• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আঞ্চলিক ভাষায় লজ্জা কিসের? এটাইতো গর্ব

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

৬৪ জেলার দেশ বাংলাদেশ। বিভিন্ন জেলার রয়েছে ভাষা, সংস্কৃতি, আচরণ ও রন্ধনগত স্বকীয়তা। আধুনিকতার বেশ ধরে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। এসেই শহরের লাল-নীল বাতির মতোই নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করেন। আধুনিকতার যুগে এ চেষ্টাকে বাহবা দেয়াই যায়। তখন আঞ্চলিকতা যেন অনেকের কাছে লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তবে এ বিষয়ে মানুষভেদে ভিন্ন মতামত পাওয়া গেছে। নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তুলে ধরা হলো:

পুরান ঢাকার সাইফ হোসেন একটু রসিকতার সঙ্গেই নিজের পরিচিতি দিলেন। তিনি বলেন, আমগো পুরান ঢাকার ছক্কু বেপারী লেনের নাম হুনছেন ! না হুনেন নাইক্কা! মাগার চাংখার পুলের নাম তো হুনছেন না কি কন? হেই চাংখার পুলের থেকা যে রাস্তা ছোজা হোছনী দালান বরাবর গেছে ওইডা দিয়া কিছু আওগাইলেই দেখবেন একখান চিপা গলি পুব দিকে গেছে। ওই গল্লির মইধ্যে ঢুইক্কা দুই কদম ছামনে গেলেই দ্যাখবেন আরো চিপা এউগা গল্লি ডাইনে গেছে। দুই দিকে পুরান পুরান বিটিশ আমলের দলান। আস্তর খইস্যা পড়ছে, ইটের ফাঁকে বটগাছ ভী গজাইছে। মাগার অক্ষনও খাড়ায় আছে। দুই চাইরবার ভূমিকম্প হইলেও হিলাইতে পারবো না কয়া দিলাম।

বরিশালের নিশি বলেন, বরিশাইল্যা, কতাডা হোনলে খালি একখান বিশেষ অঞ্চল না, চোহের সামনে ভাইস্যা ওডে এমন একডা বাষা, যার শক্তি আর সৌন্দর্য আমগোরে আলাদা কইর‌্যা দেয়। বরিশাইল্যা ভাষা এহন প্রবাদের লাহান। কাউরে আদর কইর‌্যা ডাকতে অইলে ‘মনু’ কইয়া ডাহে বরিশালের মানুষ। গান, কবিতা বা ছড়ায় উইঠ্যা আহে দহিণের জনপদ বরিশালের এইসব আঞ্চলিক শব্দ। খালি শিল্প-সাহিত্য না, আড্ডা বা গল্পও জইম্যা ওডে বরিশাইল্যা বাষায়।

ঝিনাইদহের রানা জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সপ জিলার মানুষির মোদ্যিই এট্টা জিনিস দেখা যায়, সিডা হলো নিজিরা যতই শুদ্ধ ভাষায় কতা কোক না ক্যান, দুই-তিন জুনা এ্যাক জাগায় হলিই শুরু করে দেয় পিরান খুইলে নিজির সেই পূর্বপুরুষির ভাষা তথা আঞ্চলিক ভাষায় আলাপ। তয় আমাগের ঝিনেদার মানুষ অনেকেই আচে ইট্টু ডবল ভদ্দরলোক, তারা মনে করে আঞ্চলিক ভাষা গেঁয়ো ভাষা, ঐ ভাষায় কতা কলি ইজ্জেত থাকপেনানে। 

খুলনার শফিকুল বলেন, আমি আমার খুলনার ভাষায় কতা কই। কিডা কি কলো তা তার ব্যাপার।

সিলেটের কাউসার আহমেদ বলেন, আমরা নিজর বাসায় (ভাষা) মাতি। খে (কে) কিতা খইলো ইতা তার ইচ্চা। জাগা বুইজ্জা, মানুষ বুইজ্জা মাতি। দরখার পড়লে অন্য বাসায় মানুষরে বুজায়া দেই। আমরার বাসার ঐতিহ্য আছে। নিজস্বতা আছে। মাতর দরনেই আমরারে সিলোটি খরি চিনা যায়। 

একটু কবিতার ছলে জবাব দিলেন রংপুরের আফজাল হোসেন, রংকে মোরা অং বলি, কন্যা যখন বেটি। সাদা হইল ধলা বন্ধু, রাস্তা হইল ঘাটা, আমন হইল হেউত হামার, শাপলা হইল ভ্যাটা। রিক্সাওয়ালা মামু হামার, নিন্দুকেরাও কহে, রংপুরিয়া ভাষার মত নাইতো মজা বাহে।

নোয়াখালির মামুনুর রশিদ বলেন, হুন, আঞ্চলিকতার টান আঁর বিততেও আছে। হাঁচা কইতে এডাল্লাই অনেক সময় আঁইস ঠাট্টা কইললেও, আঁরতন বাললাগে। আঁই আঁরে ছোড ভাবি না, হেল্লাই কারো কোন ঠাট্টা আঁর শইললো লাগে না। নিজের গণ্ডির অনেকের বিততে ওকগা প্রবণতা দেহি, কাজকাম বা হোয়ালেয়া (পড়ালেখা)  সূত্রে কোথাও যাওনের পর কথা কওনের দরন এতটাই বদলাই হালায় যে নিজের কোনতা থাহে না।

ময়মনসিংহের হাসিবুল হাসান বলেন, কতাডা ছোডুলুহি না, আবারি জাগা বুইজ্জা,লোক বুইজ্জা কতা কওয়াডাও এক্কান ভদ্রতা। নিজের বাড়ির মাইনশের লগে বা পাড়ার মাইনশের যেডা কওন যাইব, হেইডা তো অইন্য পাড়ার মাইনশের লগে অইন্য অফিসে কওন যাইত না। এরুম হরলে সঠিক বাংলা ভাষাও নষ্ট অইয়া যায়। আন্নের লগে থাহা তিন লম্বর বেডাডা, যে আইনহের কতা বুঝত না হের লাইগ্যা ঘডনাডা বেজাল অইয়া যাইবো।

চট্টগ্রামের হাশেমী বলেন, স্থান আর ব্যাক্তি বুঝি হতা হওন ভদ্রতা,ইবা কোন সংকীর্ণতা না। নিজ পরিবারের ল এলাকার মানুষের ল যেইল্লা হতা হওন যা এল্লা বেজ্ঞুনের লগে নো যা।এডে তোরার সমস্যা নো হইত পারের কিন্তু আরেকজন নো বুঝিত পারে কিল্লাই হদ্দি আরার দেশের বুলি আরেক দেশের গালির লান লাগে।

যতো আঞ্চলিক ভাষা আধুনিক ভাষা যাই হোক না কেন দিন শেষে আমরা এক টুকরো বাংলাদেশ। যাকে স্বাধীন করার জন্য প্রাণ দিয়েছি। যে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন বাংলার সন্তানরা। শ্রদ্ধা বাংলা ভাষার প্রতি, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি।