• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সিংগাইরে খাস জমি থেকে উচ্ছেদ অভিযান

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২২  

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চর কালিগঙ্গা মৌজায় ১০ একর ৮২ শতাংশ খাস জমি উদ্ধার করেছেন উপজেলা প্রশাসন। আজ রবিবার (১৭ এপ্রিল) উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাম্মা লাবিবা অর্ণব দিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালনা করেন। তাকে সহায়তা করে থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। 

উদ্ধার অভিযানকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বী ফণিবাবুর অর্পিত সম্পত্তির কিছু অংশ লীজ নিয়ে কয়েকটি পরিবার দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছিলেন। আর এস রেকর্ডে সরকার ওই জমি খাস খতিয়ানভুক্ত করেন। গত ৪-৫ বছর আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমান, খোরশেদ খালাশী, লাল মিয়াসহ প্রভাবশালী একটি চক্র ওই জমি বালু দিয়ে ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি করেন। এতে স্থানীয় ভূমি অফিস একাধিকবার বাঁধা দিলেও কর্ণপাত করেনি তারা। নামে মাত্র স্ট্যাম্পে লিখে দিয়ে দখল বুঝিয়ে দেয় ওই চক্রটি। সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়ে নিরীহ লোকজন দখল বুঝে পেয়ে গড়ে তুলে বসতবাড়ি।

এদিকে, গত ৩ দিন আগে উপজেলা প্রশাসন খাস জমি থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ প্রদান করেন। স্থাপনাগুলো সরিয়ে না নেয়ায় রবিবার অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি দু’টি ভেকু লাগিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এ উচ্ছেদে অনেক পরিবারই হয়ে পড়েছে সর্বশান্ত। তাদের অভিযোগ, জীবনে উপার্জনের সমস্ত টাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে তুলে দিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই পেয়েছিলাম। আজ এ উচ্ছেদের ফলে পথের ফকির হয়ে গেলাম বলেও তারা জানান।
 নিঃস্ব হওয়া হানিফ জানান, জমির মালিক ফণিবাবু দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হওয়ার পর থেকে প্রায় ৬০ বছর ধরে এ জমিতে বসবাস করে আসছি। ছেলেদের প্রবাসের কষ্টার্জিত ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছিলাম। উচ্ছেদ অভিযানে আমার সব শেষ হয়ে গেলো।

মাকসুদা, ফেলা, কাসেম ও প্রতিবন্দ্বী হেলাল অভিযোগ করে বলেন, লাল মিয়া আমাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে দখল বুঝিয়ে দিয়েছিলো। সেই জমিতে বাড়ি করে আজ আমরা নিঃস্ব। উচ্ছেদ হওয়া আলতাফ হোসেন, আমেনা, রানী ও ফেলা আহাজারি করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা স্থান পায় আর আমরা মাত্র ৩ দিনের নোটিশে পবিত্র রমজান মাসে উচ্ছেদ হলাম। তারা সরকারের কাছে মাথা গোজার ঠাঁই দাবী করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারদলীয় স্থানীয় এক নেতা বলেন, ওই জমিতে বালু ভরাট করে দখল বুঝিয়ে দিয়ে টাকা নিয়েছি। তবে কোন স্ট্যাম্প দেয়া হয়নি। যদি অন্য কেউ স্ট্যাস্পের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন তবে সেটা তাদের ব্যাপার। 

অভিযুক্ত আজিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কিছু বলতে চাই না। সাক্ষাতে কথা হবে।

চান্দহর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, ভিপি হিসেবে কেউ কেউ লীজ নিলেও আরএস রেকর্ডে খাস খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় এগুলো সরকারি সম্পত্তি। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে খাস জমি সরকারের দখলে নেয়া হলো।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। দখলদারেরা নিজেরাও জানেন এগুলো সরকারি সম্পত্তি। তার পরেও যদি কাউকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়ে থাকেন। তাহলে তারা প্রতারণার অভিযোগে মামলা করতে পারেন।