• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

অদ্ভুত রহস্যে ঘেরা দুধের সাগর!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২০  

সাগর ভালোবাসে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। সাগর মানুষকে এক অন্য রকম প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ করে তোলে। কোথায় এই সাগরের শুরু আর কোথায় শেষ তা নিয়ে অনেকেই ভাবেন।

এর বিশালতা ও গভীরতা সম্পর্কে এখনো অজানা রয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা সাগর নিয়ে অনেক গবেষণাই করেছেন। তবে তাদের কাছে এখন পর্যন্ত সাগর রহস্যময় রয়ে গেছে। নাসার বিজ্ঞানীদের মন্তব্য, ‘মহাকাশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যতটুকু জানেন তার চেয়ে কম জানেন সাগর সম্পর্কে’— এর থেকেই বোঝা যায় সাগর কতটা রহস্যময়।

বালুময় সৈকতে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত যে নীল দরিয়া আমরা উপভোগ। তবে তা শত সহস্র বছর ধরে বিজ্ঞানীদের কাছে জটিল রহস্যের জাল বুনে চলেছে। তেমনি রহস্যে ঘেরা রয়েছে ‘মিল্কি সি’। যা ভারত মহাসাগরের এক ক্ষুদ্র রহস্যময় অংশ।

 

মিল্কি সি

মিল্কি সি

এই সাগরের অবস্থান সোমালিয়ার দক্ষিণ উপকূলে। আড়াইশো বর্গকিলোমিটার স্থানজুড়ে এই সাগরের পানি অন্য সাগরের পানি থেকে একেবারেই আলাদা। বিশেষ করে রাতে মিল্কি সির পানি এক অপার্থিব রঙ ধারণ করে। পানির রঙের কারণেই কালের বিবর্তনে এই সাগরের নামের সঙ্গে মিল্কি অর্থাৎ দুধের ন্যায় সাদা শব্দটি জড়িয়ে পড়েছে।

ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, মিল্কি সি প্রথম মানুষের নজরে আসে ১৮৬৪ সালে। ক্যাপটেন রাফায়েল সিমেস সিএসএস আলাবামা নামক একটি জাহাজে ওই সমুদ্র পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন। জাহাজের কেবিন থেকে তার দৃষ্টিগোচর হয় সাগরের পানির এই অদ্ভুত রঙ! নাবিক রাফায়েলের ভাষায়, হঠাৎ যেন নীল পানি থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে। মনে হচ্ছে কোনো এক বরফ বিছানো মাঠের ভেতর দিয়ে আমি যাচ্ছি।

রাফায়েলের কাছে যখন মিল্কি সি বরফ বিছানো মাঠ মনে হচ্ছিল তখন অন্য ক্রুদের অবস্থা তথৈবচ! কারণ প্রাচীনকাল থেকে আঠারো শতক পর্যন্ত সাগর ছিল নাবিকদের কাছে একেবারেই রহস্যময়। তারা বিভিন্ন দেব-দেবীকে সাগরের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিশ্বাস করত। ফলে মিল্কি সি তাদের কাছে মনে হয়েছিল অত্যন্ত ভীতিকর এবং অশুভ এক জায়গা।

 

রাতের মিল্কি সি

রাতের মিল্কি সি

তবে দিন বদলের সঙ্গে সাগর এখন নাবিকদের কাছে আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্মোচিত। বিজ্ঞানের কল্যাণে মিল্কি সি’র রহস্য কিছুটা উন্মোচিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, পানির এই আলোকিত অবস্থা একশ্রেণির ব্যাকটেরিয়ার কারসাজিতে ঘটছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, এই শ্রেণির ব্যাকটেরিয়াকে বায়োলুমিনিসেন্স বলে। মিল্কি সি’র ওপর থেকে তল অবধি এই বায়োলুমিনিসেন্স ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বিদ্যমান। আর কোটি কোটি বায়োলুমিনিসেন্সই সাগরের এই অংশে আলো ছড়িয়ে পানির রঙ দুধের ন্যায় সাদা করে দিচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে বায়োলুমিনিসেন্স গঠিত হয়? কেনই বা সাগরের এই অংশে এত বেশি বায়োলুমিনিসেন্স জড়ো হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে চলেছেন। কলারাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন এমনই এক অনুসন্ধানী বিজ্ঞানী। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি মিল্কি সির ওপর গবেষণা করছেন।

 

বায়োলুমিনিসেন্স

বায়োলুমিনিসেন্স

তিনি বলেন, আমরা এখনো মিল্কি সির রহস্য ভেদ করতে পারিনি। মিল্কি সির পানি আলোকিত হওয়ার কারণ শনাক্ত করা গেলেও কেন এই অংশে এত বেশি বায়োলুমিনিসেন্স গঠিত হয় তা এখনো অজানা।

সাগরের গভীরতার চেয়ে এর রহস্যের গভীরতা অনেক বেশি। বিজ্ঞানের কল্যাণে রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয় যেদিন মিল্কি সি’র এই রহস্যের জটও খুলে যাবে।