• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

গ্যাসের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ কীভাবে উপকৃত হবেন?

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০১৯  

জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বিশাল অঙ্কের বাজেট পাস হলো ৩০ জুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই বাজেট থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। বাজেট নিয়ে প্রশংসা ও সমালোচনা দুটোই আছে। বাজেট ধনীদের অনুকূলে বলে অনেকেই বলেছেন। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের জন্য বাজেটে তেমন উদারতা দেখানো হয়নি বলেও সমালোচনা আছে।

বাজেট নিয়ে আমি আলোচনায় যাব না। আমি বাজেট-বিশেষজ্ঞ কিংবা অর্থনীতিবিদ নই। বাজেটের বড় বড় অঙ্ক আমার মাথায় ঢোকে না। বাজারে গিয়ে বাজেটের অজুহাতে যখন নিত্যপণ্যের দাম বেশি দেখি তখন আমি উৎসাহিত বোধ করি না। আমার আয় বাড়ে না, ব্যয় বাড়ে। আমি দেশের উন্নয়ন দেখি আর দেখি ব্যয় বৃদ্ধি। আবার প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন বাজেটের সুফল সবাই পাবে, তখন আশাবাদী হই এই ভেবে যে, যাক, তাহলে আমিও বঞ্চিত হব না।

 ‘গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে একটি রীট মামলায় উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, পেট্রোবাংলা ও তিতাসের দুর্নীতির ৫০ ভাগও যদি কমানো যায় তাহলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। আদালত এই দুই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনেরও সমালোচনা করেছিলেন।’  

কিন্তু আমার আশা খুব বেশি সময় স্থায়ী হয় না। কারণ বাজেট পাসের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়লে কীভাবে সাধারণ মানুষের উপকার হবে আমি তা ঠিক বুঝতে পারছি না। গ্যাসের উৎপাদন, এল এন জি আমদানি, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যয় এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে আগে থেকেই। এ নিয়ে গণশুনানি হয়েছে। গণশুনানিতে কেউ গ্যাসের দাম বাড়ানোর পক্ষে বলেছেন বলে শুনিনি। বরং এটাই বলা হয়েছে যে, অদক্ষতা, দুর্নীতি এবং অনিয়ম বন্ধ করতে পারলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে একটি রীট মামলায় উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, পেট্রোবাংলা ও তিতাসের দুর্নীতির ৫০ ভাগও যদি কমানো যায় তাহলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। আদালত এই দুই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনেরও সমালোচনা করেছিলেন।

বর্তমান সরকার নিজেদের জনবান্ধব সরকার দাবি করে থাকে। জনকল্যাণকামী একটি সরকারের উচিত ছিল দুর্নীতি ও অপচয়-অনিয়ম রোধে শক্ত ব্যবস্থা করা। সিসটেম লসের নামে হরিলুট বন্ধের কঠিন পদক্ষেপ না নিয়ে দাম বাড়িয়ে ক্ষতি পোষানোর সহজ পথ গ্রহণ করেছে সরকার। এতে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ হয়তো খুশি হবে কিন্তু অখুশি হবে ব্যাপক মানুষ। রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোতে সরাসরি চাপে পড়বে অনেকের ওপর। দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহার করেন না, এটা ঠিক। কিন্তু সে জন্য যারা ব্যবহার করেন তাদের ওপর চাপ বাড়ানোটা যুক্তিযুক্ত হয় কি? যানবাহনের জ্বালানির দাম বাড়ানোর ফলে গণপরিবহনে ভাড়া বাড়বে। ভাড়া বাড়লে কি যাত্রীদের উপকার হবে?

গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে শিল্পবাণিজ্যিক খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা। শিল্প ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। তবে উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি উৎপাদন খরচ তুলবেন পণ্যের দাম বাড়িয়ে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা কি জনবান্ধব সরকারের কাছে প্রত্যাশিত?

চুরি ও দুর্নীতির কারণে ১২ শতাংশ সিস্টেমলসের কথা শোনা যায়। এই সিস্টেমলস কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় কঠোরতা গ্রহণের পরিবর্তে সরকার কেন সাধারণ মানুষের পকেট কাটার পথ বেছে নিচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। সরকার দেশকে উন্নতির দিকে নিচ্ছে, ভালো কথা। কিন্তু উন্নয়নের সুফল সবাই সমানভাবে ভোগ করতে পারছে কিনা সে প্রশ্ন সামনে আসছে। সম্পদ মুষ্টিমেয় মানুষের কুক্ষিগত করার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে তা এক সময়ে বড় ধরনের সামাজিক অসন্তোষ ও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

দেশে এখন সরকারবিরোধী রাজনীতি নেই বললেই চলে। বিরোধী দলের নিষ্ক্রিয়তা বা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সরকার যদি সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়, তাহলে মানুষের বিরূপতা দীর্ঘ সময় চাপা থাকবে না। গ্যাসের দাম বাড়ানোটা মানুষকে ক্ষুব্ধই করেছে।