• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দুর্নীতির আখড়া থেকে দেশসেরা হাসপাতাল

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ জুন ২০১৯  

অনিয়ম, দুর্নীতি ও দালাল সিন্ডিকেটদের অবাধ বিচরণ ছিল যে হাসপাতাল, একজন পরিচালকের হাতের ছোঁয়ায় মাত্র সাড়ে তিন বছরে পাল্টে গেছে পুরো চিত্র। দালালদের দৌরাত্ম নির্মূল করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে রোগীবান্ধব একটি হাসপাতালে পরিণত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাছির উদ্দীন আহমদ।

নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা অপরাজনীতি ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চিকিৎসাসেবায় দেশের প্রথমস্থান লাভ করেছে। গত বছর দেশের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবা নিয়ে জরিপ শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে প্রতিদিন সকালে দেখা যায়, অনেক রোগী আউটডোর থেকে ওষুধের গুদামের দিকে যাচ্ছেন; হাসপাতালে সেবা এবং ওষুধের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন রোগীরা। আউটডোরের দরজায় বড় করে সিটিজেন চার্ট টাঙানো। নাগরিক হিসেবে এই হাসপাতাল থেকে আপনি কি কি সুবিধা পাবেন, তা লেখা রয়েছে ওই চার্টে। আর ইনডোর রোগীদের জন্য শতভাগ ওষুধ সরবরাহের অঙ্গীকারমূলক নোটিশ তো রয়েছেই।

 

 

গাইনি বিভাগের যে বারান্দা আঁশটে গন্ধ আর রক্তে ভরে থাকত, তাতে আজ ময়লার টুকরোও নেই; রান্নাঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রোগীদের জন্য রান্না করা খাবারের সুগন্ধে মাঝে মাঝে ডাক্তাররাও আফসোস করেন- কেন যে রোগী হলাম না! ডাক্তারদের নিরাপত্তার জন্য আছে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় সিসি টিভি ক্যামেরা আর স্টাফদের প্রত্যেকের সঠিক ইউনিফর্ম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সালের পহেলা নভেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি এ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ নানামুখী উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন করেন। তার সময়ে সরকারি এ হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে শতভাগ ওষুধ, মানহীন খাবারের পরিবর্তে উন্নত খাবার, দালালদের হাসপাতাল ছাড়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।  

হাসপাতালের অতীত তথ্য থেকে জানা যায়, সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণ, সিন্ডিকেটদের চরম বেপরোয়া কর্মযজ্ঞে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হতেন। ঠিক তখনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপালের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন। অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েই উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার মিশনে নামেন তিনি। প্রথমেই দালালদের হাসপাতাল ছাড়া করেন তিনি। হাসপাতালে কর্মরত বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে কঠোর পরিশ্রম করেন। এই ডিপার্টমেন্ট থেকে সেই ডিপার্টমেন্ট দুর্নীতি অনিয়ম হাতেনাতে ধরতে বিরামহনি দৌড়ঝাঁপ করেছেন তিনি। সাড়ে তিন বছরে সব অপশক্তির সঙ্গে আপসহীন লড়াই করেছেন। এক সময়ের কসাইখানাকে পরিপূর্ণ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলেছেন ক্লিনম্যান খ্যাত এ পরিচালক। অতিরিক্ত রোগীর দুর্ভোগ লাগবে ২৪ ঘণ্টায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করেছেন। এর ফলে ২৪ঘণ্টা সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন রোগীরা।

বাংলাদেশে সব সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উন্নত চিকিৎসাসেবার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। হাসপাতালে সরকার থেকে বরাদ্দকৃত মেডিসিন শতভাগ বিতরণ, সব প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা নামমাত্র মূল্য করাসহ উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়ার ফলে দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

 

 

এসব উদ্যোগের ফলে ময়মনসিংহের ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের মাথায় হাত পড়েছে। হাসপাতালের বাইরের  ফার্মেসিতে মেডিসিন বিক্রিসহ দুর্নীতিবাজদের সব ব্যবসা অনেকটাই বন্ধের পথে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সব দুর্নীতিবাজরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহম্মেদকে বদলি করতে কোটি টাকার ফান্ডও গঠন করে।

পেশাজীবী চক্রের নেতৃত্বে নগরীর অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক, ওষুধ ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় চিহ্নিত দালালদের একটি চক্র পরিচালককে বদলি করাতে সক্ষম হলেও তা কার্যকর করতে পারেনি। রোগী দরদী পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহম্মেদ বদলির সংবাদে ও বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মাঠে নামেন ময়মনসিংহের লাখো জনতা। বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করে ময়মনসিংহবাসী। ময়মনসিংহবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালকের বদলির আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

সম্প্রতি সময়ে আবারো পরিচালকের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে দালাল চক্র। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজারো মানুষ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিখেছেন ভয় পাবেন না স্যার, এগিয়ে যান আমরা আছি আপনার পাশে। আবার অনেকেই লিখেছেন, আপনার মতো ভালো মানুষের জন্য ময়মনসিংহবাসী জীবন দিতেও প্রস্তুত। বিরামহীন পরিশ্রম, আর কর্মগুণে গোটা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চালচিত্র পরিবর্তনকারী পরিচালককে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি ময়মনসিংহের রাজনৈতিক ব্যবসায়িক সাংস্কৃতিক সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনেরা।