• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

২০০১ সালের নির্বাচনের ফল আগেই ঠিক করা ছিল :প্রধানমন্ত্রী

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০১৮  

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা চাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। ভোট কারচুপি করে নির্বাচনে জেতার কোনো অভিপ্রায় তাঁর সরকারের নেই। তাঁর সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ খুশি হয়ে আমাদের ভোট দিলেই আমরা ক্ষমতায় থাকব, না হলে নয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের কাছে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের জন্য বিদেশিদের হাত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই নির্বাচনের ফল আগেই ঠিক ছিল, যার দালিলিক প্রমাণ তিনি পেয়েছেন। তিনি বলেন, সেই নির্বাচনে অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমরা বেশি ভোট পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কম আসন দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত একটি ডকুমেন্ট পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে কোন কোন আসন দেয়া হবে আর কোন কোন আসন দেয়া হবে না তা লাল, হলুদ, সবুজ ও নীল কালিতে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায়, সে বছর নির্বাচন কীভাবে মঞ্চায়িত হয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ছিলাম একটা ষড়যন্ত্রের শিকার। আপনারা জানেন, আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। সেই গ্যাস বিক্রি করবে আমেরিকা, কিনবে ভারত। আমি বললাম, আমার এতো গ্যাস নাই, আমি দিতে পারব না। স্বাভাবিকভাবে দুটো দেশই একটু বিগড়ে গেল। আর নির্বাচনটাও হলো সেভাবেই।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে ৩০৭ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্কালে তিনি এসব কথা বলেন। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪২ জন সাবেক মুখ্য সচিব, সিনিয়র সচিব, বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, রাষ্ট্রদূত, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব ছিলেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য ৩০৭ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দলটির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।

দেশের আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এলে তারা আবারও দেশকে ধ্বংস করবে। সুতরাং আমরা খুনি ও যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও আগুন সন্ত্রাসীদের দলকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০৭১ সালে আমাদের শতবার্ষিকী উদযাপনের পরিকল্পনা করেছি এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ গ্রহণ করেছি। ততদিন আমরা বেঁচে না থাকতে পারি কিন্তু আমরা ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য একটি উপযুক্ত পরিকল্পনা রেখে যেতে চাই।’ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরতে সাবেক কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিনবদলের সনদ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে অন্তত এটা দাবি করতে পারি, দিনবদলের সনদ কার্যকর হয়ে প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবন বদলে গেছে। এখন মানুষ কিন্তু অনেক উন্নত-সুন্দর জীবন পাচ্ছে। কিন্তু আরও উন্নতি আমাদের করতে হবে।’ তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নামিয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আরও অন্তত ৫ শতাংশ না নামাব ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ করতে হবে।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারি কর্মকর্তারা কীভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন, তা তুলে ধরেন সাবেক কর্মকর্তারা। আবারও আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জয়ী করতে মাঠে নামার অঙ্গীকার করেন তারা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা তার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করতে এসেছি।’ শেখ হাসিনার টানা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় বাংলাদেশে উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন তিনি। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অন্ধকার সময়ে ফিরে যেতে চাই না। আপনার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করছি। আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিণত হবে সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশে।’

গতকাল গণভবনে যাওয়া অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন—দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ আর খান, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক মাসুদ আহমেদ ও মোঃ আবুল কাশেম, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মেসবাহ উদ্দিন, মোঃ মেসবাহ-উল আলম ও ইউনুসুর রহমান এবং সাবেক প্রধান তথ্য অফিসার এ কে এম শামীম চৌধুরী।

সাবেক সচিবদের মধ্যে ছিলেন—আবু তাহের, হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, মাহবুব-উল আলম খান, শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, আবদুল মালেক মিয়া, দেওয়ান জাকির হোসেন, সুনিল কান্তি বোস, সৈয়দ আলী কবির, শেখ খুরশিদ আলম, আতাহারুল ইসলাম, সমর চন্দ্র পাল, নূরুল হক, আবদুল মান্নান হাওলাদার, এ টি কে এম ইসমাইল, শফিকুল আজম, কামরুন্নেছা খানম, মোঃ মিজানুর রহমান, খন্দকার আসাদুজ্জামান, মো. কাজী আখতার হোসেন, আরাস্তু খান, এম এ কাদের সরকার, ড. চৌধুরী মোঃ বাবুল হাসান, এ এইচ এম মাসুদ সিদ্দিকী, মোঃ আজিজুর রহমান, শফিক আলম মেহেদী, কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ, এ এল এম আবদুর রহমান, হুমায়ুন খালিদ, আনোয়ার ফারুক, শাহিন খান প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে সাবেক রাষ্ট্রদূত এ টি এম নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মোঃ আজিজুল হক, গোলাম মোহাম্মদ, মোঃ আবদুল হান্নান, আতিকুর রহমান, ইখতিয়ার চৌধুরী, ওয়াহিদুর রহমান ও আবদুস সাত্তার সংহতি প্রকাশ করেন। পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি আবদুল মান্নান, মোঃ শামসুদ্দোহা খন্দকার, অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া ও আবদুল মান্নান, সাবেক ডিআইজি মোস্তাক হোসেন, এ এইচ এম ফিরোজ কবির, গোলাম মোস্তফা, শাহ আলম শিকদার, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আবদুল জলিল মন্ডল ও শফিকুর রহমান সংহতি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রকৌশল, বন, ডাক, পুলিশ, ট্যাক্স, তথ্য, টেলিকম, কাস্টমস ও এক্সাইজ, অডিট ও একাউন্টস, রেলওয়ে, খাদ্য ও কৃষি ক্যাডারের ১৬৫ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও সংহতি প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক । সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।