• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মানিকগঞ্জের ঘিওরে দুই লেবু গ্রামে ভেসে বেড়ায় সুবাস

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২২  

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পাশাপাশি দুটি গ্রাম বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটা। গ্রাম নয় যেন বিস্তীর্ণ লেবুবাগান। এই দুই গ্রামে প্রায় ৪০০ পরিবারের বসবাস। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে কমবেশি লেবুগাছ।

বাইরের যে কেউ এ দুই গ্রামে ঢুকলে অবাক হন। কারণ, এখানকার বাতাসে ভেসে বেড়ায় লেবুর সুগন্ধি ঘ্রাণ। বাড়ির উঠান, আঙিনা; যেখানেই ফাঁকা জায়গা, সেখানেই লেবুগাছ লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া আছে প্রায় অর্ধশত ছোট-বড় লেবুবাগান। লেবু চাষের সাফল্যে বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের গ্রাম দুটির পরিচিত এখন লেবুর গ্রাম নামে।

চলছে রমজান মাস, ইফতার এবং পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমে চাহিদা বেড়েছে লেবুর। জাতভেদে প্রতি হালি লেবু খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৬০ টাকা দরে। লেবুর পাইকারি দরও বেশ ভালো, আকার এবং জাতভেদে ২০-৪০ টাকা হালি। তাই শুধু গ্রামের পরিবেশ নয়, লেবু চাষ পাল্টে দিয়েছে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। করোনার সময়ে লেবু বিদেশে রপ্তানি বন্ধ ছিল। তাই চাষিরা আশানুরূপ মুনাফা করতে পারেননি। কিন্তু এ বছর ক্ষতি পুষিয়ে যাবে বলে জানান স্থানীয় লেবুচাষিরা।

স্থানীয় লেবুচাষিরা জানান, পাইকারেরা বাগান থেকেই লেবু সংগ্রহ করে নিয়ে যান। তাই কৃষকদের বাড়তি কষ্ট করতে হয় না। বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটা গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষ লেবু চাষের ওপর নির্ভরশীল। এখানকার চাষিরা কলম্বো, এলাচি ও কাগজি জাতের লেবু চাষ করেন। এলাচি জাতের লেবু স্বাদে ভালো হলেও ফলন কম হয়। ফলে চাষিরা কলম্বো জাতের লেবু বেশি চাষ করছেন বেশি। এখানকার চাষিদের উৎপাদিত লেবু ঢাকার পাইকারদের মাধ্যমে দেশ ছাড়িয়ে স্থান করে নিয়েছে বিশ্ববাজারে।

ঘিওর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ শামীম বলেন, ‘আমার গ্রাম বালিয়াখোড়া। আমাদের দুটি লেবুবাগান রয়েছে। এ গ্রামের লেবুর কদর বেশি। এখানকার লেবু বিক্রি হয় রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার ও গাজীপুরের টঙ্গী বাজারে। এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকারও লেবু চাষের আয় দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।’

অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র জানান, তাঁর বাবা রুহিণীকান্ত হোড় পাশের গ্রামের আলী হোসেন ঘড়ি মিয়ার কাছ থেকে ১০টি লেবুগাছের চারা নিয়ে গ্রামে প্রথম লেবু চাষ শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর বাবার মৃত্যুর পর থেকে তিনি এই লেবুবাগান পরিচর্যা করছেন। বর্তমানে তাঁর ৪টি লেবুর বাগান আছে। ১৫০ শতাংশ জমির এ বাগানগুলোতে তিনি এলাচি, কাগজি ও কলম্বো— এই তিন জাতের লেবুর চাষ করেছেন। এর মধ্যে ১০০ শতাংশ জমিতে কলম্বো, ৪০ শতাংশ জমিতে এলাচি ও ১০ শতাংশে কাগজি লেবুর চাষ করছেন তিনি।

বালিয়াখোড়া এলাকার চাষি বিলু মিয়া বলেন, ‘২৪০ শতাংশ জমিতে লেবুর চাষ করেছি। ফলনও বেশ ভালো। আর রমজান মাস চলায় চাহিদা ও দাম ভালো পাচ্ছি। আকারভেদে ১০০ লেবু ৭০০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

লেবুর পাইকারি ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, ‘আমি ৭-৮ বছর ধরে বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটা গ্রাম থেকে লেবু কিনি। মাটি ও পরিবেশ ভালো হওয়ায় এখানকার লেবুতে প্রচুর রস হয়। সাধারণত আমি কারওয়ান বাজারে লেবু পাইকারি বিক্রি করি। আমি বাগান ঘুরে দেখে কিন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সংগ্রহ করি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুজিত কুমার সরকার বলেন, ‘লেবুর রস জীবাণুনাশক, সংক্রমণ দমনকারী, হজমে সাহায্য করে এবং চর্বিকে দূরে রাখে। লেবু শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। মূত্র উৎপাদনের মাধ্যমে সহজে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের হতে সাহায্য করে লেবু।’

বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, ‘গ্রাম দুটির বাড়িতেই লেবু গাছ আছে। আমার নিজেরও ২০০ শতাংশের দুটি লেবু বাগান রয়েছে। বালিয়াখোড়া গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ লেবু চাষের আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, ‘বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটা গ্রামের চাষিরা লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দিয়ে থাকেন।’