• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাটির নিচে রহস্যময় আট স্তরের এক শহর, রয়েছে ৬০০টি প্রবেশদ্বার!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১১ মে ২০২০  

বিশ্বব্যাপী প্রাচীন অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক রহস্য আছে যার সমাধান এখনো হয়নি। গোলকধাঁধার মতোই রয়ে গিয়েছে এসব প্রাচীন নিদর্শনসমূহ। প্রত্নতত্ত্ববিদরা গবেষণা করেও সেগুলোর যথাযথ সমাধান উদ্ঘাটন করতে পারেননি। তেমনই কয়েকটি সমাধান না হওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পর্কে আজকের লেখা। 

প্রাচীন মিশরের ভুলে যাওয়া গোলকধাঁধা 

 

প্রাচীন মিশরের হারিয়ে যাওয়া গোলকধাঁধার নকশা

প্রাচীন মিশরের হারিয়ে যাওয়া গোলকধাঁধার নকশা

প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে রচিত ‘হিস্টরিস’এ প্রাচীনকালের একটি বিশাল মন্দিরের বর্ণনা করেছেন। এই বিশাল মন্দিরের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছেন, সেখানে হায়ারোগ্লিফস এবং চিত্রে ভরা তিন হাজারটি কক্ষ ছিল। গ্রিকরা এর জটিল রহস্য এবং ধাঁধার কারণে ‘ল্যাবরেথ’ বা গোলকধাঁধা নাম দেয়। 

তাদের বিশ্বাস ছিল এটা ক্রেটির কিং মিনোসের জন্য দাদালাস কর্তৃক নকশাকৃত ছিল, যেখানে কল্পকাহিনীর মিনোটাওর বসবাস করতেন। মন্দিরের করিডরগুলো ছিল গোলকধাঁধার মূল কেন্দ্র। বর্তমানে বর্ণিত এই বিশাল মন্দিরের কোনো অস্তিত্ব নেই। এবং ঠিক কোথায় ছিল সেটাও অজানা। হেরোডাটাসের বর্ণনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে অনেক সময়। 

তবে একাধিক সূত্রে ‘ল্যবরেথ’ বা গোলকধাঁধা সম্পর্কে বিস্তারিত এবং ধারিবাহিক বিবরণ ইঙ্গিত দেয় প্রাচীন সভ্যতায় বাস্তবেই এর অস্তিত্ব ছিল। গবেষকরা গত শতাব্দী থেকেই এর অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। তারা ভবিষ্যতে মন্দিরটির সন্ধানে এবং এর রহস্য সমাধানে খননকাজ শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।  

আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের অজানা সমাধিস্থল

 

তার সমাধি নিয়ে রয়েছে নানা কল্পকাহিনী

তার সমাধি নিয়ে রয়েছে নানা কল্পকাহিনী

মহাবীর আলেজান্ডার দ্য গ্রেটের চূড়ান্ত সমাধিস্থল প্রাচীন অন্যতম রহস্য। প্রায় ২৫০০ বছর আগে মৃত্যু হলেও তার সঠিক সমাধিস্থলের সন্ধান আজো পাওয়া যায়নি। আলেকজান্ডারের মৃত্যুও নিয়েও আছে রহস্য। তার ভারতবর্ষ জয়ের সময় একজন জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ব্যাবিলন হবে আলেকজান্ডারের শেষ গন্তব্য। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের ব্যাবিলনে যাওয়ার কোনো পূর্বপরিকল্পনা না থাকলেও নিয়তিই যেন সেখানে টেনে নিয়ে গিয়েছিল তাকে। 

অতঃপর খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে ব্যাবিলনেই তার মৃত্যু ঘটে। তবে তার সমাধি কোথায় তা রহস্য হিসেবেই থেকে গিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে অনেক কল্পকাহিনী প্রচলিত আছে। বাস্তবতা এবং এসব কল্পকাহিনী অনেকটা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। প্রাচীন ইতিহাসবিদ ডায়োডোরাস লিখেছেন, আলেকজান্ডারের মৃতদেহ মমি করে একটি স্বর্ণের সারকোফ্যাগাসে রাখা হয়েছিল। সারকোফ্যাগাসটি অন্য একটি স্বর্ণের কাসকেটে ভরে মিশরের সিওয়াতে আমুনের মন্দিরের সমাধিস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। 

ইতিহাসের অন্য বর্ণনা অনু্যায়ী, ব্যাবিলনে মৃত্যুর প্রায় দুই বছর পর তার মৃতদেহ মিশরে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দীর্ঘ এক শবযাত্রার আয়োজন করা হয়। শবযাত্রাটি পারস্য অতিক্রম করে মিশরে যাওয়ার পথে আলেকজান্ডারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং তার সেনাবাহিনীর একজন টলেমি জেনারেল তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আলেকজান্ডারের মৃতদেহ আলেকজান্দ্রিয়ায় কবর দেয়ার প্রস্তাব করেন। তবে ঠিক কোথায় অ্যালেকজান্ডারের সমাধি সে রহস্যের সমাধান হয়নি এখনো। ধারণা করা হয়, এই সমাধি আবিষ্কৃত হলে প্রাচীন সভ্যতার অনেক বড় রহস্যের সমাধান হবে।  

পেরুর নাজকা রেখা 

 

পেরুর নাজকা রেখা 

পেরুর নাজকা রেখা 

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর নাজকা মরুভূমিতে অঙ্কিত কিছু বিশালাকৃতির ভূরেখাচিত্র বা জিওগ্লিফই নাজকা রেখা হিসেবে পরিচিত। পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৪৫০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত শুষ্ক নাজকা মরুভূমি। এই মালভূমির মাটির উপর বিশাল আঁকারের অসংখ্য জ্যামিতিক সরল রেখা আঁকা। এই রেখাগুলোর সাহায্যে অনেক জ্যামিতিক চিত্র, বিভিন্ন প্রাণী, উদ্ভিদ এবং কাল্পনিক প্রাণীর চিত্র আঁকা। 

সেখানকার বেশ কিছু চিত্র আছে যেগুলো কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দ থেকে ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অঙ্কিত হয়েছিল। এখানে অঙ্কিত কিছু রেখা ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ। সরল রেখাগুলো কয়েক কিলোমিটার লম্বা হলেও একটুও বাঁকা নয়। যা সত্যিই অবাক করা। তবে কীভাবে এবং কেনো এই চিত্রগুলো অঙ্কিত হয়েছিল তার রহস্য এখনো সমাধান হয়নি। 

ভূগর্ভস্থ শহর এবং সুড়ঙ্গপথ   

 

 ভূগর্ভস্থ শহর এবং সুড়ঙ্গপথের নকশা

ভূগর্ভস্থ শহর এবং সুড়ঙ্গপথের নকশা

বিশ্বব্যাপী অনেকগুলো ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ এবং শহর আবিষ্কৃত হয়েছে। তুরস্কের ক্যাপাডোসিয়ার ডেরিনকুয়ে সম্ভবত এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ভূগর্ভস্থ শহর। এই ভূগর্ভস্থ শহরটির ৮টির বেশি স্তর আছে, ৬০০টির বেশি প্রবেশ পথ এবং প্রবেশদ্বারসহ ৮০ মিটার পর্যন্ত গভীর। 

মিশরের গিজা মালভূমিতে ভূগর্ভস্থ মনুষ্যনির্মিত গুহা এবং সুড়ঙ্গপথের সন্ধান মিলেছে যার সঙ্গে নদীর সংযোগ ছিল। তবে ভূগর্ভস্থ এসব শহর কিংবা সুড়ঙ্গপথ কীভাবে নির্মিত হয়েছিল সে রহস্যের সমাধান এখনো হয়নি। 

বলিভিয়ার পুমা পুংকু 

 

বলিভিয়ার পুমা পুংকু 

বলিভিয়ার পুমা পুংকু 

প্রাচীনকালে পাথর কেটে বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণের নিদর্শন আছে বিশ্ব জুড়ে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম বলিভিয়ার প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট পুমা পুংকু। ইতিহাসবিদদের ধারণা, পাথরের এই কাজগুলো করা হয়েছিল প্রায় ১৭ হাজার বছর আগে। এর সূক্ষ্ম কাজ দেখলে মনে হতে পারে হীরার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। 

প্রায় ৮০০ টন ওজনের বিশাল পাথরের ব্লকগুলো সোজা এবং একটি অপরটির সঙ্গে নিখুঁতভাবে জোড়া দেয়া। প্রাচীনকালে কোনো প্রযুক্তির সহায়তা বাদে কীভাবে এতো নিখুঁতভাবে বিশালাকৃতির পাথর কাঁটা হয়েছিল সে রহস্যের সমাধান আজো হয়নি।