• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল সিলগালা, ৯ জনকে কারাদণ্ড

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২২  

প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় মানিকগঞ্জের সিংগাইরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ত ৯ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। মালিক পলাতক রয়েছে।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপন দেবনাথের উপস্থিতিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাম্মা লাবিয়া অর্ণব বেসরকারি হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।


এক মাসের দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন হাসপাতালটির সিকিউরিটি গার্ড হামিদুর রহমান ও আব্দুল করিম। ১৫ দিনের দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপনের স্ত্রী মান্না তানিয়া, হাসপাতালের মার্কেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত পারভীন আক্তার, ফাতেমা আক্তার, সুমি আক্তার, শিল্পী আক্তার, আবদুল বাতেন ও মনির হোসেন।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জানা গেছে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোববার অস্ত্রোপচারে উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের টাকিমারা গ্রামের মুখলেছ মিয়ার স্ত্রী সাবিনা নামে এক প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. ফারহানা নবিকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন হয়।

তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ডা. ফারহানা নবি বলেন, ইতোমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক তদন্তকালে সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপনের নিকট তার প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। তিনি তা দেখাতে পারেননি। সরকারি কাগজে কলমে সিংগাইরে সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে কোনো কোনো হাসপাতাল নাই। যিনি প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি কোনো ডিগ্রিধারী চিকিৎসক নন। এমনকি যে ডাক্তার অজ্ঞান করেছেন তারও কোনো ডিগ্রি নাই।

উল্লেখ্য, প্রসূতি সাবিনা আক্তারের প্রসব বেদনা উঠলে গত শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। রাত ৩টার দিকে তার অস্ত্রোপচার করেন গাইনি ডা. ইমা বিনতে ইউনুছ। তিনি একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেন।

সাবিনার পরিবারের অভিযোগ, ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারেই তার মৃত্যু হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে মৃত অবস্থায় সাবিনাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

এদিকে ঘটনার পর বিষয়টি আপোষ-মীমাংসার জন্য জোর তৎপরতা শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে প্রসূতির স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে দফায় দেনদরবার হয়। এক পর্যায়ে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। কিন্তু প্রসূতির মা-বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মধ্যে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলা বাধে। এই কারণে সমঝোতার বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে বলে জানান  ভুক্তভোগী পরিবারের এক স্বজন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শাম্মা লাবিয়া অর্ণব বলেন, সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে এর কোনো সরকারি নিবন্ধন পাওয়া যায়নি। একজন ডাক্তার ও ৫ জন নার্স রয়েছে ওই হাসপাতালটিতে। অভিযান চলাকালে মালিক নজরুল ইসলাম পালিয়ে যান। হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের কারাগারের পাঠানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অনুমোদন না থাকায় তা সিলিগালা করে দেওয়া হয়েছে।