• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মৃত্যু থেকে বাঁচতে ৩০ বছর নববধূর সাজে ‘বিশ্বাসঘাতক’ স্বামী!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২০  

মৃত্যু জীবনের চিরন্তন সত্যি। জন্মালে অবশ্যই মরতে হবে, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কারোই সাধ্য নেই মৃত্যুকে ফাঁকি দেয়ার। তবে কেউ দীর্ঘায়ু হয়, আর কেউ অকালেই প্রাণ হারায়। তফাৎ শুধু এখানেই। তবে ভারতে ঘটেছে এক অদ্ভুত ঘটনা। যেখানে এক ব্যক্তি মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়েছেন।

ভারতের উত্তরপ্রদেশের জৈনপুর জেলার হজখাস গ্রামের বাসিন্দা চিন্তাহরণ চৌহান। তিনি মৃত্যু থেকে বাঁচতে ৩০ বছর ধরে নতুন বউ সেজে রয়েছেন। কারণ চিন্তাহরণের পরিবারের সদস্যরা একের পর এক মারা যান। এরপর তার মধ্যে মৃত্যুভয় চেপে বসে।

মৃত্যু ভয় থেকে বাঁচতেই তিনি নতুন বউয়ের সাজ নেন। গায়ে বিয়ের জমকালো শাড়ি, কানে ঝুমকা, নাকে নথ, হাতে চুড়ি পরেই টানা ৩০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন চিন্তাহরণ। 

তিনি বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে হারিয়েছি। এরপর আমার পালা আসলে এই মৃত্যুর মিছিল থেমে যায়। বিয়ের কনের বেশ নেয়ার পর এমনটা ঘটে।’

তিনি জানান, মৃত্যুর ছোবল থেকে বাঁচতে তাকে কনের পোশাকে থাকার পরামর্শ দেন তার মৃত স্ত্রী। তিনিই স্বপ্নে এসে চিন্তাহরণকে এই বুদ্ধি দেন।

বর্তমানে ৬৬ বছর বয়সী চিন্তাহরণ জানান, মাত্র ১৪ বছর বয়েসে তিনি প্রথম বিয়ে করেন, মাস খানিকের মধ্যে তার স্ত্রী মারাও যান। এরপর তিনি ভাগ্যান্বেষণে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েন। ২১ বছর বয়সে পশ্চিমবঙ্গে দিনাজপুরে আসেন তিনি। এক ইটভাটায় কাজ নেন। সেখানে এক দোকানদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সূত্রে তার মেয়েকে বিয়ে করেন। তবে পরিবার আপত্তি জানালে বউকে রেখেই চিন্তাহরণ উত্তরপ্রদেশে নিজ গ্রামে ফিরে যান।

এদিকে এক বছর বাদে দিনাজপুর ফিরে এসে চিন্তাহরণ জানতে পারেন, স্বামীর ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ ও বিচ্ছেদ সইতে না পেরে তার স্ত্রী মারা গেছে। পরে তিনি তৃতীয় বিয়ে করেন। তবে তৃতীয় বিয়ের পরেই চিন্তাহরণের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্যোগ।

তিনি বলেন, গ্রামে ফিরে বিয়ে করেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি, একে একে আমার চারপাশের সবাই মারা যায়। আমার বাবা, আমার বড়ভাই, তার স্ত্রী, তাদের ছেলে-মেয়েরা, আমার ছোট ভাই সবাই মারা যায় একে একে।

চিন্তাহরণের বিশ্বাস, মৃত্যুর পর বাঙালি বউ তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়া শুরু করে। তিনি বলেন, ‘একদিন রাতে বাঙালি বউ আমার স্বপ্নে আসে। আমার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য সে কাঁদতে থাকে। আমি তার কাছে ক্ষমা চাই। তখন সে আমাকে বলে, বাকি জীবন নববধূর সাজে কাটাতে পারলে মৃত্যুভয় থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।’

তিনি বলেন, ‘স্বপ্নে স্ত্রী আমাকে বলে, নববধূর সাজে সে আমার সঙ্গে থাকতে চায়। আমি এতে রাজি হই। এরপর থেকে আমি বিয়ের পোশাক পরে থাকি। এতে আমার পরিবারের মৃত্যুর ঘটনাও বন্ধ হয়ে গেল।’ 

চিন্তাহরণ জানান, তিনি শুধু মৃত্যুকেই জয় করেননি, এতে তার স্বাস্থ্যের উন্নতিও ঘটেছে। অনেকদিন আগে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তৃতীয় স্ত্রীর। তবে তার দুই ছেলে রমেশ, দীনেশও ভালো আছে।

তাকে দেখে প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া কি? উত্তরে চৌহান বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমাকে নিয়ে সবাই হাসত। পড়ে সবাই বিষয়টি নিয়ে ঠাট্টা তামাশা বন্ধ করে দেয়। আমাকে সবাই ভালোবাসে এখানে।’