• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ডাকাতি না করেও নিয়মিত গুরুদক্ষিণা পেতেন দিলীপ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

ডাকাত সর্দার দিলীপ সাহা ওরফে মো. সোহেল।  রাজধানীর তুরাগ ও মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার হত্যা মামলায় কারাগারে ছিলেন ৩২ মাস। ২০১৮ সালে জামিনে বের হওয়ার পর মনে মনে পণ করেছিলেন আর ডাকাতি করবেন না। শিষ্যদের তা জানিয়েও দিয়েছিলেন।

 তবে থেমে ছিল না গুরুদক্ষিণা। অপারেশনে উপস্থিত না থাকলেও শিষ্যরা তার মোবাইল একাউন্টে পাঠিয়ে দিতেন একটি অংশ। গ্রেফতারের পর তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন দিলীপ। অন্যদিকে, ২৭ পারা কোরআনের হাফেজ থেকে দুর্ধর্ষ ডাকাত বনে যাওয়া আবু জাফর বিপ্লবকে নিয়ে রীতিমতো বিস্মিত তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। ডাকাতির পাশাপাশি তার রয়েছে অনলাইনে চিংড়ি ও গাড়ির ব্যবসা। গত ২১ জানুয়ারি আবদুল্লাহপুর থেকে রাজশাহীগামী আরকে পরিবহনে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার আলআমিন, আবু জাফর ওরফে বিপ্লবসহ পাঁচজনই দিলীপের শিষ্য। তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগে চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

ডিবির (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে দিলীপ মাস্টার মাইন্ড। তার অনেক শিষ্য নিজেই ডাকাত দল গঠন করেছেন। তারা বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়েছেন। তবে জামিনে বের হয়ে পুনরায় একই কাজে লিপ্ত হয়েছেন তারা। জানা গেছে, ডাকাত সর্দার দিলীপের শিষ্যরাই এখন নিজেরা দল গঠন করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন। জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় ফেরেন ডাকাতিতে। দিলীপ রাজধানীর মিরপুর ও দারুস সালামে এক সময় সবজি বিক্রি করতেন। এ পর্যন্ত তিন শতাধিক ডাকাতিতে তার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তার শিষ্যদের মধ্যে বর্তমানে শাকিল, সাভারের ইলিয়াস ওরফে বাপ্পী ও অটোরিকশা চোর মামুন, রফিকুল ইসলমা পাখি এবং টিটো ডাকাতিতে সক্রিয়। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে দিলীপ জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে ডিএমপির তুরাগ ও ২০১৬ সালে মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার দুটি হত্যা মামলার আসামি তিনি। দুই মামলায় ৩২ মাস কারাভোগের পর তিনি পণ করেছিলেন আর ডাকাতি করবেন না। ২০১৮ থেকে মনেপ্রাণে অবসর নিলেও শিষ্যদের ডাকে মাঝে-মধ্যে তিনি সাড়া না দিয়ে পারেন না। তার শিষ্যরাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির আলাদা দল গঠন করে কর্মকা  চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে ডাকাতি ছেড়ে দিলেও শিষ্যদের কারণে তিনি পুরোপুরি ছাড়তে পারছেন না। তাদের অনুরোধ ও ভালোবাসাকে উপেক্ষা করতে পারেন না তিনি। শিষ্য আল আমিন জেলে ছিলেন। গত ১ জানুয়ারি জেল থেকে মুক্তি পান। ওই দিন থেকেই তার একের পর এক ফোনে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি। ৪ জানুয়ারি একটি অপারেশনে অংশ নিতে বাধ্য হন। দিলীপ জানান, আমার শিষ্যরা বলে, ‘আমি উপস্থিত থাকলে নাকি তারা বিশেষ শক্তি পায়। নইলে মোবাইল ফোনে তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়।’ দিলীপ আরও জানান, ২০০৩ সালে তিনি আফসু নামে একজনের পরামর্শে জড়িয়ে পড়েন ডাকাতিতে। একপর্যায়ে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হন। নাম পাল্টিয়ে দিলীপ থেকে হয়ে যান সোহেল। বিয়ে করেন কুষ্টিয়া ও পাবনায়। বিভিন্ন ঘটনার পর শ্বশুরবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় তাকে আত্মগোপনে চলে যেতে হতো। এক্ষেত্রে নাম পরিবর্তন তাকে বেশ সহায়তা করত। ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, সাভারে পড়ে থাকা লাশের সূত্র ধরে ২০২০ সালের অক্টোবরে বাস ডাকাত চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। তখন গ্রেফতার হয়েছিলেন ২৯ বছর বয়সী পরিবহনকর্মী আল আমিন। উত্তরা পশ্চিম থানায় ৩০ জানুয়ারি টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শফিকুল ইসলামের করা মামলায় তার সংশ্লিষ্টতা পায় ডিবি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহাদত হোসেন সোমার নেতৃত্বাধীন তদন্ত দল। শুধু আল আমিন নন, ২০২০ সালে ডাকাতি ও হত্যার অভিযোগে পিবিআই যাদের শনাক্ত করেছিল, তাদের অনেকেই সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ডাকাতিতে যুক্ত বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী।
পুলিশ বলছে, জামিনে বেরিয়ে আবারও অপকর্মে জড়িয়েছেন আল আমিন। সঙ্গে কিছু পুরনো সহযোগীও রয়েছেন। তারা প্রাইভেট কারের পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাস ভাড়া নিয়ে যাত্রী তুলে ডাকাতি করতেন। এডিসি শাহাদাত বলেন, গ্রেফতাররা দিনে সাইন বোর্ড হিসেবে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকতেন। তবে তারা দুর্ধর্ষ ডাকাত। দিলীপ তাদের কাছে আদর্শ। তিনি ডাকাতিতে অংশ না নিলেও তার শিষ্যরা তার কাছে অংশ পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার শিষ্যরা ডাকাতি করে বেড়ান। উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় গ্রেফতার বিপ্লব, আল আমিন, সজীব ও শাহনেওয়াজ বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন। জামিনে বের হয়ে তারা পুনরায় ডাকাতি পেশায় ফিরেছেন। জানা গেছে, বিপ্লব ২৭ পাড়া কোরআন মুখস্ত করার পর সাতক্ষীরা নলতা দারুল উলুম মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন। একটি মসজিদে এক মাস ইমামতিও করেছেন।

এরমধ্যে ২০০০ সালের হঠাৎ ঢাকার গাবতলীতে চলে এসে চাকরি নেন গার্মেন্টে। বিপ্লব ডাকাতির পাশাপাশি অনলাইনে চিংড়ি ব্যবসা করেন। ফেসবুকে ‘এলটি চিংড়ি হাউস’ নামে একটি পেজ রয়েছে। তার অনুপস্থিতিতে স্ত্রী টিনা ব্যবসাটি সামলাতেন। ২০১৫ সালে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন বিপ্লব। সেবনের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন মাদকবাণিজ্যে। সর্বশেষ ২৮ মাস জেলে থাকাবস্থায় দুই সন্তান এবং তাকে ছেড়ে স্ত্রী চলে যান। সাভার থানায় ২০১৮ সালে ১০০ গ্রাম হেরোইন এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ৫০০ ইয়াবা মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। এর আগে ২০১৬ সালে হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন বিপ্লব।