• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মানিকগঞ্জে লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই চলছে বেসরকারি হাসপাতাল

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২২  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অমান্য করে মানিকগঞ্জে চলছে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতালে মানুষ ঠকানো ব্যবসা। জেলার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যত্রতত্র ভবন ভাড়া নিয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অনুমোদন ছাড়াই চলছে বছরের পর বছর। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিক বসিয়ে সেবার নামে প্রতারণা করে ব্যবসা করছেন।

গত ২৬ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়রে এক বিজ্ঞপ্তিতে ৭২ ঘন্টার মধ্যে দেশের সকল অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে কিন্তু নবায়ন করেনি তাদের নবায়ন করতে একটি সময় বেঁধে দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে নিবন্ধন করতে না পারলে সব কার্যক্রম স্থগিত করা হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে এনেসথেসিয়া ও ওটিতে কোনো অনিবন্ধিত ডাক্তার বা কাউকে রাখা যাবে না। এমনটি করা হলে ওইসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেই কোন প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম  চালু করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে, মানিকগঞ্জ জেলায় দেড় শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকলেও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মাত্র ৭ টি ও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২২টির লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে । বাকী বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স এবং অদক্ষ নার্স, ওটি বয়, টেকনিশিয়ান দিয়ে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নেই ডিউটি ডাক্তার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে শেষ হলেও শুধুমাত্র নবায়নের জন্য পুরোনো আবেদন দেখিয়েই চলছে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো।

এসব প্রতিষ্ঠানে রোগী ও রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানে ভুল বা অপচিকিৎসার শিকার হয়ে প্রায়ই রোগী মৃত্যু বা রোগীদের মারাত্মক ক্ষতির খবর শোনা যায়। ভুক্তভোগীরা জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে সামান্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেলেও বন্ধ হয় না অপচিকিৎসা।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, একটি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স পেতে ট্রেড লাইসেন্স, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নামে চালান জমার কপি, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স, ফার্মেসি পরিচালনার জন্য লাইসেন্স, পরিবেশ লাইসেন্স, পরমাণুবকি শক্তি কমিশন লাইসেন্স, মেডিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লাইসেন্স, নারকোটিকস লাইসেন্স, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এনওসি ইত্যাদি। 

লাইসেন্স পেতে যেমন নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়, তেমনি প্রতি বছর লাইসেন্সগুলো নবায়নও করতে হয় ।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বৈধ লাইসেন্স না থাকলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের সামনে ও আশপাশেই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠেছে এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বেশিরভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অদক্ষ নার্স এবং ওটি বয় দিয়েই সিজার, এপেন্ডিকস, পিত্তথলির পাথর, জরায়ুসহ বিভিন জটিল রোগের অপারশেন অ্যাসিস্ট করানো হয়। 

অনেকসময় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নাম বলে অদক্ষ ইন্টার্ন চিকিৎসক দিয়েও বড় ধরনের অপারেশন করানো হয় বলে জানা গেছে। ফলে লাইসেন্সবিহীন এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।


 
অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বেতনভুক্ত দালালরা সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভুলভাল বুঝিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। এছাড়া, শহর ও গ্রামের ওষুধের দোকানদারসহ পল্লী চিকিৎসকরা মোটা অংকের কমিশনের বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠানে রোগী নিয়ে আসেন।

সহজ সরল রোগীরা দালালদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মোটা অঙ্কের বিনিময়েও সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।