• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সবাই ছেড়ে যায়, যেতে পারে না শুধু মা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২০  

ছবিটা খুবই মর্মান্তিক। কিন্তু এটি মাতৃত্বের এক অনন্য উদাহরণও বটে। ফেসবুকে একজন এ ছবি আপলোড করে লিখেছেন, ‘সবাই ছেড়ে যায়, যেতে পারে না শুধু মা’। সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা আর মমতা পরিমাপ করার কোনো দাড়িপাল্লা বিশ্বে এখনও তৈরি হয়নি।

ছবিটা ১৯৭৪ সালের, গুটি বসন্তের সময়কার। পৃথিবীতে শেষবার স্মল পক্স বা গুটি বসন্তের বড় মাপের মহামারি হয়েছিল সেসময় ভারতে। হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছিল তখন। সে বছর সেই মহামারি নিয়ে বিবিসির একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে এক লাখ দশ হাজার মানুষ গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়েছিল। মারা গিয়েছিল ২০ হাজারের মতো মানুষ। তখনকার তোলা এ ছবিতে গুটি বসন্তের চেয়ে মাতৃত্বটাই মূখ্য বিষয়।

‘মা’ শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া, মমতা, অকৃত্রিম স্নেহ, আদর, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সব সুখের কথা। চাওয়া-পাওয়ার এ পৃথিবীতে বাবা-মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। মায়ের তুলনা মা নিজেই। মায়ের মতো এমন মধুর শব্দ অভিধানে দ্বিতীয়টি আর নেই। নদীর তলদেশে তো যাওয়া যায় কিন্তু মায়ের ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপ করা যায় না।

মায়ের কাছে নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয় হয়ে যায় তার সন্তান। আর এ সন্তানের মাঝেই সে খুঁজে পায় পৃথিবীর সব সুখ। ছোট ছোট স্বপ্ন দেখতে থাকে নিজের ছেলে বা মেয়েটিকে নিয়ে। ছোটবেলায় যখন অবুঝ সন্তান নিজের প্রয়োজন হলেই কান্না আর মাকে জ্বালাতন করে; মায়ের মুখে কি তবুও একটু বিরক্তির চিহ্ন পাওয়া যায়? নিশ্চই না, কারণ এ সন্তানই যে তার কলিজার টুকরো। শত কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করে তিলে তিলে এ অবুঝ শিশুটিকে বড় করে তোলে মা। কত রাত যে নিদ্রহীন ভাবে কাটিয়ে দেন, তা শুধু মহামানবীই বলতে পারবেন।

একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের ছোটবেলার কথা। একদিন এডিসন স্কুল থেকে বাড়ি এলেন। একটা কাগজ দিলেন মায়ের হাতে। বললেন, ‘আমার শিক্ষক এ কাগজটা দিয়েছেন। একমাত্র তোমারই হাতেই দিতে বলেছেন।’ কাগজটা পড়লেন মা। তার চোখে পানি এলো। ছেলেকে শুনিয়ে তিনি জোরে জোরে পড়লেন, ‘আপনার ছেলে খুবই প্রতিভাবান। আমাদের স্কুল খুবই ছোট। তাকে শিক্ষাদানের মতো কোনো শিক্ষক এখানে নেই। দয়া করে তাকে আপনি নিজেই শিক্ষা দিন।’

অনেক দিন পরের কথা। এরই মধ্যে এডিসনের মা মারা গেছেন। এডিসন শতাব্দীর সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। একদিন তিনি তাদের পুরনো ঘরে ওই ভাঁজ করা চিঠিটি পেলেন। তিনি কাগজটা খুললেন। সেই চিঠিতে লেখা- ‘আপনার সন্তান মানসিকভাবে অসুস্থ। তাকে আমরা আর কোনোমতেই স্কুলে রাখতে পারছি না। তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হল।’

চিঠি পড়ে এডিসন আবেগে কাতর হয়ে পড়লেন। তারপর তার ডায়েরিতে লিখলেন, ‘টমাস আলভা এডিসন মানসিক অসুস্থ এক শিশু ছিলেন কিন্তু তার মা তাকে শতাব্দীর সেরা প্রতিভাবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।’ আসলেই, একজন মায়ের ভালোবাসা ও শিক্ষা তার সন্তানকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।