• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

অতিথি পাখিতে মুখর মানিকগঞ্জের ‘নিলুয়া বিল’

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

মানিকগঞ্জের ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত নিলুয়া বিল। প্রতি বছরের মতো এবারো বিলটিতে অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাখিপ্রেমীরা দল বেঁধে আসছেন বিলটিতে পাখি দেখার উদ্দেশ্যে।

শীত আসলেই নিলুয়া বিল অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে। পিয়াংহাঁস, পাতি সরালি, রাজসরালি, গ্যাডওয়াল, লেঙজা হাঁস, বালিহাঁস, পাতিকূটসহ দেশী জাতের শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নিহাঁস, তিব্বতীয় মানিকচক, সাইবেরিয়ান ফিদ্দাসহ বিভিন্ন প্রজাতির নাম জানা অতিথি পাখি বিল এলাকাকে মুখরিত করে তুলছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুব রহমান বলেন, ‘শীতকাল এলেই নিলুয়া বিলে অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে।  খুব বড় না হলেও  বিলটির পাখির কারণে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।  পাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি, উড়েচলা, নীরবে বসে থাকা মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাই দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এক নজর পাখি দেখার জন্য এখানে আসেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘মূলত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে অতিথি পাখিরা এই বিলটিতে আসতে শুরু করে। মার্চের শেষ দিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়। ৬/৭ বছর আগে এই বিলে প্রথম অতিথি পাখি আসে।’

চকমিরপুর এলাকার তৌফিক হোসেন বলেন, ‘শান্ত জলের বুকে কচুরিপানার সবুজ গালিচার মাঝে ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলছে অতিথি পাখির দল।  উড়ে চলা পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত চারপাশ।  নিলুয়া বিলে প্রতিবছর শীত মৌসুমে হয়ে ওঠে যেন পাখির আবাসস্থল। এবারও এ বিলে আবাস বেঁধেছে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখিসহ হাজারো অতিথি পাখি। তাদের মধ্যে পাতি সরালি’র সংখ্যাই বেশি। ’

স্থানীয়রা জানান, দলবেঁধে যখন পাখিগুলো আকাশে ওড়ে, তখন মনে হয় তারা যেন মালার মতো দুলে উঠছে। যদিও বিলটিতে এখন পানি অনেকটাই কমে গেছে, তবুও এর সৌন্দর্য কমেনি এতটুকুও। বিলের এক পাড় সিসি ব্লক বসানো হয়েছে। বিকালে বয়স্ক ও তরুণ তরুণীরা পাখি দেখে মোবাইল ফোন সেটে সেলফি তোলে, পাশাপাশি ফুচকা-চটপটি খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে।

মুনীর হোসেন বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে কয়েকজন শিকারী এখান থেকে পাখি শিকার করে। এরপরপর থেকেই পাখির সংখ্যা কমতে শুরু করে।  কিন্তু চলতি বছর  পাখির আনাগোনা বেড়েছে। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে পাখি দেখতে আসেন। এ উপলক্ষ্যে ৪ মাস দোকানপাটগুলোতে বেচাকেনা বেড়ে যায়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিলটির সৌন্দর্য আরো বেড়ে যাবে।’

মানিকগঞ্জ পাখি পালন করি (পালক) কমিটির সদস্য দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘অতিথি পাখিদের বিচরণ নিরাপদ করার জন্য পাখি শিকার ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সাধারন মানুষের একটু সচেতনাই পারে অতিথি পাখিদের রক্ষা করতে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের নজনদারিও বাড়াতে হবে।

ঘিওর উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মো. ফারুক হোসাইন বলেন, ‘পাখি প্রকৃতির অলংকার। এ অলংকার ধ্বংস করা মানে পরিবেশ ধ্বংস করা। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণ ক্ষেত্র মুক্তভাবে রক্ষা করতে হবে। অতিথি পাখিরা যেন 'মুক্ত আকাশে, খালে, বিলে, হাওড় বাঁওড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে তার ব্যবস্থা অবশ্যই আমাদের করতে হবে।’

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘নিলুয়া বিলটিতে যেনো পাখিদের অভয়াশ্রম গড়ে উঠে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’