• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত সাটুরিয়ায় কোরবানির ৭ গরুর মৃত্যু

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২২  

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাড়ে ১২’শ গরুর খামারি কোরবানির পশু নিয়ে চরম দুচিন্তায় পড়েছেন। একদিকে বন্যা ধেয়ে আসছে, অন্যদিকে লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। হাজারো কোরবানির পশু এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭টি কোরবানির পশু মারা গেছে। এদিকে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত পশুগুলোর মাংস উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার দিঘলীয়া ইউনিয়নের আগ সাভার গ্রামের মো. তাহের হোসেন জানান, তার খামারে ছোট-বড় মিলে ৩৭টি কোরবানির পশু রয়েছে। ৩৭ পশুর মধ্যে ১৬টি লাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে দুটি পশুর অবস্থা খারাপ হলে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।

আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমার খামারে ২০টি কোরবানির পশুর হৃষ্টপৃষ্ট করেছি। ২০টি কোরবানির পশুর মধ্যে ৬টি লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত। এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন না থাকায় কোরবানির পশু নিয়ে দুচিন্তায় আছি।’

উপজেলার ধানকোড়া ও হরগজ ইউনিয়নে লাম্পি স্কিন ভাইরাসে প্রতিটি বাড়িতেই কোরবানির পশু আক্রান্ত হয়েছে। এই দুই ইউনিয়নেই মারা গেছে ৭টি কোরবানির পশু। এতে ওইসব পশুর মালিকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা।

ফুকুরহাটি গ্রামের গরুর খামারি ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আমার খামারে ৯টি পশু রয়েছে। চারদিকে লাম্পি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর পেয়ে আমি মানিকগঞ্জ থেকে একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন কিনে পশুকে পুশ করেছি। এতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৮ শত টাকা ও চিকিৎসককে দিতে হয় ১ হাজার টাকা।’

উপজেলার খামারিদের অভিযোগ, লাম্পি স্কিন বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ কোনো কাজে আসছে না। তবে একটি পশুর জন্য ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করার পরও ভালো হওয়ার লক্ষণ দেখছেন না খামারিরা। আর একজন মাত্র ডাক্তার দিয়ে সারা উপজেলায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদ। পানির দরে কোরবানির পশু বিক্রি করতে হবে। তবে অসুস্থ পশু ক্রেতারা নেবে কিনা এ নিয়েও দুচিন্তায় পড়েছেন তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাড়ে ১২’শ খামারি ২০ হাজার কোরবানির পশু প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। এসব পশু উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র বিক্রি করা হবে। এরমধ্যে লাম্পি স্কিন ভাইরাসে বেশির ভাগ কোরবানির পশুই আক্রান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে।

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, এ ভাইরাসে কোনো গবাদি পশু আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন কমে যাবে। গবাদি পশু দুর্বল হয়ে পড়বে, ওজন কমে যাবে ও চামড়ার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। তারা পরামর্শ দেন, মশামাছি মুক্ত রাখার জন্য খামার ও বসতবাড়ির আশপাশ পরিছন্ন রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, আক্রান্ত গবাদি পশুকে সুস্থ পশু থেকে দূরে রাখা, আক্রান্ত পশুকে মশারির ভেতর রাখা ও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মেহেদি হাসান জানান, এটি একটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ। লাম্পি ভ্যাকসিন একটি অসুস্থ পশুর শরীর থেকে মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এ কারণে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একটি খামারে একটি পশু এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পর্যায়ক্রমে ওই খামারের সব পশুই আক্রান্ত হবে।

তিনি বলেন, ‘উপজেলার প্রায় ২০ হাজার কোরবানির পশুর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার পশুই লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন নেই। আমরা গোট পক্স নামে ছাগলের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে কোনো কাজে আসছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে খামারিদের ব্যাপক ক্ষতি ও লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে তিনি জানান।