• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে এই নারীর মল

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯  

ক্লডিয়া ক্যাম্পেনেলা যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কাজ করেন। কিন্তু অবসর সময়ে তিনি যে কাজ করেন সেটা শুনলে অন্য রকম লাগতে পারে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে এই নারী নিজের মল অন্যদের দান করেন।

ডাক্তাররা বলছেন, ক্লডিয়ার মলে এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে, যা অন্যের দেহে প্রতিস্থাপন করে বিভিন্ন পেটের রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। রোববার বিবিসি বাংলার অনলাইন প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ক্লডিয়ার বয়স ৩১। তিনি এটাকে রক্তদানের মতোই স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধু মনে করে এটা একটা জঘন্য এবং উদ্ভট ব্যাপার। কিন্তু এটা আমাকে বিচলিত করে না। এটা দান করা খুবই সহজ এবং আমি চিকিৎসা গবেষণায় অবদান রাখতে পেরে খুশি।

মানুষের পেটের ভেতরকার নাড়িভুঁড়ি অর্থাৎ অন্ত্রের মধ্যে বাস করে অসংখ্য রকম অণুজীব। কিন্তু বর্তমান যুগে মানুষ যে অ্যান্টিবায়োটিক খায় তা অনেকসময় শরীরের ভালো এবং খারাপ দুধরনের ব্যাকটেরিয়াকেই নির্বিচারে মেরে ফেলে। ব্যাকটেরিয়া নির্মূল হয়ে যাবার পর যে বিরান পরিবেশ তৈরি হয় তাতে ক্লস্ট্রিডিয়াম ডিফিসিল নামে বিশেষ এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি ঘটাতে থাকে। এর ফলে এমন ডায়রিয়া হয় যার সঙ্গে রক্তপাত, জ্বর এবং পেটব্যথা হতে পারে এবং অনেকক্ষেত্রে এটা এত গুরুতর আকার ধারণ করে যে রোগী মারা যায়।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, এই পরিস্থিতিতে আরো অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার চাইতে ভালো বিকল্প হিসেবে বেরিয়ে এসেছে এই মল প্রতিস্থাপন চিকিৎসা। অর্থাৎ একজন সুস্থ ব্যক্তির মল থেকে ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো সংগ্রহ করে তা রোগীর মলদ্বার দিয়ে শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া।

ক্লডিয়ার মলে নাকি এত বেশি ভালো ব্যাকটেরিয়া আছে যে তা রীতিমতো বিরল। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন সুপার পু যার মধ্যে ভালো ব্যাকটিরিয়ার চমৎকার সমন্বয় ঘটেছে এবং ক্লডিয়া হচ্ছেন একজন সুপার ডোনার বা দাতা।

ক্লডিয়া একজন ভেগান অর্থাৎ নিরামিষভোজী আর নিরামিষভোজীরা ভালো মলদাতা হতে পারেন-এটা জানার পরই তিনি একজন ডোনার হতে আগ্রহী হন। অবশ্য ভেগানদের মল যে অন্যদের চেয়ে ভালো এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো নেই।

বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা চালাচ্ছেন যে কেন ‘সুপার পু’-ওয়ালারা এত বিরল। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ড. জাস্টিন ও’সুলিভান একজন অনুজীব বিশেষজ্ঞ। তার কথা, সুপার পু কেন এত বিরল এটা বের করতে পারলে আমরা শুধু যে মল প্রতিস্থাপনে সাফল্য বাড়াতে পারব তাই নয়, আলঝেইমারস ডিজিজ, হাঁপানি এবং মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস-এর মতো ব্যাকটেরিয়াঘটিত অন্য রোগেরও চিকিৎসায় একে কাজে লাগানো যাবে।

ব্রিটেনের ওয়েস্ট হার্টফোর্ডশায়ার হাসপাতালের একজন কনসালট্যান্ট ডাক্তার জন ল্যান্ডি। তিনি বলেন, ‘কী কারণে একজন ‘সুপার পু’ ডোনার হন, তা আমরা এখনো জানি না। এদের পাওয়াও খুবই বিরল।’

আমাদের দাতারা যেন স্বাস্থ্যবান হন এবং তাদের দেহে কোনো রোগ না থাকে-এটা অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করি। কিন্তু তাদের মলে সব রকমের মাইক্রোবায়োম আছে কিনা তা আমরা পরীক্ষা করে দেখি না।

ড. ওসুলিভ্যানের গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মলে বহু রকমের অণুজীব আছে এবং যাদের প্রতিস্থাপিত মল রোগীর দেহের সঙ্গে ম্যাচ করে তারাই আসলে চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি সাফল্য এনে দেন। তবে ভবিষ্যতে এমন পদ্ধতিও বৈজ্ঞানিকরা বের করার চেষ্টা করছেন মল প্রতিস্থাপন না করে বিকল্প কোনো পথে চিকিৎসা করা যায়।