• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

কাতারে মুখোমুখি তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯  

আফগান তালেবানের নতুন রাজনৈতিক নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার শনিবার কাতারে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে যোগ দিয়েছেন; যাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মোল্লা বারাদার যে এ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন এতেই মনে করা চলে যে; এতদিন থেমে-থেমে চলতে থাকা শান্তি প্রক্রিয়ায় এবার কিছু অগ্রগতি হলেও হতে পারে। মার্কিন কর্মকর্তারা মেনে নিয়েছেন যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। আর তালেবান রাজি হয়েছে যে তারা জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) প্রতিহত করবে - যেন তারা বিদেশী বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতে না পারে।

মোল্লা বারাদার গত বছর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গত শুক্রবার তালেবানের রাজনৈতিক বিষয়ক নেতার পদে নিযুক্ত হন। আলোচনায় তার উপস্থিতির ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ দ্রুততর হবে বলে সবাই আশা করছেন।

আফগানিস্তানে সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে কাতারে ছয়দিন ধরে এই আলোচনা চলছে, যাতে আরো যোগ দিয়েছেন বিশেষ মার্কিন দূত জালমে খলিলজাদ।

কে এই মোল্লা বারাদার?

মোল্লা আবদুল গনি বারাদার তালেবান আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং তাদের রহস্যময় সাবেক নেতা মোল্লা ওমরের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মোল্লা ওমরই নাকি তাকে বারাদার ছদ্মনাম দিয়েছিলেন - যার অর্থ বেরাদর বা ভাই।

তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফগানিস্তানে তালেবানের সামরিক কর্মকাণ্ডের অধিনায়ক। তার বয়স এখন ৫০-এর কোটায় বলে ধারণা করা হয়। ২০১০ সালে পাকিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি বিশেষ দল তাকে গ্রেফতার করে। এর পর থেকেই তিনি বন্দী ছিলেন এবং মাত্র গত বছরই অক্টোবর মাসে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান।

তখন শোনা গিয়েছিল যে তার স্বাস্থ্য ভালো নয় এবং তালেবানের নেতৃত্বদানকারী কাউন্সিলে যোগ দেয়ার আগে তাকে বিশ্রাম নিতে হবে। পাকিস্তানে বন্দীদশায় থাকার সময় তাকে প্রায়ই ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হতো বলে তার সাথে দেখা করতে যাওয়া লোকেরা টের পেয়েছেন।

তালেবান প্রায় প্রত্যেকদিনই পশ্চিমা জোট সমর্থিত আফগান সরকার এবং তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। তারা আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেক ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে এবং বলা হয় যে ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এখনই তারা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী।

সুইজারল্যান্ডসের দাভোসে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি গত সপ্তাহে বলেন, ২০১৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর ৪৫ হাজার সদস্য নিহত হয়েছে।

এই আলোচনা কী ফলপ্রসূ হবে?

মার্কিনীরা এই গ্যারান্টি চাইছে যে আফগানিস্তান যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালানোর জন্য আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। তালেবানের জ্যেষ্ঠ এক নেতা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এ আশ্বাস তালেবান দিয়েছে যে তারা সন্ত্রাসী আক্রমণের জন্য আফগানিস্তানকে ব্যবহারের জন্য জঙ্গীদের যে কোন চেষ্টার বিরোধিতা করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতা বলেন, তারা ইসলামিক স্টেটের সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করতে ইচ্ছুক কিন্তু আল-কায়েদার সাথে নয়; কারণ তারা তালেবান নেতা শেখ হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে তাদেরও নেতা বলে মনে করে। এর আগে আল-কায়েদার সাথে সম্পর্ক ছেদ করতে তালেবান অস্বীকার করেছিল; যা নিয়ে বিতর্কের সময় কাতারের এ বৈঠকে তালেবান প্রতিনিধিরা একবার ওয়াকআউটও করেন।

অন্যদিকে, আফগান সরকারের সাথে তালেবান কথা বলতে রাজি নয়। পশ্চিমা এবং আফগান কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মোল্লা বারাদারকে প্রধান আলোচক হিসেবে এ আলোচনায় নিয়ে এসে আলেবান ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা একে 'সিরিয়াস' ভাবে নিচ্ছে - এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে।

কারণ মোল্লা বারাদার তালেবানের একজন শীর্ষ নেতা এবং একজন বাস্তববাদী; তিনি এমন এক ব্যক্তি যার সিদ্ধান্ত সংগঠনের অন্যেরা মেনে নেবে। একজন তালেবান কমান্ডার আবদুল রহমানও নিউইয়র্ক টাইমসের মুজিব মাশালকে এ কথা বলেছেন।

এর আগে এই শান্তি আলোচনায় তালেবান প্রতিনিধি পাঠানো নিয়ে কিছু হাস্যকর ঘটনা ঘটেছিল। ২০১০ সালে আলোচনায় যাকে তালেবানের দু'নম্বর নেতা মোল্লা আখতার মোহাম্মদ মনসুর সাজিয়ে পাঠানো হয়েছিল; সে আসলে ছিল কোয়েটা শহরের এক দোকানদার।

২০১৫ সালে আফগান কর্মকর্তাদের সাথে পাকিস্তানের এক শহরে তালেবান প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বলা হয়েছিল যে এই দলটি তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু কয়েকদিন পরই খবর বেরোয় যে মোল্লা ওমর বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন।

মোল্লা বারাদারির আলোচনার টেবিলে আসাকে এসব কারণেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।