• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

হারুনের অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া হরিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২২  

জেলার হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে কর্মরত অবস্থায় সাবেক প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক হারুন অর রশিদ প্রতিটি খাত থেকে ভূয়া বিল-ভাউচার এবং অফিস প্রধানের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অর্থ লোপাট করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

সাবেক প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক হারুনের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম দুর্নীতির এমন বিস্তর অভিযোগ। তবে, হারুনের করা দাপ্তরিক দুর্নীতির অভিযোগে কোনো প্রকার শাস্তির আয়োতায় না এনে বিভাগীয় শাস্তি স্বরূপ শুধুমাত্র বদলি আদেশ দেয়া হয়।

কিন্তু হারুন হরিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলি হওয়ার পর থেকেই হারুনের সময় খোয়া যাওয়া নথি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হতে থাকে। যেই নথিগুলোতে অফিস প্রধান ইউএইচএন্ডএফপিও’র স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া বিল-ভাউচার তৈরি করা হয়েছে। এর আগেও হারুন একাধিকবার দরপত্রের কাজ মনোপুষ্ট ঠিকাদারকে পাইয়ে দেয়ার জন্য দরপত্র উন্মুক্ত কমিটি ও মূল্যায়ন কমিটির অগোচরে প্রয়োজনীয় নথিতে অভাররাইটিং করে। বিষয়টি মূল্যায়ন কমিটির নজরে আসলে হারুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং হারুন দোষ স্বীকার করে।

পরবর্তীতে এমন কাজ করবে না মর্মে ইউএইচএন্ডএফপিও বরাবর মুচলেকা প্রদান করেন। দপ্তরের নথি জালিয়াতির অভিযোগে গেল বছর হারিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলি করা হয় হারুন অর রশিদ নামের তৃতীয় শ্রেণির ওই কর্মচারীকে।

চুরি যাওয়া নথিই বিভিন্নসময়ে প্রকাশ পাচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে, যাতে করে দপ্তরের গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে। এনিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার (ইউএইচএন্ডএফপিও) থানায় করা অভিযোগ এবং সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউটসোর্সিং পদে কর্মরত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মচারীর নামে ভ্রমণ বিল, প্রমোদ বিল, টিএডিএ, যাতায়াত ভাড়াসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে আউটসোসিং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভূয়া বিল-ভাউচারে অর্থ লোপাট করেছে। যা কিনা সেই কর্মচারীরা জানেন না।

পরবর্তীতে জানতে পেরে অভিযোগ জানান ভূক্তভোগীর অনেকেই। এই অভিযোগে কেবল বিভাগীয় কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয় কোনো প্রকার শাস্তি বা অর্থ ফেরত ছাড়াই। প্রতিষ্ঠানের ক্রয় সংক্রান্ত বিলে অফিস প্রধানের স্বাক্ষর বসিয়ে ইচ্ছেমত টাকার অংক দিয়ে অর্থ আত্নসাত করা হয়েছে। তার এই দুর্নীতিগুলো ইউএইচএন্ডএফপিও’র নজরে আসলে তিনি হারুনের কাছে দাপ্তরিক নথি চাইতে গেলে নথি বের করতে গরিমশি করে এবং দীর্ঘ সময় চেয়ে নেয়। নির্দিষ্ট সময়েও নথি উপস্থাপন করতে না পারলে বাধ্য হয়েই লিখিত অভিযোগ করা হয় থানাতে। পরবর্তী সময়ে পুলিশের সহযোগীতায় হারুনের জিম্মায় থাকা নথির আংশিক নথি উদ্ধার হয়। অফিস প্রধানের স্বাক্ষর জালিয়াতি করা সংরক্ষিত নথিগুলোই পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে প্রচার হতে থাকে। যাতে করে প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

হারুন অর রশিদের নামে অভিযোগ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালক রবিউল ইসলাম ফারুক বলেন, গাড়ীতে জ্বালানি বাবদ কোন অর্থ দিত না প্রধান সহকারী, যাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া ভাড়া দিয়েই জ্বালানি ভরতে হতো। হারুন এ্যাম্বুলেন্সের লগ বই আটকে রাখে এবং তার কাছে একাধিকবার চাওয়াতেও পাওয়া যায় না। আমি গাড়ী চালাই অডিট এসে তো আমাকেই গাড়ীর জ্বালানি এবং মেরামতের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে আমার লগ বই আমার কাছে দেন এমন প্রশ্ন করলে আমাকে ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে তিনি। হারুন থাকাকালীন সময়ে আমি এ্যাম্বুলেন্সের লগ বই কখনো হাতে পাইনি।

হরিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর অফিস সহায়ক(আউট সোর্সিং) মো. শিমুল মিয়া বলেন, ২০১৯ সালে আউটসোর্সিংয়ে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করি। আমাদের আউট সোর্সিংয়ে ভ্রমণ কিংবা টিএডিএ বিল নেই। ২০২০ সালে আমি জানতে পারি আমার নামে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভ্রমণ এবং টিএডিএ বিল তোলা হয়েছেন। সাবেক প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক হারুন অর রশিদ এ কাজ করেছে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহানের কাছে সুরাহার জন্য আবেদন করা হয়।

আউসসোর্সিং অফিস সহায়ক পদে মো. রায়হান মিয়া নামের এক কর্মচারী বলেন, আমার নামে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ভ্রমণ বিল এবং টিএডিএ বিল বাবাদ ৪২ হাজার ৮৮০ টাকা উত্তোলন করে সাবেক হিসাব রক্ষক হারুন অর রশিদ জালিয়াতি করে। যা আমি পরবর্তীতে জানতে পারি এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানকে তা অবহিত করি।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে হারুন অর রশিদ বলেন, এসব বিষয় মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি কোন অনিয়ম দুর্নীতি করি নাই। বিভাগীয় শাস্তির বিষয়ে জিঞ্জাসা করলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএন্ডএফপিও) হারুনের করা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে স্বাস্থ্যের সংশ্লিষ্ট বিভাগে বিচারের আবেদন জানালে হারুন তার সংরক্ষণে থাকা জাল-জালিয়াতি নথিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করতে থাকে এবং অফিস প্রধানকেই মূল দোষী প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইসরাত জাহান বলেন, সাবেক প্রধান সহাকারী কাম হিসাব রক্ষক হারুনকে দুর্নীতির দায়ে বিভাগীয় শাস্তিস্বরুপ বছরখানেক আগে তাকে বদলী করা হয়। আমি কর্মস্থলে যোগ দেয়ার পরে তার অর্থ লোপাট এবং দুর্নীতির বিষয়গুলো আমার নজরে আসে। প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে স্বাক্ষর জালিয়াতি থেকে শুরু করে অর্থ লোপাটের এমন কোন অপরাধ নেই যা হারুন করেনি।

পরবর্তীতে আমি এই বিষয়গুলো স্বাস্থ্যের ডিজি বরাবর জানালে হারুনকে বদলি করা হয়। সে চলে যাওয়ার আগে দপ্তরের বিভিন্ন নথি খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটে। থানায় অভিযোগের মাধ্যমে পুলিশি সহযোগীতায় জব্দকৃত কিছু নথি উদ্ধার করা হয়। বাকি নথি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত নথিগুলোতে আমার স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ লোপাট এবং বিভিন্ন অসংগতির প্রমাণ পাই।

আমি বিভাগীয় অভিযোগ করার কারণে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি এতে ভীত ইতোস্ত নই, আমি চাই হারুনের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, হরিরামপুরের সাবেক প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়গুলো বিভাগীয় পর্যায়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের প্রতিবেদন আমরা এখনো হাতে পায়নি। যদি তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায় তবে নিশ্চয়ই আমাদের অফিসিয়াল প্রসিডিউর অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।