, সাংবাদিকতা করতে কানে আসেন। আয়োজকদের দুই স্বেচ্ছাসেবী থাকেন এখানে।

১৯৫৬ সালে মুক্তি পাওয়া আলবের্ত লামোরিজ পরিচালিত অস্কারজয়ী ফরাসি ছবির (ল্যঁ ব্যালো রুজ) নামে এই নার্সারির নাম রাখা হয়েছে। এর সুবাদে উৎসবের ভিআইপিদের কাতারে যুক্ত হলো শিশুরা! দক্ষিণ ফরাসি উপকূলে ১২ দিনের কান উৎসবে সারাক্ষণ শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ঘোরা ঝক্কির বৈকি! তাই ব্যস্ত মায়েদের জন্য স্বস্তি হয়ে এসেছে এই তাঁবু।
ফিল্ম মার্কেটের অর্থ সহায়তায় শিশুঘরটি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন কান উৎসবের প্রোগ্রামার অঁহেলি গদেত। তার সঙ্গে আছেন মিশেল ক্যারি ও দ্য ফিল্ম এজেন্সির পরিচালক সারাহ ক্যালডারোন। গদেত খেয়াল করেন, পরিবারবান্ধব সেবার ঘাটতি আছে কানে। অনেক নারী এর আগে উৎসব কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেন, কড়া নিরাপত্তার কারণে স্ট্রলার ও শিশুসন্তানকে নিয়ে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তারা। এবারের আসরেই এমন ঘটনার জন্ম হয়েছে। ব্রিটিশ পরিচালক গ্রেটা বেলামাসিনাকে তার চার বয়সী সন্তানকে নিয়ে উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্তিভাল ভবনে ঢুকতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন। তাকে আয়োজকদের প্রতিনিধিরা জানান, বাচ্চার অ্যাক্রেডিটেশন পেতে ৩০০ ইউরো দিয়ে ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।
 অঁহেলি গদেত বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন, আগামী বছর ল্যঁ ব্যালো রুজের পরিসর বাড়ানো হবে। তার সংগঠন ‘প্যারেন্টিং অ্যাট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালস’ এই কার্যক্রম সমন্বয় করছে। ইউনিফ্রান্স, সিনান্দো, দ্য ফিল্ম এজেন্সি, উলফকাইনো, পিরামিড, ম্যাডম্যান এন্টারটেইনমেন্ট, ইউরোপা ইন্টারন্যাশনালসহ ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এবারের আসরে ল্যঁ ব্যালো রুজের সেবা নিতে ৬০ জন শিশুর মা-বাবা নাম নিবন্ধন করেন। তালিকায় আছে গদেতের নিজের ছেলে ওরসন (চলচ্চিত্রকার ওরসন ওয়েলেসের নামে)। এই সেবা পেতে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ৫০ ইউরো। ২১ মে পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে শিশুঘরটি। উৎসবের ব্যাজধারীদের এই জায়গা ব্যবহারের জন্য শিশুসন্তানকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ পাস। বুয়া ও শিশুদের জন্য বাড়তি কোনও টাকা দিতে হবে না। সাগরপাড়ের শহরে পরিবারবান্ধব অন্যান্য আয়োজনের তথ্যাদিসহ একটি ব্যাগ দেওয়া হয়েছে অভিভাবকদের।
 আয়োজকদের পক্ষ থেকে ল্যঁ ব্যালো রুজ চালুর উদ্যোগে কাজ করেছেন মার্শে দ্যু ফিল্মের নির্বাহী পরিচালক জেরোমে পাইলার। নাম নিবন্ধন করা শিশুসন্তানদের মায়েরা পালে দে ফেস্তিভাল ভবনের নিচতলায় বেবি লাউঞ্জ এক্সপ্রেস-চেঞ্জিং অ্যান্ড ফিডিং কর্নার ব্যবহার করতে পারছেন। এখানে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো যায়। আগামী ২৪ মে পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এটি।
এদিকে পালে দে ফেস্তিভালে শিশুদের জন্য অ্যানিমেটেড স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির সংকলন ‘লিটল হিরোস’ দেখিয়েছে উৎসব কর্তৃপক্ষ। সাগরপাড়ে আমেরিকান প্যাভিলিয়নে শনিবার ছিল শিশুসন্তান নিয়ে উৎসবে আসা মা-বাবাদের জন্য ক্রীড়া আয়োজন।
 এর কাছেই শিশুদের জন্য ছোট্ট একটি উন্মুক্ত পার্ক চোখে পড়ে। সেখানে দিনভর সোনামনিরা মনের আনন্দে খেলে। তার পাশে শিশুদের চড়ার মিউজিক্যাল কার। একটি বড়, আরেকটি ছোট। এগুলো চালালে বাজতে থাকে গান। বড়টিতে চার্লি চ্যাপলিন, জেমস বন্ড তারকা শন কনারি, ‌‘রোমান হলিডে’র অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন-সহ অনেকের ছবি ও কান উৎসবের বিভিন্ন সময়ের পোস্টার। ঠিক পাশেই শিশুদের খেলনাসামগ্রী বিক্রির দোকান।
সাগরপাড়ে জেডব্লিউড ম্যারিয়ট হোটেলের উল্টো দিকে ‘দ্য অ্যাংরি বার্ডস মুভি টু’ ছবির সিক্যুয়েলের প্রচারণা চলছে জোরেশোরে। সেখানে বর্ণিল মঞ্চে ছবিটির বিভিন্ন চরিত্রের ছবির কাটআউট ও মাস্কট দেখা গেলো। অভিভাবকদের সঙ্গে যাওয়ার সময় এগুলো দেখে বেশ মজা পাচ্ছে শিশুরা।