• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সেশনজট উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া- বেরোবি ভিসি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৯  

২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ভিসি হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তিনি ২০১৭ সালের ১৪ জুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ক্যাম্পাসের কিছু বিষয়ে ‘ডেইলি বাংলাদেশে’র সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। 

ক্যাম্পাসে শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণা, সেশনজট নিরসন, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ আরো কিছু বিষয়ে ‘ডেইলি বাংলাদেশে’র সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদিব হোসাইন। 
   
ভিসি হিসেবে যোগ দেয়ার পরই আপনি বলেছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ক্যাম্পাসকে ব্রান্ডিং করার জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?

- দৃষ্টিনন্দন ও বিশ্বমানের ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে এরইমধ্যে আধুনিক ও উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাস্টারপ্ল্যান করেছি। স্টেইকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময়ও হয়েছে। এখন সরকারের উর্ধ্বতন পর্যায়ে বিষয়গুলো হাজির করবো। আর আমাদের চিন্তা আছে মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে যদি বিপুল অঙ্কের অর্থ ইনজেক্ট করতে পারি তাহলে একটা চোখ ধাঁধানো পরিবর্তন দেখতে পারবো। এ অঞ্চলের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক, উত্তরের বাতিঘর বলে পরিচিত এ বিশ্ববিদ্যালয় তার নতুন রুপে প্রস্ফুটিত হবে। এখন আমাদের চিন্তা আছে বর্তমানে যে ৭৫ একর জায়গা জুড়ে ক্যাম্পাস আছে তা দ্বিগুণ পরিসরে নিয়ে যাওয়া।

অভিযোগ আছে আপনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন না? এ অনুপস্থিতি প্রশাসনিক কাজে কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন? 

- শুনে অবাক হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০-২২ ঘণ্টা ব্যয় করি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো আর কোনো মানুষ প্রতিষ্ঠানের জন্য এতো সময় ব্যয় করতে পারে না। দীর্ঘদিন একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরকে এভাবেই তৈরি করেছি। ফিজিক্যালি কোথায় অবস্থান করলাম এটা একটা ব্রিটিশ আমলের ট্রেডিশন। তখন কানেকটিভিটির যুগ ছিলো না তাই নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকতে হতো চাইলেও এর বাইরে যেতে পারতো না। কার্যসম্পাদনে সেখানে থাকাটাই জরুরি ছিলো। এখন কানেকটিভিটির যুগ আমরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। মূল বিষয় হচ্ছে কাজটা হচ্ছে কিনা।

অনেক বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও তারা দীর্ঘদিনের সেশনজটে। আবার কোনো বিভাগে কম শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও সেশনজট নেই। এর পেছনে কি শিক্ষক সংকটে দায়ী না তাদের আন্তরিকতাই বড় বাধা?

- আংশিকভাবে উভয়ই দায়ী। সেশনজট মূলত উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। কারণ কোথাও তিন-চার এমনকি পাঁচ বছরও বিদ্যমান আবার কোথাও শূন্য এটি আমাকে অবাক করে। এখানে সমস্যা নানাবিধ কোথাও দেখা যাচ্ছে এমন শিক্ষক আছেন যিনি নিয়োগের শর্ত বরখেলাপ করেছেন। পদার্থ বিভাগের শিক্ষক হয়ে পড়ানোর জন্য প্রবেশ করেছেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। হয়তো নিয়োগের শর্তে ছিলো যখনই পদার্থ বিভাগ খোলা হবে আপনি চলে যাবেন কিন্তু তিনি এখনো থিতু হয়ে আছেন। এরকম নানাবিধ সমস্যা আছে। মনে করেন প্রাথমিকভাবে আপনি যোগদান করতেছেন প্রভাষক পদে পরে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক অর্থাৎ আপনি যতো উপরে যাচ্ছেন টিচিং আ পাঠদান অর্থে লোড কমানো উচিত কিন্তু আপনার গবেষণা অর্থে দায়দায়িত্ব বাড়ছে। এ বিষয়টা আমরা অধিকাংশ সময় ভুলে থাকি। আর আমাদের মাঝে এমন  প্রবণতা আছে  যে আমার দায় আরেকজনের উপর চাপিয়ে দিলাম যে উনি কাজটা করতেছেন না আমি কেনো করবো। এ সমস্যাগুলো নিরসনে সিন্ডিকেট পদক্ষেপ নিয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে। 

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ লাইব্রেরিতে অনেক বিভাগের বই নেই এর পেছনে মূল কারণ কি? 

- কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নানান ধরনের প্রসিডিউর ও প্রতিবন্ধকতা আছে। আমি যোগদানের প্রথম মাসেই ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছি। কিন্তু সেই টাকাগুলো ব্যয় করতে নানান ধরনের বেগ পোহাতে হচ্ছে। আর একটা খুশির খবর টাকাগুলো আমরা খরচ করিনি। কারণ ক্রমে আমাদেরকে ই-বুক, ই-জার্নালের দিকে ধাবিত হতে হচ্ছে। এনালগ থেকে ডিজিটাল যে ট্রান্সফরমেশন সেটা নিশ্চিত করতে হলে এই রিসোর্চটা যদি ই-পার্সপেকটিভে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের অনেক উপকার হব। 

স্থায়ী ব্যাংক বুথ না থাকায় বড় ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ সমস্যা সমাধানে আপনার পদক্ষেপ কি? 

- আসলে এটি একটি জেনুইন প্রবলেম। এ সমস্যা নিরসনকল্পে আমরা এরই মধ্যে একটি সরকারি এবং একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়। শাখা ব্যাংকের উদ্বোধনের কাজগুলো বাস্তবায়ন হলেই এ সমস্যার সমাধান হবে চিরতরে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১১ বছরেও কোনো সমাবর্তন হয়নি। আপনার মেয়াদের বাকি সময়ে কি এ ধরনের আয়োজনের চিন্তা ভাবনা আছে? 

- যোগদানের পরই সমাবর্তনের প্রস্তুতি হিসেবে ওপেনিং কনভোকেশন বা উদ্বোধনী সমাবর্তন চালু করেছি। এর মাধ্যমে হাতে কলমে সমাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আসলে এ ধরনের আয়োজনের জন্য অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন। আশা করছি আরো দুই একটি ব্যাচ বের হলে পর্যাপ্ত সংখ্যক এলামনা-সরঞ্জাম নিয়ে আমার আমলে একবার হলেও সমাবর্তনের আয়োজন করব। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরক্ষার সময় প্রতিবারই হল বন্ধ রাখার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা নিরসনে আপনার পদক্ষেপ কি? 

- গত বছর ভর্তি পরীক্ষার আগে আমরা একটি কমিটমেন্ট প্রদান করেছি যে ভর্তি পরীক্ষার সময় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় হল চালু রাখতে পারলে আমরা কেনো পারবো না। আসলে এই ট্রেডিশনটা আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। এখন আমাদের একটা চিন্তা আছে যারা নিয়মিত বৈধ শিক্ষার্থীরা শুধু তারাই হলে থাকতে পারবে। আর ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ভাই-ব্রাদারদের হলে আশ্রয় দেয়া যে তারা পরীক্ষা দেবে এই ফেসিলিটি প্রদানের কোনো ব্যবস্থা রাখা হবে না। পরিষ্কার কথা যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী তারাই শুধু হলে অবস্থান করতে পারবে।

হলে ভর্তুকি না থাকায় বেশি মূল্যে ও নিম্নমানের খাবার খেতে হয় শিক্ষার্থীদের। হলে ভর্তুকি না থাকার কারণ কি? 

- হলে বৈধ শিক্ষার্থী অবস্থান করলে ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে। কিন্তু শতকরা ২০ জন নিয়মিত আর ৮০ জন অনিয়মিত এখন তারা যদি দাবি করে হলে ভর্তুকি দিতে হবে তাহলে এটা অযৌক্তিক। আমরা হলে আর মাথাফাঁড়ি ডাইনিং মেইনটেইন করবো না। ৫ জন যদি বৈধ শিক্ষার্থী হন তাহলে ৫ জনে মিল ফেসিলিটিজ পাবে। আর সেজন্য প্রয়োজনীয় জনবল রেখে বাকিদের ছাটাই করবো। আর একটা বিষয় ফাও খাওয়ার কালচার থেকে বেড়িয়ে আসতে চাই। আপনারা নেতা বা নেত্রী সেজে আপনাদের সাগরেদ বা অনুগতদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করবেন এটা স্ববিরোধী অবস্থান ছাড়া কিছুই নয়।

আপনি পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে কতটুকু চেলেঞ্জিং মনে করেন?

- শিক্ষকতা এটা একটা ব্রত। এটা চাকরি হিসেবে গ্রহণ না করে সেবার ব্রত হিসেবে গ্রহণ করা উচিৎ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রেন্ডিং এর প্রয়োজনে দৈনিক ২০-২২ ঘন্টা কাজ করে থাকি। অনেকে বলে আমি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সময় দেই কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয় যেন পরিচিতি লাভ করে। আমি পরিচয় দেই বেগম রোকয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং আমি সব সময় আইডেন্টিটি গলায় ধারন করি। একজন শিক্ষকের দায়িত্ব শুধু বক্সে টিক দিয়ে কর্মক্ষেত্রে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়া নয়। কর্মক্ষেত্র বলতে সারা বাংলাদেশকে বুঝায়।

ডেইলি বাংলাদেশকে দীর্ঘ এ সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

- আপনাকে এবং ডেইলি বাংলাদেশকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।