• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

মানিকগঞ্জে পরকীয়ার জেরে স্বামীকে অপহরণ, সাভারে গ্রেপ্তার ৬

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২২  

মানিকগঞ্জে সাটুরিয়ায় অপহরণকারী দলের ৬ সদস্যকে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ চক্র মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের নাম পরিচয় দিয়ে গ্রামগঞ্জ থেকে উঠতি বয়সের কিশোর ও যুবকদের তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে স্ত্রী তানিয়ার পরকীয়ার জেরে স্বামীকে অপহরণ করায় বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে।

সাটুরিয়া উপজেলার আয়নাপুর গ্রামের মো. বহির উদ্দিনের অভিযোগ পেয়ে গত শনিবার রাতে সাটুরিয়া থানা পুলিশের একটি টিম সাভারের ব্যাংক কলোনি থেকে অবৈধ আমার মাদকাসক্তি নিরাময়ের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে।

থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলার আয়নাপুর গ্রামের মো. বহির উদ্দিনের ছেলে মো. রেজাউল করিমকে নেশাগ্রস্ত অপবাদ দিয়ে সাভার পৌর সভার ব্যাংক কলোনী এলাকার আমার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচয় দিয়ে গত ১৪ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাশার মেম্বারের বাড়ির সামনে থেকে একটি সাদা রংয়ের হাইএস গাড়িতে তুলে নেয় তারা।

আসামিরা হচ্ছে- পরিচালক সাভারের মো. আতিকুল ইসলাম মিঠু, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বোরাইজ গ্রামের নাসির আহম্মেদ, গাজীপুরের আবুল কাইয়ুম, সাভার পৌর সভার গেন্ডাে এলাকার শহিদুল হক দিপু, চাংখারপুলে সাজিদ হাসান বাবু ও সাভার পৌরসভার রাজাসনের আঃ হাকিম। অজ্ঞাতনাম আরো ২/৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী রেজাউল করিম জানান, আমার স্ত্রীর তানিয়া আক্তারের মোবাইল দিয়ে ফোন করে তিল্লি বাজারে যেতে বলে। আমি তাদের কথামতো গেলে বাশার মেম্বারের বাড়ির পাশ থেকে আমাকে কোন কিছু না বলে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর মারধর করলে আমি বলি রোজা রেখেছি। এ কথা বলার পর সিগারেট ধরিয়ে আমাকে খেতে বলে।

আমি রোজা রেখেছি বললেও ওরা আমাকে মারপিট করে মানিকগঞ্জের বিভিন্নস্থানে নিয়ে ঘোরে।

রেজাউল করিম আরো জানান, সাভারের ব্যাংক কোলোনিতে আমাকে নেয়ার পর গরম পানি দিয়ে ১ ঘন্টা গোসল করায়। এরপর মেডিসিনযুক্ত খাবার দেয়। সে খাবার খেয়ে বমি করি। এরপর আমাকে গাঁজা ইয়াবাসহ সব ধরনের নেশা করতে বলে। আমি নেশা করতে অপারগতা প্রকাশ করলে চলে অমানবিক নির্যাতন। এই মাদকাসক্তি কেন্দ্রে আরো ১০/১২ জন রয়েছে। তাদের বিভিন্ন ধরনের নেশা ও ওষুধ দিয়ে পাগল বানিয়ে পরিবারের নিকট ২ থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তারা। তাদের চাহিদামতো টাকা দিতে না পারলে রোগীকে পাগল বানিয়ে ছেড়ে দেয় বলে সে জানায়।

মামলার বাদী রেজাউলের বাবা মো. বহির উদ্দিন জানান, আমার ছেলে ধূমপান করে না। সে কোন ধরনের সিগারেট খায় না। আগামী ৭ই মে ছেলে রেজাউলের বিদেশ যাওয়া কথা। বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে ছেলের স্ত্রী তানিয়া সাভার থেকে একটি ভুয়া রিহ্যাব সেন্টার দেখিয়ে সন্ত্রাসী ভাড়া করে তানিয়া ও শাশুড়ি বাতাসী বেগম রেজাউলকে অপহরণ করায়। পরে তারা ছেলে রেজাউলকে না পেয়ে সাটুরিয়া থানায় বিষয়টি শুক্রবার অবগত করি। পরে শনিবার রাতে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঠিকানা শনাক্ত করে সাভার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সাটুরিয়া থানার ওসি আশরাফুল আলম জানান, ভুক্তভোগী রেজাউল কোন ধরনের নেশা এমনকি সিগারেটও খায় না। রেজাউলের স্ত্রী তানিয়া ও তার মা বাতাসী বেগম এদের দিয়ে অপহরণ করায় বলে অভিযোগ করেন তার পরিবার।

তবে অপহরণকারী সদস্যরা রেজাউলকে মারধর করেছে। গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়েছে। সিগারেটের আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়েছে। তিনি আরো জানান, রেজাউলের স্ত্রী ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা ভুয়া আমার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র অফিস করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানের সরকারি কোন অনুমোদন নেই।

আমার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক মো. আতিকুর ইসলাম মিঠু জানান, গত শুক্রবার রেজাউলের স্ত্রী তানিয়া তার স্বামীকে মাদকাসক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করবে মর্মে ফরমে স্বাক্ষর করে ভর্তি করেন। এরপর আমরা ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করে রেজাউলকে কেন্দ্রে নিয়ে আসি। তবে তাদের প্রতিষ্ঠানের সরকারি কোন অনুমোদন নেই বলে জানায়।