• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বালু তোলায় হুমকিতে বেড়িবাঁধ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২২  

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলাসংলগ্ন পদ্মা নদীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। ফলে হুমকিতে পড়েছে ভাঙন রোধে নির্মিত বেড়িবাঁধ। পাঁচ-ছয়টি ড্রেজার দিয়ে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালু তোলা হলেও প্রশাসন নীরব। অথচ বালু তোলা নিয়ে বিরোধে সেখানে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মামলাও হয়েছে।


নিয়মিত ভাঙনের ফলে হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের কাছে চলে এসেছে পদ্মা নদী। হরিরামপুর থানা, টিঅ্যান্ডটি অফিস, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ডাকবাংলো, গ্রন্থাগার, বাজার, স্কুল-মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এখন হুমকির মুখে রয়েছে। পদ্মার ভাঙন রোধে ফ্লাড অ্যান্ড রিভার রিচ ইরোশন ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় বছর দশেক আগে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আলাদিয়া থেকে বয়রা ইউনিয়ন হয়ে হারুকান্দি ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার বাঁধটি নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঁধের মাত্র ৩০০ গজের মধ্যে পাঁচটি বড় বড় ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে।

বাল্কহেডে (বালু বহনকারী ট্রলার) করে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে বালু। পরে সেখান থেকে বিক্রি করা হচ্ছে।

ড্রেজারের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন এ পয়েন্ট থেকে ১০০ থেকে ১২৫টি বাল্কহেডে বালু লোড করা হয়। আয়তনভেদে প্রতিটি বাল্কহেড বহন করতে পারে ৯-১০ হাজার ঘনফুট বালু, যা বিক্রি হয় ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়। এ হিসাবে এখান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকার বালু তোলা হচ্ছে।

ড্রেজার ও বাল্কহেডের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরিরামপুর উপজেলা লুত্ফর রহমান ও পাশের ঢাকার দোহার উপজেলার নয়াবড়ী ইউনিয়ন শহিদ মিয়া—এই দুজন মিলে পাঁচটি ড্রেজার বসিয়েছেন।

তাঁরা আরো জানান, উপযুক্ত স্থানে ড্রেজার স্থাপনকে কেন্দ্র করে লুত্ফর রহমান ও শহিদ মিয়ার মধ্যে বিরোধের জেরে শাহজাহান নামের একজন ড্রেজার শ্রমিককে গুলি করে আহত করা হয়।

এ বিষয়ে মামলাও হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে ফরিদপুর নৌ পুলিশ।

বাঁধসংলগ্ন বাড়িঘরের মালিকরা জানান, অবৈধ ড্রেজিং করায় নদীর স্রোত দিক পরিবর্তন করে বাঁধের দিকে বইছে। ফলে বাঁধ ধসে যাওয়া আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাঁরা দ্রুত অবৈধ ড্রেজিং বন্ধের দাবি জানান।

ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন লুত্ফর রহমান। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন, টাকা লাগে, এ কারণে এই ব্যবসা করছেন।

আর ড্রেজার শ্রমিককে গুলি করার বিষয়ে তিনি দোষ চাপান অপর ব্যবসায়ী শহিদ মিয়ার ওপর। ব্যবাসায়ীক দ্বন্দ্বের জেরে শহিদের লোকজন তাঁর ড্রেজার চালককে গুলি করেছে বলে জানান তিনি।

একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন শহিদ মিয়াও। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা করায় নাম হয় শুধু আমার, কিন্তু এই বালু ব্যবসার লাভ পায় সবাই। ’ ড্রেজার শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। ’

জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দীন বলেন, ওই এলাকায় পদ্মা নদীতে তাঁদের কোনো ড্রেজিং  হচ্ছে না। যেকোনো অপরিকল্পিত ড্রেজিং নদীভাঙন সৃষ্টি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে হরিরামপুরের পদ্মা নদীতে কোনো বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ধরনের ঘটনা থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’