• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দুই পা নেই তবুও তিনি বাসের কন্ডাক্টর

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

প্রতিবন্ধীকতাও তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তার দুই পা নেই। তবে অদম্য সাহস ও ইচ্ছাশক্তির ফলেই আজ তিনি কর্মমুখী। বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দিন রাত এভাবেই পরিশ্রম করে তিনি সংসার চালান।

মানুষের সৌভাগ্যের মূলে রয়েছে তার পরিশ্রম বা চেষ্টা। পরিশ্রম এবং চেষ্টা দ্বারা যে কোনো কর্মেরই সুফল পাওয়া যায়। ভাগ্যের চাকা খুললে গরিবের কুঁড়েঘরও পরিণত হতে পারে রাজপ্রসাদে। তবে বাস্তবের সঙ্গে তা মেলে না। পরিশ্রম না করলে কোনো জাতি তথা কোনো দেশ উন্নতির দিকে এগুতে পারেনা। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে নোয়াখালীর নূর আমিন।

 

বাসের দরজায় বসে আছেন নূর

বাসের দরজায় বসে আছেন নূর

দুই পা নেই তবুও নূর আমিনের জীবন থেমে থাকেনি। যাত্রী ডাকেন ভাড়া তোলেন আর দিনশেষে বিল জমা দিয়ে বুঝে নেন নিজের পারিশ্রমিক। প্রতিদিন মোহাম্মদপুরের ঘাটারচর থেকে চিটাগাং রোড আবার চিটাগাং রোড থেকে ঘাটারচর রোডে। প্রতিদিন চারবার যাওয়া-আসা করতে হয় তাকে।

দেহের ভর হাতের উপর দিয়ে বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তোলেন তিনি। নূর আমিন জানান, ভিক্ষা আমার পছন্দ না। আমি যে কাজ করতে পারি, আমাকে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে আমার এক ওস্তাদ। তার সঙ্গে আমি কাজ করছি। মালিকরা ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।

জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী নূর আমিন। মাত্র ছয় বছর আগেও তাকে দেখা যেত শাহবাগ মোড়ে। ভিক্ষা করে জীবন চালাতেন তিনি। তবে একদিন হঠাৎ করে পরিবর্তন আসে তার জীবনের। বাস চালক খোকন তাকে প্রস্তাব দেন বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করার জন্য। যেন এমনই এক প্রস্তাবের অপেক্ষায় ছিলেন নূর আমিন। 

 

সারাদিন এভাবেই পরিশ্রম করেন নূর

সারাদিন এভাবেই পরিশ্রম করেন নূর

ততক্ষণাৎ রাজি হয়ে যান নূর। সেই থেকে শুরু তার কর্মময় জীবন। যেখানে তিনি খুঁজে পেয়েছেন জীবনের প্রকৃত আনন্দ। অতীতের ভিক্ষা জীবনের স্মৃতি ভুলে যেতে চান তিনি। তার মতো শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরাও যাতে এভাবে কর্মমুখী হতে পারেন এটাই নূরের চাওয়া। কারণ ঘরে বসে থাকার চেয়ে কর্মে যুক্ত থাকলে প্রকৃত সুখী হিসেবে জীবন যাপন করা হয়। 

বাস চালক খোকন জানায় নূর আমিনের বদলে যাওয়ার গল্প। তিনি বলেন, সে যখন ভাড়া তোলে অনেকেই খুশি হয়ে ৫০ বা ১০০ টাকা দান করতে চায়। তবে নূর আমিন তা নেয় না। সে পরিশ্রম করে যা পায় সেটা নিয়েই খুশি। 

পরিশ্রমী এই তরুণ এখন কাজ করেন রজনীগন্ধা পরিবহনে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তার ভাড়া তুলতে একটু দেরি হয়। তবে তা নিয়ে একটুও বিচলিত নয় কর্তৃপক্ষ। নূর আমিনের এই সংগ্রামী পথ চলা মুগ্ধ করে যাত্রীদের। তাদের সবার কণ্ঠেই তার প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রশংসার সুর ভাসে। কেউ কেউ মনে করেন এই কাজ তার জন্য বেশ ঝুঁকির।